প্রাণের মেলা সাঙ্গ হলো

ভাষার মাসের প্রথম দিনে পূর্ণ আমেজে শুরু হয় ‘অমর একুশে বইমেলা-২০২৩’। বিগত মেলাগুলোর আয়োজন ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে অসন্তোষ থাকলেও এবার সেটি ছিল না। শুরু থেকেই মেলার আয়োজন নিয়ে পাঠক-প্রকাশক ও লেখকরা সন্তোষ প্রকাশ করেন। চমৎকার আয়োজনে দেখতে দেখতে শেষ হয়ে গেলো এবারের বইমেলা।

মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) মেলার শেষ দিন বিকাল তিনটায় গেট খোলার পর থেকে দর্শক-পাঠক বাড়তে থাকে। এদিন মেলায় পাঠকই ছিলেন বেশি। লিস্ট হাতে স্টলে, প্যাভিলিয়নে পাঠকরা বই কিনতে ভিড় করেন। পাঠকদের হাতে বই তুলে দিতে ব্যস্ত ছিলেন বিক্রয়কর্মীরাও। বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যা হতে এই ভিড় আরও বাড়ে।

শেষ দিনে মেলা চলে কিছুটা বাড়তি সময় নিয়ে। রাত নয়টা মেলার গেট বন্ধ হওয়ার কথা থাকলে চলে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত। এদিকে সন্ধ্যা ৭টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অবস্থিত স্বাধীনতা স্তম্ভে লেজার শো প্রদর্শিত হয়। এরপর রাত ৮টায় আতশবাজি ফোটানো মাধ্যমে প্রাণের মেলার বিদায় ঘোষণা করা হয়।

নতুন বই

সমাপনী দিন মেলায় নতুন বই এসেছে ২৬৭টি। এরমধ্যে গল্পের বই ৩৯টি, উপন্যাস ২৪, প্রবন্ধ ১১, কবিতা ১২১, গবেষণা ৫, ছড়া ৩, শিশুসাহিত্য ২, জীবনী ৯, রচনাবলি ২, মুক্তিযু্দ্ধ ৪, নাটক ৬, বিজ্ঞান ১, ভ্রমণ ২, ইতিহাস ৭, রাজনীতি ২, চিকিৎসা ৩, বঙ্গবন্ধু ২, রম্য ১, ধর্মীয় ১, অনুবাদ ৫, অভিধান ৩, সায়েন্স ফিকশন ২ এবং অন্যান্য ১২টি। এবারের মেলায় মোট নতুন বই এসেছে ৩৭৩০টি।

লেখক বলছি

লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন বাদল সৈয়দ, সালাহ উদ্দিন মাহমুদ, সৌম্য সালেক এবং পলি শাহিনা।

সমাপনী অনুষ্ঠান

বিকাল ৫টায় সমাপনী অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন ‘অমর একুশে বইমেলা ২০২৩’-এর সদস্য সচিব ডা. কে এম মুজাহিদুল ইসলাম। প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এমপি। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন বাংলা একাডেমির সচিব এ. এইচ. এম. লোকমান। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি ও কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন।

কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, ‘কোভিড মহামারি পরবর্তীকালে মাসব্যাপী অমর একুশে বইমেলার আয়োজন সত্যিই আমাদের জন্য বড় একটি সফলতা। বিন্যাস ও আঙ্গিকগত দিক দিয়ে এবারের বইমেলা সবার কাছে প্রশংসিত হয়েছে।’

ডা. কে এম মুজাহিদুল ইসলামের ভাষ্য, ‘এবারের বইমেলায় বাংলা একাডেমিসহ সকল প্রতিষ্ঠানের বই ২৫ শতাংশ কমিশনে বিক্রি হয়েছে। ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলা একাডেমি ১ কোটি ২৪ লাখ টাকার বই বিক্রি করেছে। ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্টল মালিকদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য এবং আজকের সম্ভাব্য বিক্রি যুক্ত করলে বলা যায় যে প্রায় ৪৭ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছে।

কে এম খালিদ এমপি বলেন, ‘আনন্দ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে উদযাপিত এবারের বইমেলা সমাপ্তির দ্বার প্রান্তে। বইমেলা কেবল বই বিক্রির জায়গা নয়। দল, মত, ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে সকলের প্রাণের মেলা সক্রিয় অংশগ্রহণ ও সহযোগিতায় সাফল্যমণ্ডিত হয়েছে।’

বাংলা একাডেমির সভাপতি ও কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেন, ‘বাংলা একাডেমি আয়োজিত অমর একুশে বইমেলা আমাদের জাতীয় জীবনে বড় একটি দিগন্ত। বই পাঠের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের তরুণদের মধ্যে মানবিক দর্শন জাগ্রত হবে এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হবে।’