‘হঠাৎ বিকট শব্দে দৌড়ে প্রাণ বাঁচাই’

রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড় দিয়ে গাউছিয়া মার্কেটের দিকে এগিয়ে একটি বাণিজ্যিক ভবনের সামনে রিকশা নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন চালক জিয়াউর রহমান। সকাল সাড়ে ১০টার মতো বাজে তখন। হঠাৎ বিকট শব্দ আসে কানে। ভবনের ওপর থেকে তার শরীরে ইট-সিমেন্টের ভাঙা অংশ পড়তে থাকে। সঙ্গে সঙ্গে দৌড়ে সেখান থেকে চলে যান তিনি। তার সামনেই অনেককে ধ্বংসস্তূপের নিচে পড়ে যেতে দেখেন তিনি। এসময় দৌড়ে বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নেন পথচারীরা।

বিস্ফোরণের পর ধসে পড়ে ভবনের একাংশ (ছবি: নাসিরুল ইসলাম)

ঘটনার পর বাংলা ট্রিবিউনের প্রতিবেদকের কাছে ঘটনার এই বর্ণনা দেন প্রত্যক্ষদর্শী জিয়াউর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমি ভবনটির সামনেই দাঁড়ানো ছিলাম। হঠাৎ বিকট শব্দে ভবন থেকে ইট-সিমেন্টের আবর্জনা আমার শরীরে এসে পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে আমি দৌড় দেই। যারা দাঁড়ানো ছিল তাদের অনেকেই আহত হয়েছে। মনে করছিলাম আজ আমি শেষ। আমার মৃত্যু এখানেই। আল্লাহ আমাকে বাঁচাইসেন।’

ওপর থেকে ছুটে আসা আবর্জনায় আহত হন অনেকে (ছবি: নাসিরুল ইসলাম)

‘শিরিন ম্যানশন’ নামের ভবনটির তিনতলায় ছিল ফিনিক্স ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির একটি শাখা। সেখানে ছয় জন কাজ করছিলেন। তারা সবাই আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে অফিসের ইনচার্জ আকবর, আশরাফ, আশা, স্বপ্না ও জোহুর হাফিজ শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি আছেন। এছাড়া আরেকজনকে ভর্তি করা হয়েছে ধানমন্ডি পপুলার হাসপাতালে।

বিস্ফোরণে আহত হয়েছেন অন্তত ১৪ জন (ছবি: নাসিরুল ইসলাম)

জোহুর হাফিজ বাদে বাকি সবাই গুরুতর আহত হয়েছেন বলে বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন ফিনিক্স ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির জনসংযোগ কর্মকর্তা মাহাবুব ই সোবহান। তিনি বলেন, আমাদের অফিসে তেমন দাহ্য পদার্থ ছিল না। দুই টন করে চার টনের দুটি এসি ছিল। এছাড়া আমরা এখন পর্যন্ত আর কিছু জানতে পারিনি।

এদিকে ঘটনাস্থলে প্রশাসনের একাধিক সংস্থার লোকজন উপস্থিত হয়েছেন। ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ, পিবিআই, সিআইডির সদস্যরা জায়গাটি খুঁটিয়ে দেখছেন।

এলাকাটি ঘিরে রেখেছে পুলিশ (ছবি: নাসিরুল ইসলাম)

ঘটনাস্থলে দায়িত্ব পালনরত রমনা জোনের ডিসি মো. শহিদুল্লাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, কী কারণে বিস্ফোরণ, সুনির্দিষ্টভাবে এখনও তা বলা যাচ্ছে না। আজ রবিবার (৫ মার্চ) সকাল ১০টা ৫২ মিনিটে তিনতলা ভবনটিতে বিস্ফোরণ ঘটে। এরপর তাৎক্ষণিকভাবে সেখানে আগুন ধরে যায় এবং ভবনটির কিছু অংশ ধসে পড়ে। সকাল সোয়া ১১টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে ফায়ার সার্ভিস। এ ঘটনায় তিন জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে ধানমন্ডি থানা পুলিশ।  আহত হয়েছেন অন্তত ১৪ জন।

সায়েন্সল্যাব এলাকায় বিস্ফোরণের পর মিরপুর রোডে যানজট (ছবি: নাসিরুল ইসলাম)

এদিকে বিস্ফোরণের এ ঘটনার পর যানজট সৃষ্টি হয় সায়েন্সল্যাব এলাকায়। ঘটনার পর থেকে চারপাশের সড়ক বন্ধ ছিল। পুলিশের চেষ্টায় বেলা আড়াইটার দিকে যান চলাচল কিছুটা স্বাভাবিক হয়।