পাহাড় ছেড়েছে ‘হিন্দাল শারক্বিয়া’র আমিরসহ শীর্ষ ৩ জঙ্গি

জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়া’র আমির আনিসুর রহমান ওরফে মাহমুদ, দাওয়াতি শাখার প্রধান মাইমুন এবং অর্থ ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান রাকিব এখনও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধরাছোঁয়ার বাইরে। সংগঠনের আমিরসহ শীর্ষস্থানীয় এই তিন নেতা পাহাড়ি এলাকা ছেড়ে সমতলে আশ্রয় নিয়েছে। দেশের মধ্যেই তারা কোথাও আত্মগোপনে থাকতে পারে বলে ধারণা করছে র‌্যাব। তাদের গ্রেফতারে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাহিনীর অভিযান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, ২০২২ সালের ২০ অক্টোবর থেকে রাঙামাটির বিলাইছড়ি ও বান্দরবানের বোয়িংছড়ি, থানচি, রেমাক্রি, কক্সবাজারের কুতুপালং, চট্টগ্রামের পটিয়াসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করে জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়ার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাসহ ৫৯ জনকে এ পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়েছে। যাদের মধ্যে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে ঘর ছাড়া তরুণ রয়েছে ১৫ জন। এছাড়া সংগঠনটিকে পাহাড়ে থাকা খাওয়া প্রশিক্ষণ এবং জঙ্গি কার্যক্রমের সহায়তার অভিযোগে বান্দরবানের বম জাতিগোষ্ঠীর গড়া নতুন সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) ১৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

র‌্যাবের তথ্য অনুযায়ী, জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে ঘর ছাড়া তরুণদের মধ্যে আরও ৪০ জন এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। এরই মধ্যে তারা বিভিন্ন ধরনের সামরিক প্রশিক্ষণও নিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের পর জঙ্গি সংগঠনের ক্যাম্প থেকে পালিয়ে তারা বিভিন্ন পাহাড়ে অবস্থান নিয়েছে। আবার অনেকে পাহাড় থেকে সমতলের দিকে এসেছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েক ধাপে সামরিক প্রশিক্ষণ পাওয়ায় সেই তরুণরা এখন দক্ষ হয়ে উঠেছে। যেকোনও জায়গায় যেকোনও পরিস্থিতিতে যেকোনও ধরনের হামলা করার সক্ষমতা তাদের রয়েছে। তবে পালিয়ে থেকে জঙ্গি সংগঠনগুলোর নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সব জায়গায় বাড়ানো হয়েছে নজরদারি।

র‌্যাবের অভিযান শুরু হলে সেই তরুণরা সংগঠনের আমির মাহমুদের নির্দেশে এবং নিজেদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য ‘রামজুদান’ থেকে দুটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে প্রথমে সাইজামপাড়া, মুন্নুয়ামপাড়া, রোয়াংছড়ি, পাইক্ষংপাড়া, তেলাং পাহাড়সহ পার্বত্য অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করে। পরবর্তী সময়ে পাইন্দু খাল, ক্যাপলংপাড়া, দুর্নিবারপাড়া, রামধারপাড়া, ওয়াই জংশন হিল, ১৬ মাইল বাজার ও ব্রিকফিল্ড বাজার এলাকায় আত্মগোপনে চলে যায়।

পাহাড়ে একটি জঙ্গি আস্তানা। যাতে অভিযান চালিয়েছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

র‌্যাব বলছে, সংগঠনের আমির আনিসুর রহমান ওরফে মাহমুদের সঙ্গে কেএনএফ প্রধান নাথান বমের সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় সংগঠনের উপদেষ্টা শামীম মাহফুজের মাধ্যমে। পরবর্তী সময়ে নাথান বমের সঙ্গে তাদের অর্থের বিনিময়ে চুক্তি হয়। এরপর তারা পাহাড়ে আশ্রয়, অস্ত্র ও রসদ সরবরাহ এবং সশস্ত্র প্রশিক্ষণ দেয়। বিভিন্ন সময় কেএনএফ-এর প্রধান নাথান বম, বাংচুং, রামমোয়, ডিকলিয়ান, পাহল ও কাকুলিসহ অনেকেই প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে আসতো। 

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জঙ্গি সংগঠনের আমিরসহ শীর্ষ নেতারা সমতলে থেকে টাকা পয়সার জোগান দিচ্ছিল পাহাড়ে। তারা এক মাস কিংবা দেড় মাস পর পর পাহাড়ে যেতো। গিয়ে তিন চারদিন থাকতো। যারা জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে পাহাড়ে গিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছে তারা এখনও পাহাড়ি এলাকায় অবস্থান করছে। এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে পালিয়ে রয়েছে, যদিও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান চলমান রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘যারা আত্মগোপনে রয়েছে তাদের খোঁজা হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, তারা দেশের অভ্যন্তরেই কোথাও লুকিয়ে রয়েছে।’