মেলায় মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু নিয়ে শতাধিক বই, কিনছেন বেশি গবেষকরা

অমর একুশে গ্রন্থমেলার আজ ১৮তম দিন। এই কয়েক দিনে মেলায় নতুন বই এসেছে ২ হাজার ১০৬টি। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এসেছে ১০৬টি বই। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ৩০টি ও মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে ৭১টি। শনিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত মেলার আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

মেলায় প্রকাশনা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুকে লেখা বইগুলোর বেশিরভাগই ক্রেতা হচ্ছেন গবেষক, শিক্ষাবিদরা। এ ছাড়া তরুণ প্রজন্মেরর মাঝে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে জানার আগ্রহ বাড়ছে বলে জানান তারা। ফলে তারাও কিনছে এ-সংক্রান্ত বই। এই হার ক্রমেই বাড়ছে বলে তারা জানান। তবে তরুণরা তুলনামূলক ছোট ও সাশ্রয়ী দামের মধ্যে বই চান।

অন্য বইয়ের সঙ্গে তুলনামূলকভাবে মুক্তিযু্দ্ধ ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা বইয়ের বিক্রিও সন্তোষজনক বলে তারা জানান।

কথাপ্রকাশের স্টল ইনচার্জ ইউনুস আলী বলেন, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কিন্তু লেখকের ওপর নির্ভর করে। লেখককে অনেক কিছু জানতে হয়। যে কেউ চাইলে এ বিষয়ে লিখতে পারে না। আমরা প্রতিবারই এ-সংক্রান্ত চার-পাঁচটি বই প্রকাশ করি। এবারও করেছি। এ-সংক্রান্ত বইয়ের বিক্রিও ভালো হচ্ছে। এসব বইয়ের ক্রেতা প্রবীণরা, পাশাপাশি তাদের অধিকাংশই গবেষক, শিক্ষাবিদ। এ ছাড়া বর্তমানে তরুণদের মাঝেও এই বই কেনার প্রবণতা বাড়ছে।

আগামী প্রকাশনীর স্টল ইনচার্জ মামুন বলেন, পাঠক জানেন আগামী প্রকাশনী মানে মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু সংক্রান্ত বই সবচেয়ে বেশি বই পাওয়া যাবে। তাই তারা এখানে এসে বই কেনেন। বই বিক্রিও ভালো হচ্ছে। এ ছাড়া বর্তমানে তরুণ প্রজন্মের মাঝেও মুক্তিযু্দ্ধ ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে জানার আগ্রহ বাড়ছে। তবে তারা তুলনামূলক ছোট ও কিছুটা কম দামে বই চান।

নতুন বই 
১৮ ফেব্রুয়ারি নতুন বই এসেছে ১৭০টি। এর মধ্যে গল্পের বই ৩২, উপন্যাস ১৮, প্রবন্ধ ৪, কবিতা ৬৪, গবেষণা ৪, ছড়া ৩, জীবনী ৫, রচনাবলি ১, মুক্তিযুদ্ধ ২, নাটক ৩, বিজ্ঞান ২, ভ্রমণ ৩, ইতিহাস ১, রাজনীতি ১, চিকিৎসা ১, বঙ্গবন্ধু ৪, ধর্মীয় ৭, অনুবাদ ৪, সায়েন্স ফিকশন ১ ও অন্যান্য ১০টি।

এদিন মেলায় বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত ছিল শিশুপ্রহর। সকাল ১০টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় শিশু-কিশোর সংগীত প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। ‘ক’ শাখায় প্রথম হয়েছেন নীলান্তী নীলাম্বরী তিতির, দ্বিতীয় হয়েছেন অন্বেষা মজুমদার এবং তৃতীয় হয়েছেন সার্থক সাহা। ‘খ’ শাখায় প্রথম হয়েছেন রোদোসী নূর সিদ্দিকী, দ্বিতীয় হয়েছেন তানজিম বিন তাজ প্রত্যয় এবং তৃতীয় হয়েছেন মৈত্রেয়ৗ ঘোষ। বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন শিল্পী মাহমুদ সেলিম, সুজিত মোস্তফা ও চন্দনা মজুমদার।

