মেলায় বই বিক্রি নয়, বিতরণই যাদের উদ্দেশ্য

রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে বইমেলায় এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী শাহরিয়ার হোসেন। মেলায় এসে তিনি প্রবেশ করেন মেলার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে। এদিকে ঘুরতে ঘুরতে তিনি দেখতে পান একটি ভিন্নধর্মী স্টল। যেখানে বসে হাতের স্পর্শে বই পড়ছেন কিছু মানুষ। স্টলে গিয়ে জানতে পারেন ব্রেইল মাধ্যমে প্রকাশিত সাহিত্য সম্পর্কে—যা দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী পাঠকদের জন্য। আগ্রহী হয়ে বই কিনতে চাইলে স্টলে দায়িত্বে থাকা ইমরুল হাসান জানান এই প্রকাশনী বই বিক্রি করে না, দৃষ্টিজয়ী শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ করে।

বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) মেলা প্রাঙ্গণে বাংলা ট্রিবিউনের সাথে কথা হয় ইমরুল হাসানের। তিনি স্পর্শ ও হেপার স্বেচ্ছাসেবী গণসংযোগ সমন্বয়ক বলে জানান।

তিনি বলেন, স্পর্শের প্রতিষ্ঠাতা নাজিয়া জেবীন ২০০২ সালে বইমেলায় নতুন প্রকাশনা করেন। সেখানে তিনি দেখতে পান দৃষ্টিজয়ী শিক্ষার্থীরা বই নাড়িয়ে-চাড়িয়ে, স্পর্শ করে দেখছেন কিন্তু পড়তে পারছে না। তাদের বই পড়ার আকাঙ্ক্ষা নাড়া দেয় এই শিশুসাহিত্যিককে। এরপর তিনি ২০০৮ সালে প্রকাশনাটি প্রতিষ্ঠা করেন। আর ২০০৯ সালে প্রকাশনীর প্রথম বই প্রকাশ করা হয়। এরপর ২০১১ সাল থেকে নিয়মিত বইমেলায় দৃষ্টিজয়ীদের সাহিত্যের স্বাদ দিয়ে আসছে প্রকাশনাটি। এখন পর্যন্ত মোট ১৩১টি ব্রেইল বই প্রকাশ করেছে প্রকাশনাটি।

বইপড়ার মাধ্যমে দৃষ্টিজয়ীদের ব্যক্তিত্বের বিকাশ ও স্বপ্ন দেখতে উদ্বুদ্ধ করাই মূলত প্রকাশনার উদ্দেশ্য বলে তিনি জানান। এছাড়াও সব সময় যেন দৃষ্টিজয়ী মানুষেরা বই পড়তে পারেন, সেজন্য জাতীয় পাঠাগার, বাংলা একাডেমিসহ বিভিন্ন লাইব্রেরিতে ব্রেইল কর্নার স্থাপন করেছে প্রকাশনাটি। এছাড়াও হেপা নামে একটি এনজিওর সহযোগিতায় দুটি বৃত্তি দিচ্ছে প্রকাশনাটি। এরমধ্যে 'জ্যোতিবৃত্তি' দেওয়া হচ্ছে যারা স্ব স্ব পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করছে তাদের। আর অন্য সাধারণ বৃত্তি দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন বই কেনা, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়-স্কুলে ভর্তি হওয়ার জন্য। এছাড়াও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের মা-বাবাকেও কাউন্সিলিং করেন তারা।

ব্রেইল মাধ্যমে প্রকাশিত বইয়ে ছয়টি বিন্দু ব্যবহার করে লেখা হয় এসব বই। বাংলা বর্ণ-অ এর জন্য একটি বিন্দু আবার ইংরেজি বর্ণ (এ)'র জন্যও একটি বিন্দু ব্যবহার কার হয়। এভাবে ছয়টি বিন্দু বিভিন্নভাবে সাজিয়ে লেখা হয় বিভিন্ন বর্ণ। কিন্তু এই বাংলা, ইংরেজি বা আরবি-এসব ভাষার পার্থক্য তারা কীভাবে বুঝতে পারেন—জানতে চাইলে স্টলে বসে বই পড়া বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের দৃষ্টিজয়ী শিক্ষার্থী মহিনি বলেন, আমরা বিন্দুগুলো স্পর্শ করে বুঝতে পারি কোনটা কী। সেগুলো ডিকোড করে আমরা পড়ি। আর ইংরেজি বোঝার জন্য একটা চিহ্ন দেওয়া আছে। যাকে ক্যাপিটাল সাইন বলে। এরফলে আমরা বুঝতে পারি এটা ইংরেজি লেখা। আরবির জন্যও একই ধরনের চিহ্ন রয়েছে।

তাদের মতো মানুষদের সাহিত্যের স্বাদ উপভোগ করার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য জন্য স্পর্শের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমরা স্পর্শের সহযোগিতায় সাহিত্যের স্বাদ নিতে পারছি, অনেক অনেক মজার বিষয় সম্পর্কে জানতে পারছি। এজন্য স্পর্শের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও আন্তরিক ভালোবাসা।IMG_20230223_182110

নতুন বই

২৩ ফেব্রুয়ারি বইমেলায় নতুন বই এসেছে ৭৮টি। এরমধ্যে গল্পের বই ১২টি, উপন্যাস ৭, প্রবন্ধ ৬, কবিতা ৩৪, ছড়া ২, জীবনী ৪, নাটক ৪, ভ্রমণ ২, ইতিহাস ২, অনুবাদ ২ ও অন্যান্য ৫টি।

আলোচনা অনুষ্ঠান

বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় জন্ম শতবর্ষে বঙ্গবন্ধুবিষয়ক কথাসাহিত্য, নাটক ও চলচ্চিত্র এবং জন্মশতবর্ষে বঙ্গবন্ধুবিষয়ক গবেষণা ও মুক্তগদ্য চর্চা শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মিল্টন বিশ্বাস এবং ফরিদ কবির। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন রফিকুর রশীদ, সুভাষ সিংহ রায়, সরিফা সালোয়া ভিনা, মাসুদ পথিক। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন গোলাম কুদ্দুছ।

লেখক বলছি

লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কামাল চৌধুরী, জহরত আরা, মোস্তফা আল-মেহমুদ-রাসেল এবং আনজীর লিটন।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন ভাস্কর রাশা, দুলাল সরকার, কামরুজ্জামান, রাজীব কুমার সাহা, মাহবুবা ফারুক, আতিক আজিজ। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী শফিকুল ইসলাম বাহার, চৌধুরী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর, জিনিয়া ফেরদৌস রুনা এবং অনন্যা সাহা। এছাড়া ছিল হাসান আবদুল্লাহ বিপ্লবের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন 'ঘাসফুল', শাহিনুর আল-আমিনের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন 'সম্প্রীতি সংস্কৃতি সংসদ'-এর পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী ঝুমা খন্দকার, চঞ্চল খান, ফাহিম হোসেন চৌধুরী, অণিমা রায়, মঞ্জু সাহা, মিরা মণ্ডল, আশরাফ মাহমুদ।

২৪তম দিনের অনুষ্ঠানসূচি

২৪ ফেব্রুয়ারি (শুক্রবার) বইমেলা সকাল ১১টা থেকে শুরু হয়ে চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। সকাল ১১টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত মেলায় শিশুপ্রহর।

সকাল সাড়ে দশটায় শিশু-কিশোর চিত্রায়ন, আবৃত্তি ও সংগীত প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার প্রদান করা হবে। অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ প্রদান করবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার। সভাপতিত্ব করবেন নাট্যজন ফেরদৌসী মজুমদার।