এক কারাগারে ধারণক্ষমতার তিনগুণ বন্দি, শৌচাগার সংকটে ভোগান্তি

কুড়িগ্রাম জেলা কারাগারে ধারণক্ষমতার তিনগুণের বেশি বন্দি রয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে আবাসন ও শৌচাগার সংকটে ধুঁকছে কারাগারটি। সংকট সমাধানে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বারবার লিখিত প্রতিবেদন দিলেও সমাধান মিলছে না। ফলে মানবাধিকার ও কারা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বন্দিরা।

কারা সূত্র জানায়, জেলা কারাগারে চারটি পুরুষ ও দুটি নারী ওয়ার্ড মিলে মোট বন্দি ধারণক্ষমতা ১৬৩। এর মধ্যে পুরুষ বন্দি ধারণক্ষমতা ১৪৫ এবং নারী বন্দি ধারণক্ষমতা ১৮ জনের। কিন্তু ১৯৮৭ সাল থেকে এই কারাগারে ধারণক্ষমতার বেশি বন্দি থাকছেন। বন্দির সংখ্যা বাড়লেও কারাগারের ধারণক্ষমতা বাড়েনি। 

বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) বিকাল পর্যন্ত কারাগারে বন্দি রয়েছেন ৫৩৮ জন, যা ধারণক্ষমতার তিনগুণের বেশি। এর মধ্যে পুরুষ বন্দি ৫১০ এবং নারী ২৮ জন।

একাধিক কারা সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বন্দিদের জন্য নির্ধারিত ওয়ার্ডগুলোতে বর্তমানে ধারণক্ষমতার কয়েকগুণ বেশি বন্দি আছেন। এতে ওয়ার্ডগুলোতে বন্দিদের ন্যূনতম মানবিক পরিবেশ থাকছে না। দিনের বেলায় বন্দিরা ওয়ার্ডের বাইরে ঘোরাফেরা করলেও বিকাল থেকে তাদের ওয়ার্ডে প্রবেশ করতে হয়। অধিক বন্দি থাকায় ওয়ার্ডে শোবার পরিবেশ নেই। গাদাগাদি করে মানবেতর জীবনযাপন করছেন বন্দিরা। গরম মৌসুমে এই সংকট আরও তীব্র হয়ে ওঠে।

এদিকে আবাসনের পাশাপাশি কারাগারে শৌচাগার সংকট তীব্র হয়ে উঠেছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে এক থেকে দেড়শ বন্দির বিপরীতে শৌচাগার রয়েছে একটি। চার ওয়ার্ডের বন্দিদের জন্য শৌচাগার রয়েছে মাত্র ২০টি। ফলে বন্দিরা মানবিক সংকটে ভুগছেন।

সম্প্রতি কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পাওয়া একাধিক ব্যক্তি বলেছেন, কারাগারের ভেতরে থাকার পরিবেশ নেই। ওয়ার্ডগুলোতে শোয়ার পর কেউ পাশে ফিরবে এমন অবস্থা নেই। যারা কারাগারে থাকেন তাদের সবাই তো অপরাধী না। মানুষের জন্য ন্যূনতম যে সুযোগ-সুবিধা থাকার কথা, তার কোনোটি পাওয়া যায় না। গাদাগাদি করে থাকতে হয়। সকাল-বিকাল শৌচাগারে যেতে দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।’

দীর্ঘদিন ধরে আবাসন ও শৌচাগার সংকটের কথা স্বীকার করেছেন কুড়িগ্রাম কারাগারের জেলার আবু ছায়েম। তিনি বলেন, ‘জেলা কারাগারে সবসময় ধারণক্ষমতার বেশি বন্দি থাকেন। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সরেজমিন পরিদর্শন করে সমস্যার বিষয়টি জেনেছেন। বন্দিদের জন্য নতুন ভবন নির্মাণ ও আধুনিকায়নের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মন্তব্যসহ কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এখনও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’

আবাসন ও শৌচাগার সংকট দ্রুত সময়ে নিরসন হবে বলে আশা করছেন জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ। তিনি বলেন, ‘কারাগারের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করেছি আমরা। আশা করছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব সমস্যা সমাধান হবে।’

প্রসঙ্গত, উপ-কারাগার হিসেবে যাত্রা শুরু করা কুড়িগ্রাম কারাগার ১৯৮৭ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি জেলা কারাগারে রূপান্তর করা হয়। প্রায় ১৬ একর জায়গা নিয়ে কারাগারের অবস্থান। তবে অভ্যন্তরীণ আয়তন (মূল কারাগার) ৩.৮৬ একর।