রাষ্ট্রদ্রোহ ও ‘প্রভাব খাটিয়ে প্রহসনের নির্বাচন করা’র অভিযোগে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার বিরুদ্ধে বিএনপির করা মামলাকে ত্রুটিপূর্ণ ও মামলাটি আইনগতভাবে চলার সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেছেন তার আইনজীবী তৌহিদুল ইসলাম সজিব।
শুক্রবার (২৭ জুন) ঢাকার মহানগর হাকিম আওলাদ হোসাইন মুহাম্মদ জোনাইদের আদালতে এ মন্তব্য করেন তিনি। প্রথম দফার চার দিনের রিমান্ড শেষে আজও নূরুল হুদার আরও ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক শামসুজ্জোহা সরকার।
এদিন দুপুর ২টা ৪০ মিনিটের দিকে নূরুল হুদাকে আদালতে হাজির করে সিএমএম আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। ৩টা ৪০ মিনিটের দিকে রিমান্ড শুনানিকালে তাকে এজলাসে তোলা হয়।
পরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রিমান্ডে রাখার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন। এরপর রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন। তিনি বলেন, এটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ মামলা। আজকের আসামি বাংলাদেশের একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান ছিলেন। সাবেক তিন সিইসি’র কারণে বাংলাদেশে ফ্যাসিস্টের জন্ম হয়। হাজার হাজার মানুষের প্রাণ গেছে। নির্বাচন বিশাল একটা কর্মযজ্ঞ। সব আসামি নিজেকে নির্দোষ দাবি করে ঘটনার বিষয় স্বীকার করতে চায় না। এত বড় কর্মযজ্ঞে অনেক ঘটনা ঘটেছে। এজন্য বারবার রিমান্ড প্রয়োজন হবে। ২০১৮ সালে যখন নির্বাচনের ঘোষণা দেওয়া হয়। তখন পুলিশ, প্রশাসন ইসির অধীনে থাকে। বিভিন্ন জেলায় বিচারকদের নিয়ে অনুসন্ধান কমিটি গঠনের ক্ষমতা ছিল। বিরোধী রাজনৈতিক দলকে আওয়ামী লীগ পিটিয়ে রাজপথ ছাড়া করেছে। বাড়িতে পুলিশ গিয়ে গ্রেফতার করেছে। প্রার্থীদের বাড়িঘর ভাঙচুর, লুটপাট করা হলেও সেই বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
তিনি বলেন, ২০১৮ সালের প্রহসনের ভোট করেছেন নূরুল হুদা। রাত ৩টার মধ্যে ২০০ প্রার্থীকে বিজয় ঘোষণা করেন। রাতের ভোট করার বিষয়ে প্রিজাইডিং অফিসারদের নির্দেশ দেওয়া হয়। কাদের সহযোগিতায় রাতের ভোট হয়েছে—তা জানার প্রয়োজন। পাতানো নির্বাচনের নির্দেশগুলো কীভাবে পরিচালিত হয়েছিল সে বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ প্রয়োজন। নির্বাচনের সময় শেখ হাসিনার সঙ্গে ষড়যন্ত্র করার বিষয় জানা দরকার। হাজার কোটি টাকা কীভাবে খরচ করেছেন, সেই হিসাব দেননি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আরও যারা জড়িত ছিল, তাদের তথ্য বের করা প্রয়োজন। জাতীয় নির্বাচন দু-তিন মাস ধরে সংঘটিত হয়।
এসময় বিচারক জানতে চান, তখন ইসি সচিব কে ছিলেন? পিপি জানান, হেলালুদ্দীন আহমেদ। ওই নির্বাচনে নুরুল হুদার পরিবারের কেউ ছিলেন? বিচারকের এমন প্রশ্নে পিপি জানান, পটুয়াখালী-৩ আসনে ভাগ্নে শাহাজাদাকে ক্ষমতার অপব্যবহার করে নমিনেশন দিতে সহায়তা করেন।
নূরুল হুদার পক্ষে অ্যাডভোকেট তৌহিদুল ইসলাম সজিব রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। শুনানিতে বলেন, গত ২৩ জুনের রিমান্ড আবেদন এবং আজকের রিমান্ড আবেদনের ওপর মৌলিক তেমন পার্থক্য নেই। তাকে তদন্ত কর্মকর্তা রিমান্ডে নিয়ে কী পেলেন, ১০০ তে কত পেলেন, জানাতে হবে। আদালতকে সন্তুষ্ট করতে হবে, কত পার্সেন্ট তথ্য পেলেন। কিন্তু আবেদনে দেখা গেলো মৌলিক তেমন পার্থক্য নেই।
তিনি বলেন, সব জামিনযোগ্য ধারায় মামলা শুরু। গত ২৩ জুন আদালতে উপস্থাপন করলাম সব ধারা জামিনযোগ্য, জামিন দেন। প্রসিকিউশন দেখলো অবস্থা খারাপ, কথা বলার সুযোগ কম। পরে ধারা সংযোজনের আবেদন করেন। কথা বলতেও ভয় লাগে। রেকটিফাই করে যদি আবার ধারা সংযোজনের আবেদন করা হয়।
আসামি পক্ষের আইনজীবী বলেন, তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগের ধারা সংযুক্ত করা হয়েছে, এই মামলা চলার ক্ষেত্রে আইনগত বাধা আছে, মামলা প্রশ্নবিদ্ধ। রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করার আগে সরকারের অনুমতি নিতে হয়। এখানে তা করা হয়নি। মামলাটা ত্রুটিপূর্ণ, আইনগতভাবে চলার সুযোগ নেই। সুনির্দিষ্ট, সুস্পষ্ট, দায় সৃষ্টিকারী—এমন কিছু মামলায় নাই। রিমান্ডের ডেভেলপমেন্ট। তদন্ত কর্মকর্তা তাকে রিমান্ডে নিয়ে কী পেলেন তা উল্লেখ নেই। তাকে নিয়ে কী শুধু আপ্যায়ন করলেন। রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করবে সরকার। রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা ব্যক্তি করেছে—এমনটা বিরল। ব্যক্তি মামলা করলে তা ত্রুটিপূর্ণ হয়। আর নির্বাচন সংক্রান্ত অর্থ নিয়ে দুর্নীতি হয়েছে কিনা তা একজন এসআই তদন্ত করবেন? এই তদন্ত তো করবে এনবিআর।
তিনি বলেন, নুরুল হুদা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। গেরিলা যুদ্ধ করেছেন। স্বাধীনতা, অস্তিত্বের সঙ্গে বিষয়টা জড়িত। সবকিছু মিলিয়ে রিমান্ড বাতিল চেয়ে তার জামিনের প্রার্থনা করছি।
বক্তব্য, পাল্টা বক্তব্যে রিমান্ডের বিষয়ে শুনানি শেষ হয়। সবশেষে আদালত আসামিপক্ষের আইনজীবীদের উদ্দেশে বলেন, সব প্রশ্নের উত্তর দিলেন। রাতের ভোট নিয়ে কিছু বললেন না। তখন নুরুল হুদার আইনজীবী বলেন, এবিষয়ে কোনও মিডিয়া কোনও ডকুমেন্ট দেখাতে পারেনি।
পরে আদালত তার চার দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।
উল্লেখ্য, গত ২২ জুন নূরুল হুদাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরদিন ২৩ জুন তাকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে ওইদিন আদালত চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এ মামলায় গ্রেফতার সাবেক সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালের বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
