সিরিয়ালে আটকে আছে সাংবাদিক শারমিনের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন

সাংবাদিক শবনম শারমিনের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় রহস্য উদ্ঘাটনে পুলিশের পাশাপাশি ছায়া তদন্ত করছে র্যা ব এবং পিবিআই। এদিকে আলামত সংগ্রহ করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে সিআইডি। তবে ঘটনার আড়াই মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও মৃত্যুর রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারেনি কোনও সংস্থাই।

তদন্তকারী কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগে ময়নাতদন্তের ব্যাপক চাপ থাকে। সে কারণে সাংবাদিক শারমিনের মরদেহের ময়নাতদন্তের বিষয়টিও বিলম্বিত হচ্ছে। সিরিয়ালে এখনও তার নাম না আসায় বাকি সব তদন্তও ঢিমেতালে চলছে।

জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রাজধানীর হাতিরঝিল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ফায়সাল মিয়া মঙ্গলবার (২১ মার্চ) বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা ময়নাতদন্তের রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছি। রিপোর্ট হাতে এলে ঘটনার প্রকৃত কারণ জানাতে পারবো। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে দফায় দফায় যোগাযোগ করা হচ্ছে।’

ময়নাতদন্ত রিপোর্টের বিষয়ে জানতে চাইলে ফায়সাল মিয়া বলেন, ‘ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগ থেকে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট সংগ্রহ করতে হয়। সেখানে আমরা একাধিকবার যোগাযোগ করেছি। তারা জানিয়েছেন, অনেকগুলো রিপোর্ট জমা হওয়ায় আগেরগুলো কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত অন্যগুলো দেওয়া সম্ভব নয়। সিরিয়াল এলে রিপোর্ট দেওয়া হবে।’

এ ঘটনা নিয়ে এর আগে এই তদন্ত কর্মকর্তা বলেছিলেন, ‘ফেসবুক-মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপসহ মৃত্যুর আলামত সংগ্রহ করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে সিআইডি। পুলিশের পাশাপাশি র্যা ব এবং পিবিআই মামলার ছায়া তদন্ত করছে।’

নিহত শারমিনের ছোট ভাই অমর রশিদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এক মাস আগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতিতে বোনের মগবাজারের বাসা থেকে সব মালামাল নিয়ে এসেছি। আমরা তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করছি। উনি আমাদের বলেছেন ময়নাতদন্তের রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত কিছু বলা যাবে না। এ ছাড়া আরও বলেছেন, আমরা যেন রিপোর্টের জন্য মেডিক্যালে যোগাযোগ করি।’

অমর রশিদ অভিযোগ করে বলেন, ‘মামলার আসামি আগাম জামিন নিয়ে প্রকাশ্যে চলাফেরা করছে। ফেসবুকে বিভিন্ন স্ট্যাটাস দিয়ে বেড়াচ্ছে। আমি জেনেছি ইতোমধ্যে তার জামিনের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে।’

গত ২৭ ডিসেম্বর রাতে রাজধানীর মগবাজারের একটি বাসার পঞ্চম তলা থেকে সাংবাদিক শবনম শারমিনের মরদেহ উদ্ধার করে হাতিরঝিল থানা পুলিশ। পুলিশের তখন ধারণা করে জানিয়েছে, মরদেহ উদ্ধারের অন্তত চার-পাঁচ দিন আগে শবনব শারমিনের মৃত্যু হয়।

এ ঘটনায় গত ২৮ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে মামলা করেন শবনম শারমিনের বড় বোন শবনম পারভিন। মামলায় শারমিনের স্বামী এশিয়ান টিভির সাবেক অপরাধবিষয়ক প্রতিবেদক সাইদুল ইসলামকে আসামি করা হয়। ঘটনার পর থেকে সাইদুল ইসলাম পলাতক থাকলেও এখন আদালত থেকে জামিন নিয়ে প্রকাশ্যে চলাচল করছে।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গত ১৮ ডিসেম্বর শবনম তার বড় বোনকে জানান, অফিসের কাজে তিনি ঢাকার বাইরে আছেন। ফিরতে বেশ কয়েক দিন দেরি হবে। পরে ২৩ ডিসেম্বর রাতে শবনমের মোবাইল ফোনে কল করা হলেও কেউ রিসিভ করেনি। বোনের স্বামী সাইদুলের কাছে কারণ জানতে চাওয়া হলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। পরে তারা অনেক চেষ্টার পর বাসার ঠিকানা পেয়ে সেখানে গিয়ে ফ্ল্যাটের দরজা বন্ধ দেখতে পান। এ সময় তারা বাড়ির মালিক ও পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ এসে শবনমকে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলতে দেখে।

উল্লেখ্য, নিহত সাংবাদিক শবনম শারমিন অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্য রিপোর্ট ডট লাইভে অ্যাসাইনমেন্ট এডিটর হিসেবে কাজ করতেন।