সংবাদকর্মীদের সঙ্গে প্রতারণা মেনে নেওয়া যায় না: আদালত

সংবাদকর্মীরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে ও ঝুঁকি নিয়ে বিভিন্ন ধরনের সংবাদ সংগ্রহ করে রাষ্ট্রকে প্রতিনিয়ত সহায়তা করে চলেছেন। এই পেশায় নিয়োজিত মফস্বল শহরের পেশাজীবীরা অনেক ক্ষেত্রে স্বল্প পারিশ্রমিকে কাজ করে থাকেন। অনেক ক্ষেত্রেই তারা রাষ্ট্রের প্রতি দায়িত্ববোধ ও পেশার প্রতি ভালোবাসা থেকে এই পেশায় নিয়োজিত থাকে।

এ অবস্থায় জয়যাত্রা টিভি সম্প্রচারের অনুমোদন ছাড়াই নিজেদের আইপি টিভি বা স্যাটেলাইট টিভি হিসেবে উল্লেখ করে সংবাদকর্মী নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রচার ও সংবাদকর্মী নিয়োগ করে। এ জন্য তাদের কাছ থেকে জামানত ও মাসিক চাঁদা গ্রহণ করার মাধ্যমে তাদের সঙ্গে যে আচরণ করেছে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। সমাজ ও রাষ্ট্রের পরম বন্ধুর মতো কাজ করে চলা সংবাদকর্মীদের সঙ্গে জ্ঞানসারে এবং একই অভিপ্রায়ে প্রতারণা করার কারণে হেলেনা জাহাঙ্গীরসহ পাঁচজনকে শাস্তি প্রদান করা আবশ্যক বলে মনে করেন আদালত।

বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) জয়যাত্রা টিভির চেয়ারম্যান হেলেনা জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় ঘোষণা করেছেন আদালত। এ সময় রায়ের পর্যবেক্ষণে এসব কথা উল্লেখ করেন বিচারক।

এ রায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত অন্য আসামিরা হলেন জয়যাত্রা টিভির জেনারেল ম্যানেজার হাজেরা, প্রধান বার্তা সম্পাদক কামরুজ্জামান আরিফ, কো-অর্ডিনেটর সানাউল্ল্যাহ নূরী ও স্টাফ রিপোর্টার মাহফুজ শাহরিয়ার।

এর আগে সোমবার (২০ মার্চ) ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন আসামি হেলেনা জাহাঙ্গীরসহ পাঁচজনের দুই বছর করে কারাদণ্ডের আদেশ দেন।

রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক উল্লেখ করেন, জয়যাত্রা টিভি সরকার কর্তৃক সম্প্রচারের জন্য কোনও অনুমোদন ছাড়াই স্যাটেলাইট টেলিভিশন হিসেবে প্রচার করে দেশের বিভিন্ন জেলায় স্থানীয় সংবাদকর্মী ও বিদেশি প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়। এ জন্য তাদের কাছ থেকে জামানত ও চাঁদা আদায় করে। সম্প্রচারের অনুমোদন ছাড়া জয়যাত্রা টিভি টেলিভিশন হিসেবে আদৌ গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

এর আগে ১৪ মার্চ ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার জন্য ২০ মার্চ দিন ধার্য করেন।

প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ২ আগস্ট রাতে পল্লবী থানায় সাংবাদিক আব্দুর রহমান তুহিন বাদী হয়ে একটি প্রতারণার মামলা করেন। মামলায় জয়যাত্রা টিভির চেয়ারম্যান হেলেনা জাহাঙ্গীর, জেনারেল ম্যানেজার হাজেরা, প্রধান বার্তা সম্পাদক কামরুজ্জামান আরিফ, কো-অর্ডিনেটর সানাউল্ল্যাহ নূরী, স্টাফ রিপোর্টার মাহফুজ শাহরিয়ারসহ অজ্ঞাত ১০ থেকে ১২ জনকে আসামি করা হয়।

মামলায় তুহিন অভিযোগ করেন, জয়যাত্রা টিভির স্থানীয় সংবাদদাতা হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার জন্য ভোলা জেলার আবদুর রহমান তুহিনের কাছ থেকে ৫৪ হাজার টাকা নেন হেলেনা। প্রতিবেদক হিসেবে রহমান কয়েক মাস কাজ করলেও কোনও বেতন পাননি। অন্যদিকে তার কাছ থেকে প্রতি মাসে তিন হাজার টাকা নেয় টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ।

তদন্ত শেষে ২০২১ সালের ২৯ ডিসেম্বর হেলেনা জাহাঙ্গীরসহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইড) পরিদর্শক শাহিনুর ইসলাম অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ২০২২ সালের ১৮ এপ্রিল ঢাকার অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন তোফাজ্জল হোসেন আসামিদের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ গঠন করেন। মামলায় ২৬ জন সাক্ষীর মধ্যে বিভিন্ন সময় ১৩ জন আদালতে সাক্ষ্য দেন।