কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে তালা কেটে কয়েক মিনিটের মধ্যেই দোকান সাবাড় করা ছিল তাদের কাছে মামুলি ব্যাপার। চুরি করা এবং চুরির মালামাল বিক্রির সুবিধার্থে কেনে পিকআপ। সেটিতে ঘুরে ঘুরেই চুরি করতো তারা। এতে চুরির সংখ্যাও বেড়ে যায়। রাজধানীজুড়ে গত সাত বছরে দেড় শতাধিক চুরি সংঘটিত করার অভিযোগে চক্রের দুই সদস্য জ্যাক-জামালকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
শুক্রবার (৩ মার্চ) দুপুরে মোহাম্মদপুর থানার জাফরাবাদ এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করে মিরপুর মডেল থানার পুলিশ। এ সময় তাদের কাছ থেকে চুরির সরঞ্জাম ও একটি পিকআপ উদ্ধার করা হয়। মিরপুর মডেল থানা সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, ছয় মাস আগে জনৈক আসাদুজ্জামান নূরের নিউ মিউজিক এশিয়া নামের এক দোকান থেকে দুঃসাহসিক এক চুরির ঘটনা তদন্তে উঠে আসে জ্যাক-জামালের নাম। ২০২২ সালের ৭ সেপ্টেম্বর মিরপুর বড়বাগ পলিভিটা বেকারি এলাকায় সংঘটিত সেই চুরিতে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ২৩টি মোবাইল সেট, একটি ল্যাপটপ, ২০টি মেমোরি কার্ড, ৫০০টি রিচার্জ কার্ড, নগদ অর্থসহ আনুমানিক ১ লাখ ৫২ হাজার ৭৭৫ টাকার মালামাল চুরি করে জ্যাক-জামাল। সেই চুরির দীর্ঘ তদন্ত শেষে সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে জ্যাক-জামালকে শনাক্ত করা হয় এবং আজ দুপুরে মোহাম্মদপুর থানা এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। পরে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সোহেল (৩৫) নামের আরেকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সোহেল জ্যাক-জামালের কাছ থেকে চুরি করা মালামাল কিনতো।
মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মহসিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এই চক্রের সঙ্গে আর কারা জড়িত, এসব বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে। গ্রেফতার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হলেও পরে জামিনে বের হয়ে তারা একই ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। রাজধানীর দুর্ধর্ষ দুই গ্রিল কাটা চোরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা হলো মো. জাকির হোসেন ওরফে জ্যাক (৪৪) ও মো. নূর জামাল ওরফে জামাল (২৬)। তারা দুজন জ্যাক-জামাল নামেই পরিচিত।
চুরির টাকায় কেনা পিকআপে চড়েই চুরি
চক্রের সদস্য জ্যাক-জামাল সাত বছরে দেড় শতাধিক চুরি করে। পরে চুরির টাকায় পিকআপ কেনে জ্যাক। সেই পিকআপে চড়ে চুরি করে বেড়ায় তারা। আগে রাতে একটি চুরি করলেও গাড়ি কেনার পর এক রাতে চারটি চুরিও করে তারা। চুরির সব মালামাল বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে।
এ ছাড়া উন্নত মানের বাসা ভাড়াও করে তারা। সব মালামাল একসঙ্গে বিক্রি করলে ধরা পড়ার আশঙ্কা থাকে। তাই ওই বাসাকে গুদাম হিসেবে ব্যবহার করে সেখানেই চুরির মালামাল রাখতো তারা।
৪ সেকেন্ডে তালা কেটে ৪ মিনিটে চুরি
জ্যাক-জামাল চুরি করতে বের হতো রাত ২টায়। চুরি শেষে বাসায় ফিরতো ৬টায়। এই চার ঘণ্টার মধ্যেই তারা চুরি সংঘটিত করতো।
পুলিশ জানায়, দুজনের মধ্যে জ্যাক গ্রিল ও তালা কাটে। এতে তার সময় লাগে সর্বোচ্চ চার সেকেন্ড। তারপর দোকানে ঢুকে মালামাল চুরি করে জামাল। তার পুরো চুরি করতে সময় লাগে মাত্র চার মিনিট। এক রাতেই তারা কয়েকটি দোকান চুরি করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা স্বীকার করে, এক রাতে তারা সর্বোচ্চ চারটি চুরি করেছে।
ছোট দোকানই টার্গেট
জ্যাক-জামালের মূল টার্গেট ছোট ছোট দোকান। সাধারণত রাস্তার ওপর থাকা ছোট ছোট পান-সিগারেটের দোকান, মোবাইল রিচার্জ ও মুদিদোকানই টার্গেট করে তারা। কারণ, এসব দোকানের মালিক সাধারণত নিম্ন আয়ের হয়ে থাকেন। তাই চুরি হলেও তারা মামলা করেন না। এ কারণে দেড় শতাধিক চুরি সংঘটিত করলেও তাদের বিরুদ্ধে মামলা খুবই কম। জ্যাকের বিরুদ্ধে চারটি ও জামালের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা রয়েছে।
ওসি মো. মহসিন জানান, অভিযুক্ত দুজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আগামীকাল তাদের আদালতে তোলা হবে।