ঝুলে আছে দুদকের ৯৫৯৩ মামলা

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা ৯ হাজার ৫৯৩টি মামলা ঝুলে আছে বিচারের অপেক্ষায়। শুনানি হয়, সাক্ষ্য গ্রহণ হয়, কিন্তু বছর শেষে মামলার নিষ্পত্তি হয় যৎসামান্য। এতে মামলা নিষ্পত্তির চেয়ে বাড়ে মামলার সংখ্যা।

দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগে দায়ের হওয়া ফৌজদারি, রিট ও আপিল মামলা বিচারাধীন আছে দুই হাজার ৯৩৮টি এবং বিচারিক আদালত বা অধস্তন আদালতে বিচারাধীন মামলা রয়েছে ছয় হাজার ৬৫৫টি। এর মধ্যে আবার উচ্চ আদালতের আদেশে স্থগিত আছে ৪১৯টি মামলা।

যদিও দুদকের এসব মামলা পরিচালনার জন্য দুদকের পক্ষ থেকে ২৬ জন আইনজীবী নিয়োজিত রয়েছেন।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২ সালে বিশেষ জজ আদালতে ৩৪৬টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। যার মধ্যে ৩০৭টি দুদকের করা মামলা। ৩৯টি মামলা বিলুপ্ত দুর্নীতি দমন ব্যুরোর। বিশেষ জজ আদালতে বিচারাধীন ছয় হাজার ৬৫৫টি মামলার মধ্যে ৪১৯টি মামলা উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত আছে।

একই বছর মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে ৩৪৬টি। এর মধ্যে ২১১টি মামলায় আসামিদের বিভিন্ন দণ্ড দেওয়া হয়েছে। খালাস পেয়েছে ১২৫ জন আসামি।

দুদক ও আদালত সূত্রে জানা যায়, জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন, আয়কর ফাঁকি ও দুর্নীতি লুকাতে সম্পদের তথ্যে গরমিল, ঘুষ গ্রহণ, সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, কেনাকাটায় দুর্নীতি ও অর্থ পাচারসহ নানা অভিযোগে রাজনীতিক, ব্যবসায়ী, বর্তমান ও সাবেক সরকারি কর্মকর্তা এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এসব মামলা করে।

মামলা করার পর বিবাদী পক্ষ আইনি প্রতিকার পেতে বিচারিক আদালতসহ উচ্চ আদালতে যায়। কোনও ব্যক্তির সম্পদের হিসাব চাইলে বিবাদী পক্ষ উচ্চ আদালতে দুদকের সংশ্লিষ্ট নোটিশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিটও করে। যে কারণে দুদকের বিচারাধীন মামলার সংখ্যা বাড়ছে।

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে রয়েছে আরও ৬২৭টি মামলা। অধস্তন, হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগে সর্বমোট স্থগিত মামলা রয়েছে ৮৫২টি।

বিভিন্ন সময়ে করা মামলায় দুদক বিগত বছর ৫৮৫ কোটি ৯২ লাখ ৫৮ হাজার ১৫৬ টাকার সম্পদ বাজেয়াপ্ত করেছে। বিভিন্ন ব্যাংকে এক হাজার ৪৪৮টি ব্যাংক হিসাব ও ১১টি এফডিআর থেকে ২২৪ কোটি ৭৯ লাখ ৭৫ হাজার ১৬৬ টাকা অবরুদ্ধ করেছে। ২০২২ সালে দুই হাজার ৬৩২ কোটি ৪১ লাখ ৪৩ হাজার ৭৮৩ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে ১৩ কোটি ৯৬ লাখ ১৯ হাজার ১৬৭ টাকা।

মামলা প্রসঙ্গে দুদকের কমিশনার মো. জহুরুল হক বলেন, দুদকের মামলাগুলোতে সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে রাষ্ট্রকে অর্থ আদায় করে দেওয়ার মতো ভালো কাজ করেছে দুদক। কাউকে জেল খাটানোর চেয়ে জরিমানা আদায় করা লাভজনক। দুদক সেই কাজটিই করছে।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ মামলা প্রসঙ্গে বলেন, আদালতগুলোয় দুর্নীতির মামলা প্রমাণে আগের বছরগুলোর তুলনায় আমরা অনেক এগিয়েছি। এফআরটি বা ফাইনাল রিপোর্ট কমেছে। যে কারণে মামলার সংখ্যা বাড়ছে।