সিদ্দিকবাজারে বিস্ফোরণ

দগ্ধ ও আহতরা কাতরাচ্ছেন হাসপাতালে

সিদ্দিকবাজারের বিস্ফোরণে দগ্ধ ও আহত ব্যক্তিরা শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউট ও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন। চিকিৎসকরা বলছেন, তাদের অনেকেই এখন মৃত্যুঝুঁকিতে আছেন। তাদের শরীরের ৪০ থেকে ৯০ ভাগ পর্যন্ত বার্ন বা দগ্ধ হয়েছে। বিশেষ করে যাদের শ্বাসনালি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তারাই বেশি ঝুঁকিতে আছে।

আহতদের একজন নোয়াখালীর মো. হাসান। যার শরীরের ৮৮ ভাগই দগ্ধ হয়েছে। তাকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে। বর্তমানে বার্ন ইনস্টিটিউটে ১০ জন এবং ঢামেকে ২০ জন চিকিৎসাধীন আছেন।

হাসানের স্বজনরা জানান, হাসানের বাড়ি নোয়াখালীর সোনাপুরে। সিদ্দিকবাজারে যে ভবনটিতে বিস্ফোরণ হয়েছে, সেই ভবনের নিচে ফুটপাতে বাচ্চাদের স্কুল ব্যাগের ব্যবসা করেন। বিস্ফোরণে তিনি ছিটকে পড়েন দূরে। তার শরীরের ৮৮ ভাগই দগ্ধ হয়েছে।

হাসানের শ্যালক জামাল জানান, তিনিও তার ভগ্নিপতির সঙ্গে পাশাপাশি ব্যবসা করেন। জামাল ঘরের পর্দা বিক্রি করেন। বিস্ফোরণের সময় আমি মসজিদে নামাজ পড়তে গিয়েছিলাম বলে বেঁচে যাই। মসজিদের ভেতর থেকেই এই ভয়াবহ বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পান। চিকিৎসকরা তাকে জানিয়েছেন, হাসানের শরীরের ৮৮ ভাগই দগ্ধ হয়েছে। খুবই আশঙ্কাজনক অবস্থা। হাসানের ছোট ছোট তিন সন্তান আছে। পরিবারে ছোট ভাই-বোনও আছে। পরিবারের সবার বড় হওয়ায় সবাইকেই দেখতে হতো তাকে। এখন পুরো পরিবারটিই পড়েছে অনিশ্চয়তায়।

দগ্ধদের মধ্যে চিকিৎসাধীন আরেকজন হচ্ছেন বাচ্চু মিয়া (৫৫)। ২৫ বছর আগে কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর থেকে রাজধানীর সিদ্দিকবাজার এসেছিলেন কাজের সন্ধানে। তখন থেকেই সিদ্দিকবাজারের একটি জুতার কারখানায় কাজ করছেন বাচ্চু মিয়া। গ্রামের বাড়িতেও তেমন জমিজমা না থাকায় নারায়ণগঞ্জের রূপসা এলাকার একটি ভাড়া বাসায় স্ত্রী-সন্তানদের উঠিয়ে নিজে একাই থাকেন কর্মস্থলে।

বিস্ফোণের দিন মঙ্গলবার সকালে বাচ্চু মিয়া স্ত্রী রোকিয়া খাতুনকে ফোন করে বলেছিলেন বাসায় গিয়ে শবে বরাতের নামাজ পড়বেন। কিন্তু তার বাসায় যাওয়া হলো না। তিনি এখন হাসপাতালের বিছানায় কাঁতরাচ্ছেন। ৪০ ভাগ দগ্ধ হয়ে এখন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটের পোস্ট ওপারেটিভে চিকিৎসাধীন আছেন।

বাচ্চু মিয়ার স্ত্রী-সন্তান হাসপাতালের মেঝেতে বসে আহাজারি করছেন। খবর পেয়ে শ্বশুরবাড়ি থেকে আহত বাবাকে দেখতে হাসপাতালে ছুটে যান বড় মেয়ে নাঈমা আক্তার। বাবার এমন অবস্থা দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন নাঈমা।

বাচ্চু মিয়ার ছোট ভাই হানিফ মিয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমার ভাইয়ের দুই পা, গলা, মুখের এক পাশে পুড়ে মাংস আলগা হয়ে গেছে। আমরা স্বল্প আয়ের মানুষ। আমার ভাইয়ের কিছু হয়ে গেলে তার পরিবারটা কে দেখবে?

শরীয়তপুর জেলার নোয়াপাড়া এলাকার আল আমিন মিটফোর্ড হাসপাতালে ইন্টার্ন চিকিৎসক হিসেবে গত এক বছর ধরে কাজ করছেন। সিদ্দিকবাজারের ওই মার্কেটের পাশ দিয়ে যাওয়ার পথে তিনি বিস্ফোরণের মধ্যে পড়েন। তার শরীরের ৫০ ভাগ দগ্ধ হয়। গুরুতর অবস্থায় ভর্তি আছেন বার্ন ইউনিটের পোস্ট ওপারেটিভে। পাশেই অপেক্ষা করছিলেন আল আমিনের স্বজনরা।

তার বড় ভাই মনিরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আল আমিনকে নিয়ে আমাদের অনেক স্বপ্ন। ডাক্তারি পড়া শেষ করে মাত্র আট মাস হয়েছে বিয়ে করেছেন আল আমিন। এরই মধ্যে আমার ভাই এত বড় দুর্ঘটনার মধ্যে পড়ল। এসব বলে মনিরুল কান্নায় ভেঙে পড়েন।

বার্ন ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন বলেছেন, শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন ১০ জনের কেউই শঙ্কামুক্ত নন। কালকের দুর্ঘটনায় আমাদের এখানে ১১ জন রোগী ছিলেন। এর মধ্যে একজনকে ঢাকা মেডিক্যালে স্থানান্তর করা হয়েছে। কারণ, তিনি দগ্ধ হননি। যে ১০ জন আছেন, তাদের মধ্যে তিনজন আইসিই্উতে, দুজন লাইফ সাপোর্টে, বাকিরা এসডিইউতে ভর্তি আছেন। চিকিৎসাধীন ১০ জনের কারও ৮০ শতাংশ, কারও ৯০ শতাংশ; কারও ৫০ শতাংশ পুড়ে গেছে। এদের সবার শ্বাসনালি পুড়ে যাওয়া তাদের অবস্থা সংকটজনক।