এখনও সব বয়সী পাঠকের কাছে সমাদৃত রবীন্দ্রনাথ-নজরুল

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম সকল শ্রেণির পাঠকের কাছে এখনও ভালোবাসার। এখনও সকল শ্রেণির পাঠকের কাছে সমান সমাদৃত তারা। অমর একুশে বইমেলা ২০২৩-এর ২০তম দিন সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বললে বিষয়টি নতুনভাবে ওঠে আসে।

মেলার বিক্রয়কর্মী ও প্রকাশকরা জানান, মেলায় রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের বইয়ের চাহিদা খুব ভালো, বিক্রিও সন্তোষজনক। রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের ছোটো ছোটো বই, রচনাবলি এসবের চাহিদা বেশি। সকল বয়সের পাঠকই নজরুল-রবীন্দ্রনাথের বই খুঁজতে খুঁজতে নির্দিষ্ট স্টলে পৌঁছেন।IMG_20230220_180429

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এবারের বইমেলায় রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলকে নিয়ে নেই কোনও নতুন গবেষণাধর্মী বই। এর কারণ হিসেবে জানা যায়, পাঠকদের আগ্রহ কম ও মানসম্মত গবেষকের অভাব। নজরুল গবেষণা ইন্সটিটিউটের বিক্রয়কর্মী মো. রাসেল বলেন, আমাদের এবার নজরুল গবেষণাধর্মী কোনও নতুন বই নেই। তবে দুটি বই নতুন করে প্রকাশ করা হয়েছে। গবেষণাধর্মী বই কম আসার কারণ গবেষকের অভাব। তাছাড়াও বড় কারণ পাঠকদের এই ধরনের বইয়ের প্রতি আগ্রহ কম। তারা রচনাবলি আর তার বই খোঁজেন বেশি। আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা সকল বয়সের পাঠকই নজরুলের খোঁজে আমাদের এখানে আসেন।

বাংলা একাডেমির বিক্রয়কর্মী মনীষা বলেন, সকল শ্রেণির পাঠকের আগ্রহ রয়েছে রবীন্দ্রনাথ-নজরুলের প্রতি। সবাই এসে রচনাবলি খোঁজ করেন। এবার মেলা উপলক্ষে নতুন কোনও বই আসেনি।

ঐতিহ্য প্রকাশের বিক্রয়কর্মী জাবের হোসেন বলেন, আমাদের এখানে রবীন্দ্রনাথের বই আছে বেশ কিছু। সবাই আসছেন, কিনছেন। তবে এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গবেষকরা। ওনাকে নিয়ে গবেষণাধর্মী নতুন কোনও বই নেই।

পুথিনিলয় প্রকাশের বিক্রয়কর্মী বৃষ্টি বলেন, আমাদের এখানকার রবীন্দ্রনাথের বইগুলো কিছুটা ভিন্ন উপস্থাপনায় প্রকাশ করা হয়েছে। যার ফলে যে কেউ এসে দেখছে, কিনছেন। সকল বয়সের পাঠকেরই তার বইয়ে আগ্রহ আছে।

নতুন বই

২০ ফেব্রুয়ারি নতুন বই এসেছে ১০০টি। এরমধ্যে গল্পের বই ১৩টি, উপন্যাস ১১, প্রবন্ধ ৫, কবিতা ২৫, গবেষণা ৭, ছড়া ২, শিশুসাহিত্য ১, জীবনী ৩, রচনাবলি ১, মুক্তিযুদ্ধ ২, নাটক ৩, বিজ্ঞান ২, ইতিহাস ৩, ভ্রমণ ২, রাজনীতি ১, চিকিৎসা ১, বঙ্গবন্ধু ১, রম্য ১, ধর্মীয় ২, অনুবাদ ৪, অভিধান ১, সায়েন্স ফিকশন ১ ও অন্যান্য ৭টি।

আলোচনা অনুষ্ঠান

বিকাল ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশের বিমূর্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নূরুন্নবী শান্ত। আলোচনার অংশগ্রহণ করেন বেলাল হোসেন এবং হোসেন আল মামুন। সভাপতিত্ব করেন কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা।

প্রাবন্ধিক বলেন, “বিমূর্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য' শব্দের অর্থ এমন কিছু যা স্পর্শ করা যায় না, ধরা যায় না, কিন্তু অনুভব করা যায়। তবে সেই অনুভব সর্বদা ইন্দ্রিয়জ হয় না। বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে ইন্দ্ৰিয়াতীত অনুভবের অস্তিত্ব আছে। বাংলাদেশের পরিবর্তনশীল সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের বিভেদ-বৈষম্যের স্থান নেই। এর মধ্যে রয়েছে লোকশিক্ষা বিস্তারের শক্তিশালী উপাদান। বাংলাদেশের পরিবর্তনশীল সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সকল সময়ের জানা-অজানা প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে বাঙালি জাতির পরিচয় স্বাতন্ত্র্য বিশ্বময় মূর্ত করে তুলবে।

আলোচকবৃন্দ বলেন, আমাদের জাগতিক ও সামাজিক ভাবনায় বিমূর্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অস্তিত্ব বিদ্যমান। দেশের সীমানা পেরিয়ে আজ আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের পরিচয় ছড়িয়ে পড়েছে বহির্বিশ্বে, অর্জন করেছে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। তবে বাংলাদেশের বিপুল সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকা তৈরি করা প্রয়োজন। আর নির্দিষ্ট ঐতিহ্যের সঙ্গে কলাকুশলি, বাদ্যযন্ত্র শিল্পী সকলের তালিকাও প্রস্তুত করতে হবে। বিমূর্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণে দেশের অর্থনীতিকে হতে হবে সংস্কৃতিবান্ধব ।

সভাপতির বক্তব্যে মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, বিমূর্ত ও মূর্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য একে অপরের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে সম্পৃক্ত। এসব ঐতিহ্য আমাদের লোকসৃষ্টি। বিমুক্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও সুরক্ষার প্রথম পদক্ষেপ হলো সেগুলোকে যথাযথভাবে শনাক্তকরণ।

লেখক বলছি

লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন মোহাম্মদ সাদিক, জয়দীপ দে, স. ম. শামসুল আলম এবং আলী ছায়েদ।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন আনিসুল হক, দীলতাজ রহমান, সাহেদ মন্তাজ, ফারহান ইশরাক, নাসরীন নঈম, জাহাঙ্গীর হোসাইন, রুহুল মাহবুব, বোরহান মাসুদ, নাদির খানম এবং জুনা রাহনুমা। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী মাহমুদা আখতার, দেওয়ান সাইদুল হাসান, নাজমুল আহসান, জি. এম. মোর্শেদ এবং তিতাস রোজারিও।

অমর একুশের অনুষ্ঠানসূচি

২১ ফেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার) শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে মেলা শুরু হবে সকাল ৮টায়, চলবে ৯টা পর্যন্ত। সকাল ৮টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে স্বরচিত কবিতা পাঠের আসর। সভাপতিত্ব করবেন কবি জাহিদুল হক।

বিকাল ৪টায় অনুষ্ঠিত হবে অমর একুশে বক্তৃতা ২০২৩। স্বাগত ভাষণ প্রদান করবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদা।

অমর একুশে বক্তৃতা ২০২৩ শীর্ষক একুশে বক্তৃতা প্রদান করবেন রামেন্দু মজুমদার। সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন।সন্ধ্যায় রয়েছে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ, আবৃত্তি এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।