আলোচনা অনুষ্ঠান
বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গোলাম মুস্তাফা। আলোচনায় অংশ নেন মোহিত কামাল ও রাজীব কুমার সরকার। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সুব্রত বড়ুয়া।

প্রবন্ধ উপস্থাপনাকালে গোলাম মোস্তফা বলেন, জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের শিক্ষকতা ও গবেষণার প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করলে দেখা যায়, আমাদের সমাজ রাজনীতির বিকাশ ও ঘটনাপ্রবাহের দিকে তিনি বরাবরই মনোযোগী ছিলেন। সমাজ ও জাতীয় জীবনের ঘটনাবলি সম্পর্কে তিনি শুধু আগ্রহীই ছিলেন না, এসব বিষয়ে তিনি নির্ভয়ে তার মতামত ব্যক্ত করেছেন এবং আমাদের জন্য দিকনির্দেশও প্রদান করেছেন। শিক্ষার্থীদের কাছে তো বটেই, শিল্পসাহিত্য অঙ্গনের মানুষ ও প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মীদের কাছেও তিনি হয়ে উঠেছিলেন পরামর্শক ও পথপ্রদর্শক।

আলোচকরা বলেন, অসাম্প্রদায়িক, উদার ও মুক্তমনের মানুষ জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান ছিলেন একাধারে শিক্ষক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক। বাংলা সাহিত্যের ছাত্র ও শিক্ষক হয়েও তিনি কেবল সাহিত্যের মধ্যেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেননি। সস্তা জনপ্রিয়তার মোহে কখনও আচ্ছন্ন হননি বলেই সত্যনিষ্ঠ কথনে তিনি ছিলেন সোচ্চার। ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থা যে আমাদের জাতীয় ঐতিহ্য থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে এ বিষয়টি গভীর উদ্বেগের সঙ্গে উপলব্ধি করেছেন তিনি। মাতৃভাষার শিক্ষা গ্রহণের ওপর তিনি সব সময়ই জোরারোপ করেছেন।

সভাপতির বক্তব্যে সুব্রত বড়ুয়া বলেন, জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের জীবনচর্চার সঙ্গে বিনয় ও স্বচ্ছতা ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে ছিল। তিনি যেমন এ দেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে চিন্তা করেছেন, তেমনি নিজের শিক্ষাদর্শনটিও তুলে ধরেছেন। যে শিক্ষা আমাদের জীবনকে বহুমাত্রিক করবে, এমন শিক্ষার কথাই তিনি ভেবেছেন।

লেখক বলছি
লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন ওবায়েদ আকাশ, রনজু রাইম, ফারুক সুমন এবং হক ফারুক আহমেদ।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন জামিরুল ইসলাম শরীফ, নীপা চৌধুরী, তাহমিনা কোরাইশী, রাসেল মাহমুদ এবং হোসাইন কবীর। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী অ ল চৌধুরী, মছরুর হোসেন, আজিজুল বাসার, তনুশ্রী মল্লিক। এ ছাড়া ছিল মৈত্রী সরকারের পরিচালনায় নৃত্যসংগঠন ‘স্বপ্নবিকাশ কলা কেন্দ্র’, মুজাহিদুল ইসলামের পরিচালনায় আবৃত্তি সংগঠন ‘তারুণ্যের উচ্ছ্বাস’, মুশতাক আহমেদ লিটনের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘আমরা কুঁড়ি’, মিতা মোস্তফার পরিচালনায় ‘বেণুকা ললিতকলা কেন্দ্র’ এবং সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘কৃষ্টিবন্ধন বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় কমিটি’র পরিবেশনা।

১৯তম দিনের সময়সূচি
রবিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) বইমেলার শুরু হবে বিকাল ৩টায়, চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে গোবিন্দচন্দ্র দেব এবং ভাষাসংগ্রামী গাজীউল হক শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন গাজী আজিজুর রহমান এবং আমিনুর রহমান সুলতান। আলোচনায় অংশ নেবেন খান মাহবুব, হাসান অরিন্দম, শিহাব শাহরিয়ার, পাপড়ি রহমান, রাজীব কুমার সরকার। সভাপতিত্ব করবেন আবু মো. দেলোয়ার হোসেন।