অমর একুশে বইমেলা

পাঠক খরায় ভুগছে লিটলম্যাগ

নতুন লেখক সৃষ্টিতে এক সময় বেশ জনপ্রিয় ছিল লিটলম্যাগ। কাল পরিক্রমায় এখন পাঠক খরায় ভুগছে সাহিত্যের এই ছোট আয়োজন।

একুশে বইমেলায় প্রতিবারই থাকে লিটলম্যাগ কর্নার। মেলার ১৫তম দিন বুধবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) লিটলম্যাগ চত্বরে ঘুরে দেখা যায়, প্রায় ২০০ স্টলের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি খোলা হয়নি। যারা স্টল খুলেছেন তারা অধীর আগ্রহে বসে আছেন পাঠক-দর্শনার্থীর আশায়। আবার কেউ নিজেদের মধ্যে গল্প করছেন, কেউবা বই পড়ছেন। মেলার অন্যদিকে পাঠক-দর্শনার্থী সমাগম যথেষ্ট ভালো হলেও এদিকে দু-একজনের বেশি দেখা যায় না। 

লিটলম্যাগ সংশ্লিষ্টরা জানান, আগের সেই দিন আর লিটলম্যাগের নেই। গত পনের দিনে কেউ ১৫ কপি ম্যাগাজিন, কেউ ৫ কপি বিক্রি করেছেন। আবার কেউ কেউ আগে থেকেই সাবধানী হয়ে নতুন ম্যাগাজিন বের না করে পুরাতনগুলো নিয়েই স্টলে বসেছেন। লিটল ম্যাগাজিন খুননের বিক্রয়কর্মী আবদুর রহমান জানান, মেলার দ্বিতীয় দিন থেকেই তিনি নিয়মিত স্টলে বসছেন। এখন পর্যন্ত ১৫ কপি পুরাতন ও ৫ কপি নতুন ম্যাগাজিন বিক্রি করতে পেরেছেন।IMG_20230215_175743

পাঠক কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে লিটলম্যাগের বিক্রয়কর্মী ও সম্পাদকরা জানান, বর্তমানে তরুণ যারা লিখছেন তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের কবিতা নিয়মিত পোস্ট করেন। ফলে ম্যাগাজিনে ছাপানোর আগ্রহ অনেকের থাকে না। তাছাড়া মানুষ আর আগের মতো লিটলম্যাগ পড়ে না। এছাড়াও মেলার আয়োজক কমিটির সদিচ্ছার অভাব রয়েছে বলে দাবি করেন প্রকাশকরা। জলধির বিক্রয়কর্মী জাহিদুর রহমান বলেন, লিটলম্যাগের লেখকরাও এদিকে এখন কম আসেন। এছাড়াও লেখকরা এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বেশ সক্রিয়। লিটলম্যাগ নিয়ে লেখকদের আগ্রহেও ভাটা পড়েছে।

পাঠক বাড়াতে মেলার এককোণে ঠেলে না দিয়ে পাঠক সমাগম হয় এমন জায়গায় লিটলম্যাগের স্টল বরাদ্দ দেওয়ার দাবি জানান তারা। জয় বাংলা সাহিত্য সংস্কৃতির প্রধান সম্পাদক ফারুক প্রধান বলেন, লিটলম্যাগের এক সময় খুব ভালো পাঠক ছিল। বইমেলায় বহেড়া তলায় যখন স্টল ছিল, তখনও লিটলম্যাগ চত্বরে পাঠক-লেখকের ভরপুর আড্ডা হতো। এখন এমন জায়গায় স্টল দেওয়া হয়েছে যেখানে কোনও মানুষ আসে না। লোকসমাগম হয় এমন জায়গায় স্টল বরাদ্দ দেওয়া হলে পাঠক-দর্শনার্থী বাড়তো।IMG_20230215_175715(1)

বাংলাদেশ লেখক পরিষদের মুখপত্র পঙক্তি’র সম্পাদক সৈয়দ মাজহার পারভেজ বলেন, সদ্য সমাপ্ত কলকাতা আন্তর্জাতিক পুস্তক মেলায় লিটলম্যাগ কিন্তু সফল। তাহলে আমরা কেন পারছি না? আমাদের ভাবতে হবে কীভাবে এটি আরও সুন্দর করা যায়। বিশ্বের অন্যান্য দেশে কীভাবে লিটলম্যাগ হচ্ছে এগুলো দেখতে হবে। স্টলের ভাড়া ৫০০ টাকা—এটি মনে হয় খুবই কম। যার ফলে অনেকে মনে করেন—স্টল না খুললেই বা কী হবে! সবগুলো স্টল খোলার জন্য এই ভাড়া আরও বাড়ানো উচিত।

