মেলায় নেই ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী নিয়ে লেখা নতুন বই

বাংলাদেশে বসবাস করা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভাষা ও সংস্কৃতি নিয়ে আগ্রহী পাঠকের সংখ্যা বাড়লেও সেই অনুপাতে প্রকাশ হচ্ছে না বই। এবারের অমর একুশে বইমেলায় এ সংক্রান্ত বই খুবই নগণ্য।

মেলার ২২তম দিন বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এবারের মেলায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী নিয়ে লেখা কোনও নতুন বই আসেনি। ইউপিএল, ঐতিহ্য, প্রথমা, বাংলা একাডেমিসহ বিভিন্ন স্টল-প্যাভিলিয়নে এ সংক্রান্ত কিছু বই পাওয়া গেলেও এগুলোর প্রায় নব্বই ভাগ বইয়ের লেখক বাঙালিরা।IMG_20230222_182506

ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর পাঠকদের দাবি, তাদের নিয়ে বাঙালি লেখকদের বই পাওয়া গেলেও তাদের ভাষার নিজস্ব লেখকের বই তেমন পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে ক্ষুদ্র জাতিসত্তাগুলো নিয়ে বস্তুনিষ্ঠ লেখা ওঠে আসছে না। আর বই যা পাওয়া যাচ্ছে, তাও যথেষ্ট নয়। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সংস্কৃতি, জীবনাচার সংরক্ষণে এ সম্পর্কিত বই ও লেখক বাড়াতে হবে।

মেলায় আসা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার শিক্ষার্থী খুরং চাকমা বলেন, 'সরকারি পর্যায়ে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার ভাষা-সংস্কৃতি নিয়ে কাজ কম। এসব জাতিগোষ্ঠীর মধ্য থেকে সৃজনশীল লেখক তৈরি হওয়া দরকার। নিজস্ব ভাষা সংরক্ষণে তাদের বই প্রকাশের সংখ্যাও বাড়াতে হবে।

সায়েদ মুরং বলেন, সমতলের অনেক লেখক এখন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের নিয়ে লিখছেন, বিশেষ করে পাহাড়ি জাতিসত্তাদের নিয়ে। ফলে এসব লেখার ওপর আমাদের বেশ আগ্রহ সৃষ্টি হচ্ছে। কিন্তু সমতলের অনেক লেখকের মধ্যে আমাদের নিয়ে বিরূপ ধারণা আছে। এতে আমাদের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা প্রকাশ পাচ্ছে। তবে বস্তুনিষ্ঠ তথ্যের মাধ্যমে তিনি লেখকদের বই লেখার আহ্বান করেন। এসময় তিনি তাদের নিজস্ব ভাষার লেখক সামনের দিনগুলোতে বাড়বে বলেও আশা প্রকাশ করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী রাফসান চৌধুরী বলেন, মেলায় এসে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর লেখক ও তাদের নিয়ে লেখা বই খুঁজলাম বেশ কিছু স্টলে। কয়েকটা বাদে অধিকাংশই বাঙালিদের লেখা। আর সবচেয়ে হতাশার বিষয় হলো—এবারের বইমেলায় তাদের ওপর লেখা নতুন কোনও বই খুঁজে পেলাম না।IMG_20230222_182612

নতুন বই

২২ ফেব্রুয়ারি নতুন বই এসেছে ৬৪টি। এরমধ্যে গল্পের বই ৪টি, উপন্যাস ১১, প্রবন্ধ ১, কবিতা ১৮, গবেষণা ১, ছড়া ৩, জীবনী ২, রচনাবলি ২, মুক্তিযুদ্ধ ৩, নাটক ১, বিজ্ঞান ১, ভ্রমণ ২, ইতিহাস ২, রাজনীতি ৩, চিকিৎসা ১, রম্য ২, সায়েন্স ফিকশন ২, ধর্মীয় ২ ও অন্যান্য ৪টি।

আলোচনা অনুষ্ঠান

বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় জন্মশতবর্ষে বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত কবিতা ও ছড়া এবং শতবর্ষে বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত লোকায়ত সাহিত্য শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মতিন রায়হান ও সুমনকুমার দাশ। আলোচনায় অংশ নেন তপন বাগচী, মোস্তাক আহমাদ দীন এবং অনুপম হীরা মণ্ডল। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কামাল চৌধুরী।

লেখক বলছি

লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন রফিকুর রশীদ, আহমাদ মাযহার, অদ্বৈত মারুত।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান

এদিন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কামাল চৌধুরী, মুহাম্মদ সামাদ, কাজল বন্দ্যোপাধ্যায়, শাহজাদী আঞ্জুমান আরা, আহমেদ জসিম, নাজমা আহমদ খান, নাজমুল হুসাইন। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী কাজী রোমানা আহমেদ সোমা, মাসুদুজ্জামান, আনজুমান আরা, রশিদ কামাল। এছাড়া ছিল মাসুম হুসাইনের পরিচালনায় নৃত্য পরম্পরা নৃত্যালয়, কোহিনূর রহমান শিল্পীর পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন 'আনন্দ নিকেতন সংগীতালয়'-এর পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী মোস্তাফিজুর রহমান, সালমা মোস্তাফিজ, ফারুক নূর, এ টি এম গোলাম মোস্তফা, আমিরুল ইসলাম, মজিবুর রহমান বিরহী, রীতা ভাদুরী, আমর হাওলাদার বাবুল। নৃত্য পরিবেশন করবেন সাকিবুল ইসলাম।

২৩তম দিনের অনুষ্ঠানসূচি

বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) মেলা শুরু হবে বিকাল ৩টায়, চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত।