অনুবাদ সাহিত্যের পাঠক বাড়ছে, অভাব দক্ষ অনুবাদকের

সাহিত্যপ্রেমীদের পড়ার স্পৃহা ক্রমশই বাড়ছে। দেশের সাহিত্য ছাপিয়ে বিদেশি সাহিত্যের প্রতিও আগ্রহ বাড়ছে তাদের। আর এই আগ্রহ পূরণে অবদান রাখছে অনুবাদ সাহিত্য। সময়ের সাথে সাথে এই অনুবাদ সাহিত্য বাংলা সাহিত্যের একটি অত্যাবশ্যকীয় অঙ্গে পরিণত হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনুবাদ সাহিত্যের চাহিদা সময়ের সাথে সাথে ক্রমশই বেড়ে চলছে। অমর একুশে বইমেলা-২০২৩'র ১৯তম দিন রবিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) মেলায় অনুবাদ সাহিত্যের সাথে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপকালে তারা এসব তথ্য জানান। 

অনুবাদ সাহিত্যের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রকাশক ও ব্যবস্থাপকরা জানান, সাহিত্যপ্রেমীদের একটি বিশাল চাহিদা পূরণ করছে অনুবাদ সাহিত্য এবং বিগত ১০ বছরে এই চাহিদা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। তাদের ধারণা, গত পাঁচ বছরেই এই চাহিদা বৃদ্ধির হার প্রায় ৫০ শতাংশ।

তারা আরও জানান, এই জায়গায় সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে দক্ষ অনুবাদকের অভাব। বাংলাদেশে অনুবাদ সাহিত্যের চাহিদা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেলেও মানসম্মত ও দক্ষ অনুবাদকের দেখা মেলা ভার। এই চাহিদা পূরণ করতে সংস্কৃত মন্ত্রণালয়, বাংলা একাডেমিসহ সংশ্লিষ্টদের কাজ করা প্রয়োজন বলে মনে করেন প্রকাশকরা।

এছাড়াও তৃতীয় বিশ্বের দেশ বলে মূল বইয়ের রাইট (স্বত্ব) পেতেও সমস্যা হয় বলে মনে করেন কোনও কোনও প্রকাশক। তারা বলছেন, আবার কেউ কেউ স্বত্ব দিতে রাজি হলেও এর জন্য দাবি করেন মোটা অংকের অর্থ। যা বাংলাদেশের প্রকাশনাগুলোর জন্য বহন করা অসহনীয়। তাই অনেকেই যে বইগুলোর লেখক স্বত্ব নেই সেগুলোই অনুবাদ করেন। 

‘ভূমি প্রকাশ’-এর প্রকাশক জাকির হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশ অনুবাদ সাহিত্যের পাঠক চাহিদা ভালো বাড়ছে। তবে এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পাচ্ছে থ্রিলার অনুবাদের চাহিদা। আমাদের অনুবাদ সাহিত্য নিয়ে কাজ করতে গিয়ে সবচেয়ে বড় যেই সমস্যার ভেতরে পড়তে হয়, তা হলো প্রথমত, বইয়ের কপিরাইট নেওয়া। আবার দক্ষ অনুবাদকের অপ্রতুলতাও আছে। আর এই অভাব পূরণ করা আমাদের প্রকাশকদের জন্য আসলে কঠিন। এর জন্য সংস্কৃত মন্ত্রণালয় ও বাংলা একাডেমিসহ সংশ্লিষ্টদের কাজ করা দরকার। 

‘সেবা প্রকাশনী’-এর ব্যবস্থাপক মুমিনুল ইসলাম জানান, সেবা প্রকাশনী ১৯৭০ সালের পর থেকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে অনুবাদ সাহিত্য নিয়ে কাজ করছে। দেশে অনুবাদ সাহিত্যের পাঠক ক্রমশই বাড়ছে। এরমধ্যে গত ১০ বছরে উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। গত পাঁচ বছরেই বেড়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ।’

তার মতেও অনুবাদ সাহিত্যের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো দক্ষ অনুবাদকের অপ্রতুলতা। তিনি জানান, ‘আগের মানসম্মত বইগুলো কিছুটা কঠিন ভাষায় লেখা। যার ফলে নবীন অনুবাদকরা সেগুলো নিয়ে কাজ করতে চায় না। তারা সব সাময়িকগুলো নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী থাকেন।’

সেবা রহস্য পত্রিকার টিমের মাধ্যমে প্রথমে গল্পের মাধ্যমে অনুবাদক যাচাই করে জানিয়ে তিনি বলেন, যারা ভালো করে তাদের অনুবাদ করার পরামর্শ দেওয়া হয়। এছাড়াও সাহিত্য সংশ্লিষ্টদের এই জায়গায় কাজ করা উচিৎ বলে মনে করেন তিনি। 

নতুন বই

১৯ ফেব্রুয়ারি অমর একুশে বইমেলার ১৯তম দিন নতুন বই এসেছে ৭৫টি। এরমধ্যে গল্প ১১টি, উপন্যাস ১০টি, প্রবন্ধ তিনটি, কবিতা ২১টি, গবেষণা ২টি, শিশুসাহিত্য একটি, জীবনী একটি, রচনাবলি একটি, নাটক একটি, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক একটি, বিজ্ঞান একটি, ভ্রমণ একটি, ইতিহাস একটি, রাজনীতি একটি, বঙ্গবন্ধু একটি, রম্য একটি, ধর্মীয় দুটি, অনুবাদ আটটি, অভিধান একটি, সায়েন্স ফিকশন একটি ও অন্যান্য পাঁচটি। 

আলোচনা অনুষ্ঠান

বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় গোবিন্দচন্দ্র দেব এবং ভাষাসংগ্রামী গাজীউল হক শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গাজী আজিজুর রহমান এবং আমিনুর রহমান সুলতান। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন খান মাহবুব হাসান অরিন্দম, শিহাব শাহরিয়ার, পাপড়ি রহমান এবং রাজীব কুমার সরকার। সভাপতিত্ব করেন আবু মো. দেলোয়ার হোসেন। 

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ নাহার শিরীন সরকার মাসুদ, আসমান এবং আমান কাজল। আবৃত্তি পরিবেশন করুন আবৃত্তিশিল্পী রাশেদ হাসান, শ্রী দেবাশিস ক্ষুদ্র এবং কণা পাল। এছাড়া ছিল আতিকুর রহমান উজ্জ্বলের পরিচালনায় নৃত্যসংগঠন 'নৃত্যাঙ্গন', শামীম চৌধুরী শ্যামলের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন 'আওয়ামী শিল্পীগোষ্ঠী, মোশাররফ হোসেনের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন 'দৃষ্টি', মানজারুল ইসলাম সুইট-এর পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী এর পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী লাইসা আহমেদ লিসা, জান্নাত ও ফেরদৌসী, শিক্ষা অধিকারী, মঞ্জু সাহা, সুমন চৌধুরী এবং উত্তম কুমার রায়। 

২০তম দিনের সময়সূচি

২০ ফেব্রুয়ারি, সোমবার অমর একুশে বইমেলার ২০তম দিন মেলা শুরু হবে বিকাল ৩টায়, চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে বাংলাদেশের বিমূর্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন নূরুননবী শান্ত। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন মিহির মুসাকী, বেলাল হোসেন, হোসেন আল মামুন। সভাপতিত্ব করবেন লুবনা মারিয়াম।