দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার মধ্য দিয়ে ১১ পেরিয়ে ১২ বছরে পা রাখলো দেশের জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউন। ২০১৪ সালের এই দিনে যাত্রা শুরু হয় প্রতিষ্ঠানটি। এক যুগের পথচলায় দায়িত্বশীলতার সঙ্গে সাংবাদিকতা করাকে যেমন গুরুত্ব দিয়েছে, তেমনই সংবাদমাধ্যমটি দায়বদ্ধতার প্রমাণ রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে। ‘সঠিক সময়ে সঠিক খবর’ দেওয়ার মূলমন্ত্রে পাঠকদের আস্থার জায়গাটিও ধরে রাখতে পেরেছে বাংলা ট্রিবিউন। নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই এটি পেশাদারত্ব বজায় রেখে এগিয়ে চলছে।
এক যুগ আগে যাত্রা শুরু করা বাংলা ট্রিবিউন পাঠকের কাছে দায়বদ্ধ থেকে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে সংবাদ পরিবেশন করে যাচ্ছে। সাংবাদিকতার নীতি মেনে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশের অঙ্গীকার নিয়ে এগিয়ে চলছে বাংলা ট্রিবিউন। দীর্ঘ এই পথচলায় বাংলা ট্রিবিউন সঙ্গে পেয়েছে বাংলাদেশ ও বিশ্বের প্রায় ৩০ কোটি বাংলাভাষীকে। বাংলা ট্রিবিউনের সবচেয়ে বড় শক্তি তার পাঠক ও শুভানুধ্যায়ীরা। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এই বিশেষ দিনে বাংলা ট্রিবিউন তার পাঠক, বিজ্ঞাপনদাতা ও শুভানুধ্যায়ীদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছে।
ডিজিটাল গণমাধ্যমের উদীয়মান এই সময়ে বাংলা ট্রিবিউন জন্মলগ্ন থেকেই প্রচলিত অনলাইন পোর্টালের বাইরে নতুন কিছু করতে চেয়েছে এবং তার দৃষ্টান্তও দেখিয়েছে। সময়ের দাবির সঙ্গে মাল্টিমিডিয়ার পরিচ্ছন্ন ব্যবহার দর্শকদের আকাঙ্ক্ষার জায়গাটি আরও বাড়িয়েছে। যার ফলে পাঠক নিজেও তার মতামত দিয়ে এই যাত্রার অংশ হয়ে উঠতে চান। দর্শক ও পাঠকের সব চাহিদা পূরণ করতেই বাংলা ট্রিবিউন প্রয়োজনীয় অডিও-ভিডিও উপস্থাপনের পাশাপাশি নিয়মিত একাধিক টকশো, সংবাদের বিশ্লেষণধর্মী লেখা ও অনুষ্ঠান উপস্থাপন করে থাকে। যেকোনও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা প্রতিদিন সরাসরি সম্প্রচার করে আসছে বাংলা ট্রিবিউন।
‘সঠিক সময়ে সঠিক খবর’ স্লোগানে উজ্জীবিত বাংলা ট্রিবিউন দ্রুততার সঙ্গে সংবাদ পরিবেশনের পাশাপাশি সঠিক তথ্য পরিবেশনের চ্যালেঞ্জ বাস্তবায়নে কাজ করে চলেছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলা ট্রিবিউনের সবচেয়ে বড় শক্তি তার পাঠক ও শুভানুধ্যায়ীরা।
বাংলা ট্রিবিউনের প্রকাশক কাজী আনিস আহমেদ বলেন, এক যুগ একটি গণমাধ্যমের জন্য কম সময় নয়। সত্যিই আমি আনন্দিত যে সবার নিরলস পরিশ্রমের ভেতর দিয়ে বাংলা ট্রিবিউন এক যুগে পদার্কপরেছে। আমি অবশ্যই সবার সুস্থতা ও নিরাপদ জীবন কামনা করি, যেন আরও দীর্ঘপথ আমরা পাড়ি দিতে পারি।
তিনি আরও বলেন, সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশই বাংলা ট্রিবিউনের প্রধান শক্তি ছিল এবং থাকবে। পাঠকের চাহিদা ও তাদের আকাঙ্ক্ষার দিকে আরও বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। গণমাধ্যম বরাবরের মতোই সংকটের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। সাংবাদিকদের কাজই হচ্ছে সংকট মোকাবিলা করে এগিয়ে যাওয়া।
