রমজানের অপেক্ষায় আতর-টুপি-জায়নামাজ ব্যবসায়ীরা

পবিত্র রমজানের অপেক্ষায় থাকেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। এসময়ে ধর্ম চর্চায় বেশি মনোযোগী হতে দেখা যায় সবাইকে। একই সাথে বেড়ে যায় আতর, সুরমা, তসবিহ, জায়নামাজের মতো উপকরণগুলোর কেনা-বেচা। কিন্তু বিগত বছরগুলোর তুলনায় এ বছর এখনও জমে উঠেনি এসব পণ্যের ব্যবসা—এমনই দাবি করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ ফটকের সামনে আতর, টুপি, জায়নামাজের ভাসমান বাজার সরেজমিনে ঘুরে জানা যায় এ তথ্য।image_6487327(1)

আতর বিক্রেতা ফাহিম মুনতাসীর সিয়াম জানান, এটা আমার বাবার ব্যবসা আর আমি এখানে আছি ৫ থেকে ৭ বছর ধরে। সকাল আটটা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত আমার দোকান খোলা থাকে। আমি পাইকারি সেলার, ইম্পোর্টারদের কাছ থেকে পণ্য এনে এখানে খুচরা বিক্রি করি। আতর, তসবিহ, সুরমা এই তিনটা পণ্য আমি বিক্রি করি। দুবাই, ভারত, সৌদি আরব আর বাংলাদেশ—এই চার দেশের আতরই বেশি আছে আমার কাছে, এগুলা চলেও বেশি।

ব্যবসার পরিস্থিতি নিয়ে তিনি জানান, এখন মানুষের পকেটে আগের তুলনায় টাকা কম, তাই আমার বেচা-বিক্রিও কম। আমার গড় বিক্রি প্রতিদিন এক হাজার টাকার মতো। কিন্তু আমাদের এখানে রমজান মাস এলে মানুষের সুন্নত চর্চার প্রতি আগ্রহটা একটু বেড়ে যায়। তখন তারা আতর, তসবি, সুরমা ইত্যাদি কেনেন বেশি। তাই আশা করি ব্যবসা সামনে ভালো হবে। তবে রমজানের শুরু আর শেষে বেশি ব্যবসা হয় না, ব্যবসা হয় রমজানের মাঝামাঝি সময়ে।image_6487327(2)

আতর-তসবিহ বিক্রেতা বাপ্পী জানান, দোকানে তসবিহ, আতর, সুরমা—এগুলো বিক্রি করি। পাইকারের কাছে অর্ডার দিলে ওনারা এসে দিয়ে যান। আমার এইখানে তসবিহর দাম ৫০ থেকে শুরু করে ২০০ টাকা পর্যন্ত। বেচা-বিক্রি মোটামুটি হয়। কখনও ভালো কখনও খারাপ। গড়ে প্রতিদিন এক হাজার টাকা বিক্রি হয়।

আতর কিনতে আসা তরুণ মো. সোয়াইব মিজি বলেন,  আমি নিয়মিত আতর ব্যবহার করি, শুধু রোজা আসছে বলে না। সুগন্ধির একটা ব্যাপার তো আছে। আসলে মার্কেটে যেসব পারফিউম পাওয়া যায় সেগুলো আমি ব্যবহার করি না। ওগুলোতে অ্যালকোহল থাকে। যেহেতু আমি সবসময় নামাজ পড়ি তাই আতর দেই।image_6487327(3)

একটি আতরের শিশি দেখিয়ে তিনি বলেন, আমি এই একটা ফ্লেভার এবং ব্রেন্ডের আতরই সবসময় ব্যবহার করি। আগে কিনতাম ১০০ টাকা করে। তারপর হলো ১৩০ টাকা আর আজকে কিনলাম ১৫০ টাকা দিয়ে। আসলে সব কিছুরই দাম বাড়ছে। দোকানদাররা আর কী করবে, তাই কোনও দামাদামি না করেই নিয়ে নিলাম।

টুপি বিক্রেতা মো. নাইম জানান, বাবার সূত্রে পাওয়া এই টুপির ব্যবসা করছেন ২০ বছর ধরে। বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটে তার টুপির দোকানটি। জালি টুপি থেকে শুরু করে ওমান-পাকিস্তানের টুপিও আছে তার কাছে জানান তিনি। সর্বনিম্ন ৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত।

তিনি বলেন, বেচা-বিক্রি আমার ভালোই হচ্ছে। আর কয়দিন পর রোজা আসছে তখন আরও ভালো ব্যবসা হবে। রোজার মাসে মানুষ নামাজ পড়ে বেশি, তাই বিক্রিও বেশি হয়। আবার অনেকে বাড়িতে চলে যায়,  যাওয়ার সময় জায়নামাজ, আতর তসবি—এগুলোর সাথে টুপিও কিনে নিয়ে যায়। দৈনিক আমার দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা বিক্রি হয়, তবে শুক্রবারে ৫০০০ টাকার মতোও বিক্রি হয়।a6

রিজু মিয়া বলেন, টুপিটা কিনলাম সামনে রমজান মাস আসছে তাই। নিয়ত করছি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়বো। রমজান শেষেও নামাজ পড়ার চেষ্টা করবো, তাই আগে কিনে রাখলাম।

জায়নামাজ বিক্রেতা মিরাজ খান বলেন, আমার এখানে সব জায়নামাজ ১০০ টাকা করে বিক্রি করি। তিন বছর ধরে আমি বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটের বাইরে ব্যবসা করছি। আমার গড়ে প্রতিদিন বিক্রি হয় আড়াই হাজার টাকা। আমার বেচা-বিক্রি আগের মতোই আছে। কয়েকদিন পর রমজান শুধু এ কারণেই যে বিক্রি বাড়ছে তা না। এখনও কিছু বোঝা যাচ্ছে না। রোজা আসলে বোঝা যাবে। আশা করি বিক্রি বাড়বো।

আড়াই বছর ধরে জায়নামাজের ব্যবসা করছেন মো. আশিকুর রহমান। জায়নামাজের সাথে হিজাব, পাগড়ি, রুমালও বিক্রি করেন তিনি। সাড়ে তিনশো থেকে শুরু করে পাঁচ হাজার টাকা দামের পর্যন্ত জায়নামাজ আছে তার কাছে। নিজের ব্যবসার কথা নিয়ে তিনি বলেন, ব্যবসা মোটামুটি চলছে। আগের তুলনায় অনেক খারাপ। কারণ বর্তমানে জিনিসের রেট অনেক বেড়ে গেছে। গতবছর বিক্রি বেশি ছিল। জিনিসপত্রের দাম কম ছিল, আমরা ভালো সেল করতে পারছি। এই বছর দাম বেড়ে যাওয়ায় আমরা বিক্রি করতে হিমশিম খাচ্ছি। দেখা যাক— রোজা আসলে কী হয়।