নতুন বই

বইমেলার ১৫তম দিন নতুন বই এসেছে ৮৪টি। এরমধ্যে গল্প ১২, উপন্যাস ১২, প্রবন্ধ ৬, কবিতা ২১, গবেষণা ১, ছড়া ২, শিশুসাহিত্য ২, জীবনী ৩, রচনাবলি ৪, মুক্তিযুদ্ধ ৩, নাটক ২, বিজ্ঞান ১, ভ্রমণ ১, ইতিহাস ২, রাজনীতি ১, চিকিৎসা ২, রম্য ১, ধর্মীয় ২, ফিকশন ১ ও অন্যান্য ৫টি।

আলোচনা অনুষ্ঠান

বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশের লিটল ম্যাগাজিন শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। বিষয়ের ওপর প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শহীদ ইকবাল। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন হাফিজ রশিদ খান, অনিকেত শামীম এবং সরকার আশরাফ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সাজ্জাদ আরেফিন।

প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে শহীদ ইকবাল বলেন, লিটল ম্যাগাজিন একটা চিরনতুন প্লাটফর্ম। সময়ের সেবা না করে সময়কে সৃষ্টি করার চেষ্টা— এ সবই লিটল ম্যাগাজিনের মূল বৈশিষ্ট্য। লিটল ম্যাগাজিনের দিগ্বলয় চলিষ্ণু ও ক্রমবর্ধমান। এর ধারণা- বৈশিষ্ট্য কিংবা পন্থা ও পরিণাম অনতিক্রান্ত নয়, ক্রমবিকশিত ও পরিবর্তিত। আর তা নিশ্চয়ই এদেশের মৃত্তিকা ও সংস্কৃতিকে অনুরুদ্ধ করেই পরিচালিত ও বিকিরিত। পরিচর্যায় পথটিও সে লক্ষ্যেই নির্ধারিত।

আলোচকবৃন্দ বলেন, প্রচলিত ও গতানুগতিক সাহিত্যচর্চার বাইরে নতুন চিন্তাচেতনাকে ধারণ করে যে পত্রিকা, সেটাই লিটল ম্যাগাজিন। নতুন ও তরুণ লেখকরাই লিটল ম্যাগাজিনের ধারক। প্রাতিষ্ঠানিকতার বাইরে থেকে প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতার একটি মাধ্যম লিটল ম্যাগাজিন। আধুনিক ও প্রগতিশীল চিন্তাচেতনার স্ফুরণ ঘটে এই পত্রিকায়। প্রচলিত ধারণাকে অস্বীকার করে নতুন কিছু বিনির্মাণ করতে চায় বলে লিটল ম্যাগাজিন সবসময়ই স্পর্ধিত এক চর্চার নাম।

সভাপতির বক্তব্যে সাজ্জাদ আরেফিন বলেন, সাহিত্য আন্দোলনকে বেগবান করতে প্রথাবিরোধী তারুণ্যের প্রতীক হিসেবে লিটল ম্যাগাজিনের গৌরবকে সমুজ্জ্বল রাখতে হবে। লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের গতিময়তা ফিরিয়ে আনার জন্য তরুণদের উদ্যোগী ভূমিকা রাখতে হবে।

লেখক বলছি

এদিন লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন দিলারা হাফিজ, হাকিম আরিফ, আঁখি সিদ্দিকা এবং জয় শাহরিয়ার।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন মোহাম্মদ সাদিক, কামরুল হাসান, সাজজাদ আরেফিন, টিমুনী খান রীনো, কৌমুদী নার্গিস। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী আফতাব আহমেদ মাহাবুব, পলি পারভীন, কাজী মদীনা।

এছাড়া ছিল সুলতানা আক্তারের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন স্কেচ একাডেমি অব ফাইন আর্টস এবং দীপ্তি রাজবংশীর পরিচালনায় বাংলাদেশ লোকসংগীত পরিষদের পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন লীনা তাপসী খান, ফাতেমা-তুজ-জোহরা, খায়রুল আনাম শাকিল, সুমন মজুমদার, মাহবুবা রহমান, সম্পা দাস, ডা. তাপস বোস, শহীদ কবীর পলাশ, আফরিদা জাহিন জয়ীতা।

১৬তম দিনের সময়সূচি

১৬ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে বাংলাভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিকেন্দ্রীকরণ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন ফরিদ আহমেদ দুলাল। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন মাহমুদ কামাল, হেনরী স্বপন, নজিবুল ইসলাম এবং সাজ্জাদ আহসান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন অনীক মাহমুদ।