একইসঙ্গে প্রকাশক কাজী আনিস আহমেদ বিজ্ঞাপনদাতাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জই হলো গণমাধ্যমের প্রধান সংকট। সেটি মোকাবিলা করতে আপনারা সবসময় আমাদের পাশে ছিলেন এবং ভবিষ্যতেও থাকবেন, এই আশা করি। আপনাদের প্রতি বাংলা ট্রিবিউন সবসময়ই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে।
বাংলা ট্রিবিউনের সম্পাদক জুলফিকার রাসেল তার সহকর্মীদের পরিশ্রমকে প্রাধান্য দিয়ে বলেছেন, বাংলা ট্রিবিউন এক যুগে পদার্পণ করেছে। এটি সত্যিই অনেক আনন্দের ও গৌরবের। গণমাধ্যম হিসেবে আমরা এখন অনেক পরিণত। তবে এই দীর্ঘ পথচলায় সাবেক ও বর্তমান সহকর্মীদের পরিশ্রমই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তাদের শ্রম ও মেধার ফসল আজকের বাংলা ট্রিবিউন।
তিনি আরও জানান, বাংলাদেশের গণমাধ্যমের ইতিহাস সংকটে পূর্ণ। সব সরকারের আমলেই গণমাধ্যমকে কঠিন সময় পার করতে হয়েছে। এখন এক নতুন বাস্তবতায় এসে আমরা দাঁড়িয়েছি— যখন বলা হচ্ছে, গণমাধ্যম বাংলাদেশে কোনও ভূমিকা রাখতে পারেনি। এটিকে আমি অর্ধসত্য হিসেবে মনে করি। বাংলাদেশের গণমাধ্যম বিরুদ্ধ স্রোতের ভেতর দিয়েই এগিয়েছে, এখনও সেভাবেই যাচ্ছে। যারা গণমাধ্যমকে গণবিরোধী বানাতে চান, তাদের বলতে চাই, বিগত সময়ে গণমাধ্যম কি দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশ করেনি? গণমাধ্যমে প্রচারের কারণে বড় বড় মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা কি চাপে ছিলেন না? হ্যাঁ, হয়তো শতভাগ করা সম্ভব হয়নি। কেন সম্ভব হয়নি এসব কিছু নিয়ে এখন আলোচনা হচ্ছে। যেটি অবশ্যই ভালো দিক। এখন আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। যে নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতা আমাদের সামনে হাজির হয়েছে—সেখান থেকে গণমাধ্যমের হাতকড়াটি ভেঙে যাবে কিনা, সেটিও দেখতে হবে। অন্তত এখনও গণমাধ্যম তার সংবাদ প্রকাশে ভয়কে কাটিয়ে উঠতে পারেনি। আগের সময় রাষ্ট্রীয় যন্ত্র ব্যবহার করে গণমাধ্যমকে চাপে রাখা হতো। এখন রাষ্ট্রের বাইরের নানা ব্যক্তি কিংবা গোষ্ঠী গণমাধ্যমে ভয়ের চর্চা চালিয়ে যাচ্ছে। রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ হয়তো পুরোপুরি নেই, কিন্তু একদমই নেই, সেটিও কি নিশ্চিত করে বলা যায়?
তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী গণমাধ্যমকে রাষ্ট্রের সঙ্গে লড়াই করেই কাজ করতে হয়। বাংলাদেশ তো বিশ্বের বাইরের কোনও দেশ নয়। যেসব দেশ ভালো করছে, তারা কেন ভালো করছে? কারণ, সেসব দেশে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক চর্চা বিদ্যমান আছে। আমরা বরাবরই একটি নাজুক গণতান্ত্রিক পদ্ধতির ভেতর দিয়ে যাচ্ছি। সামনে গণতন্ত্র ফিরলে গণমাধ্যম একটি নতুন দিগন্তের সন্ধান পাবে—এই আশা ও স্বপ্ন দেখা ছাড়া আমাদের কোনও উপায়ও নেই।
জুলফিকার রাসেল বাংলা ট্রিবিউনের পাঠক ও বিজ্ঞাপনদাতাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, আমাদের একমাত্র শক্তি পাঠক। বাংলা ট্রিবিউন একমাত্র পাঠকদের কাছেই জবাবদিহি করবে। কারণ তাদের কারণেই আমরা টিকে আছি। তাদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। একইসঙ্গে বিজ্ঞাপনদাতারা আমাদের এগিয়ে যাওয়ার শক্তি। তাদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা ও শুভেচ্ছা রইলো।