তরুণরাই আবিষ্কার করবে নতুন শওকত ওসমানকে

বরেণ্য কথাসাহিত্যিক শওকত ওসমানশওকত ওসমানের লেখা পড়তে পড়তে নবীন পাঠকদেরও ব্যক্তি ওসমানকে পড়তে ইচ্ছে হবে। এই উভয় পাঠ ও যুগলবন্দি থেকে নতুন প্রজন্ম আবিষ্কার করবে নতুন এক শওকত ওসমানকে। অমর একুশে গ্রন্থমেলার ১৭তম দিনে বুধবার বিকেল ৪টায় মেলার মূলমঞ্চে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন বক্তারা। বিশিষ্ট কথা সাহিত্যিক শওকত ওসমানের জন্মশতবর্ষিকী উপলক্ষ্যে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক শান্তনু কায়সার।
আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন কথাশিল্পী মঈনুল আহসান সাবের, কথাশিল্পী জাকির তালুকদার, লেখক নুরুল করিম নাসিম এবং জয়দুল হোসেন। এতে সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট কথাশিল্পী সেলিনা হোসেন।
শান্তনু কায়সার বলেন, শওকত ওসমানের জন্মশতবর্ষের সূচনা হলো এ বছর, যা পূর্ণ হবে ২০১৭ সালে। জন্মশতবর্ষের সূচনা-স্মরণে আমরা ফিরে তাকাতে চাই এ অসামান্য কথাশিল্পীর জীবন ও কীর্তির দিকে। ক্রীতদাসের হাসি, জননী-এর মতো উপন্যাস, অসাধারণ সব গল্প, নাটক এবং প্রবন্ধ নিবন্ধে তিনি এ অঞ্চলের মানুষের জীবন ও সংগ্রাম ফুটিয়ে তুলেছেন নিপুণ ও দরদী শিল্পীর দক্ষতায়।

আলোচকবৃন্দরা বলেন, শওকত ওসমানকে পাঠের মধ্য দিয়ে বস্তুত তার সময়কেই পাঠ করা হয়। কারণ তার সাহিত্যকর্মে দেশভাগ, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, উদ্বাস্তু সমস্যা, দারিদ্র্য, শোষণ ইত্যাদির চিত্র ফুটে উঠেছে। মহান ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ শওকত ওসমানের জন্য ছিল এক প্রেরণার বিষয়। তাই আমরা তার কাছ থেকে পেয়েছি বায়ান্ন ও একাত্তরের পটভূমিতে বেশ কিছু শিল্পঋদ্ধ গল্প ও উপন্যাস।

সভাপতির বক্তব্যে কথা সাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেন, শওকত ওসমান দেশভাগের শিকার হয়েছেন। কিন্তু কখনও উদ্বাস্তু মানসিকতায় নয় বরং সবসময় স্বাধীন মানুষের সত্তায় ব্যক্তি হিসেবে বেড়ে উঠেছেন, সাহিত্যিক হিসেবে স্বাতন্ত্র্যের স্বাক্ষর রেখেছেন। তার সাহিত্যকর্মকে বুঝতে হলে ব্যক্তি শওকত ওসমানকেও আমাদের অনুধাবনে রাখতে হবে। যে সময় ও সমাজের প্রেক্ষাপটে বাঙালি মুসলমানের মাঝে তিনি ও তার লেখক-প্রজন্ম আধুনিকতার সূত্রপাত করেছেন তাই আমাদের পরবর্তী অগ্রগমনে পালন করেছে দিকনির্দেশকের ভূমিকা। 

এদিকে গ্রন্থমেলা উপলক্ষ্যে সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করে সাংস্কৃতিক সংগঠন আরশিনগর বাউল সংঘ। নৃত্য পরিবেশন করে নৃত্যালয়। এছাড়া সংগীত পরিবেশন করেন কণ্ঠশিল্পী সাইদুর রহমান বয়াতী, হাসান মাহমুদ, বিমান চন্দ্র বিশ্বাস, অনিমা মুক্তি গোমেজ, টুটুল বাউল, সেলিনা আলম, আবুল কালাম আজাদ, আফরোজা খান মিতা, সাজেদা ইসলাম ফাতেমী, শান্তা সরকার, মো. মুরাদ হোসেন এবং মোহাম্মদ মারুফ হোসেন।

মেলায় নতুন বই

অমর একুশে গ্রন্থমেলার ১৭তম দিনে নতুন বই এসেছে ১৪০টি। এরমধ্যে গল্প ১৮টি, উপন্যাস ১৯টি, প্রবন্ধ ৬টি, কবিতা ৪৭টি, গবেষণা ১টি, ছড়া ৩টি, শিশুসাহিত্য ৫টি, জীবনী ৩টি, রচনাবলী ১টি,      মুক্তিযুদ্ধ ১২টি, বিজ্ঞান ৩টি, ভ্রমণ ৩টি, ইতিহাস ৩টি, স্বাস্থ্য ১টি, অনুবাদ ১টি ও অন্যান্য প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ১৪টি।

১৮তম দিনে যা থাকছে

আগামীকাল ৬ ফাল্গুন গ্রন্থমেলার ১৮তম দিন বিকেল ৪টায় মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে আহসান হাবীব জন্মশতবর্ষিকী শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন তারেক রেজা। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন হাবীবুল্লাহ সিরাজী, অসীম সাহা, নাসির আহমেদ এবং অনু হোসেন। সভাপতিত্ব করবেন বিশিষ্ট লেখক সৈয়দ আবুল মকসুদ।

এছাড়া প্রতিদিনের মত সন্ধ্যায় মূলমঞ্চ আর মুক্তমঞ্চে থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও নাটক।

/এসআর/এসএম/