ডিক্যাবের রজতজয়ন্তী

‘জ্ঞান-নির্ভর সমাজ গড়তে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন প্রয়োজন’

জ্ঞান-নির্ভর সমাজ গড়ে তুলতে হলে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। এ বিষয়ে সাংবাদিকরা বড় ভূমিকা রাখতে পারে। রবিবার (১৯ মার্চ) ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ডিক্যাব) এর রজতজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত এক সেমিনারে বক্তারা একথা বলেন।

বক্তারা বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সব সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে কাজ করেছে এবং ভবিষ্যতেও করবে। একইসঙ্গে তারা গবেষণাধর্মী লেখার ওপর জোর দেন।

উল্লেখ্য, ২৫ বছর আগে ১২ জন মিলে সাংবাদিক ডিক্যাব প্রতিষ্ঠা করেন। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী তিন জন প্রতিষ্ঠাতা  সদস্য— শ্যামল দত্ত, আনিস আলমগীর এবং মোস্তফা কামালকে সম্মাননা জানায় ডিক্যাব। একই সঙ্গে সব প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়। রজতজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে বাংলা ট্রিবিউনের বিশেষ প্রতিনিধি শেখ শাহরিয়ার জামান এবং ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের কূটনৈতিক প্রতিনিধি মীর মোস্তাফিজুর রহমান ‘রোল অব মিডিয়া অন বাংলাদেশ ফরেন পলিসি’ বিষয়ে দুটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

অনুষ্ঠানে ডিক্যাব সভাপতি রেজাউল করিম লোটাস এবং সাধারণ সম্পাদক ইমরুল কায়েস বক্তব্য রাখেন।

ডিক্যাবের ২৫ বছরপূর্তি উপলক্ষে অভিনন্দন জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন।

এক ভিডিও-বার্তায় তিনি বলেন, ‘আমি বিশেষ করে তাদেরকে ধন্যবাদ জানাতে চাই, যারা ২৫ বছর আগে ডিক্যাব প্রতিষ্ঠা করেছিল।’

তিনি বলেন, ‘আমি ডিক্যাব সদস্যদের ধন্যবাদ জানাতে চাই। কারণ, তারা বিভিন্ন সময়ে আমাদেরকে প্রশ্ন করে থাকেন, যা আমাদেরকে সাহায্য করে। যদি কোনও কিছু ভুল হয়ে থাকে, সেটি তারা তুলে ধরেন এবং আমরা এই প্রক্রিয়ায়  নিজেদেরকে শুধরে নেই।’

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম জানান,  বিশ্লেষণধর্মী এবং গবেষণামূলক লেখার অভাব আছে বাংলাদেশে।

তিনি বলেন, ‘আপনারা রিপোর্ট লেখায় ব্যস্ত থাকেন এবং আমরা আমাদের কাজে ব্যস্ত থাকি। কিন্তু এই লম্বা যাত্রাপথের কোনায় কোনায় যে গল্পগুলো আছে, সেগুলো যেমন অম্লমধুর সম্পর্ক বা মিষ্টি সম্পর্ক— যেভাবেই বলি না কেন, এগুলো মাঝে মাঝে বলা দরকার।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অনেক আগে সাংবাদিকতা করতেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু খুব অল্প সময়ের জন্য ১৯৪৫-৪৬ সালে সাপ্তাহিক মিল্লাতে কাজ করতেন এবং ভিন্ন নামে লিখতেন তিনি।’

প্রতিমন্ত্রী জানান, এটি একটি যাত্রা, যেখানে আমরা একসঙ্গে আছি। আশা করি, সামনের দিনগুলোতে এটি অব্যাহত রাখতে পারবো।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘আরও সুযোগ আছে যুক্ত হওয়ার ডিক্যাবের সঙ্গে।’

তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন দেশের সঙ্গে উন্নয়ন সহযোগিতাকে আমরা সমন্বিত অংশীদারত্বে নিয়ে যাচ্ছি। আমাদের অনেক বন্ধু দেশের সঙ্গে কৌশলগত সহযোগিতা করতে চাইছি। এখন আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হচ্ছে। আমাদের প্রতি বন্ধুত্বের পরিবর্তনটাও দৃশ্যমান হচ্ছে।’

ভোরের কাগজের সম্পাদক এবং জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত পুরনো দিনের স্মৃতি স্মরণ করে জানান,  আমার এখনও মনে হয় যে, আমি একজন কূটনৈতিক প্রতিবেদক।

প্রতিটি সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আগে পররাষ্ট্র বিষয়ে যে উত্তেজনা ছিল সেটি এখন অনেক কম।’

সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেন, আমাদেরকে নিজেদের ন্যারেটিভ তৈরি করতে হবে। আজকে এক কথা এবং কালকে আরেক কথা বললে পররাষ্ট্র নীতি বাস্তবায়নে সুফল আসবে না।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক লাইলুফার ইয়াসমিন বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন আর দারিদ্র্যপিড়ীত দেশ নেই। এখনকার সম্ভাবনার কথা মিডিয়ায় আরও বেশি করে তুলে ধরতে হবে।’