১১ বছর আগের এক মাদক মামলায় মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে এসে আদালতের কাছে ধরা পড়েছেন রতন নামের এক ব্যক্তি। পরে আদালত তাকে সাত দিনের জন্য কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারের সেফ কাস্টডিতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
ঘটনাটি ঘটে মঙ্গলবার (১৭ জুন) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১ এর বিচারক আবুল কাশেমের আদালতে।
মামলার স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মাহফুজুর রহমান পাটওয়ারী জানান, মামলাটি ২৫ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধারের ঘটনায় দায়ের হয়। দীর্ঘদিন ধরে সাক্ষীরা আদালতে হাজির না হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছিল।
মঙ্গলবার সকাল ১১টায় আদালতে বিচারকাজ শুরু হওয়ার কয়েক মিনিট আগে রতন আদালতে হাজির হন। তখন তাকে সাক্ষ্য প্রদানের বিষয়টি ব্যাখ্যা করা হয়। পিপির দাবি, রতন তার সঙ্গে সব কিছু স্বীকার করেছিলেন। কিন্তু ডকে উঠে তিনি বলেন, ঘটনার বিষয়ে কিছুই জানেন না।
পিপি আরও বলেন, ‘আমি তাকে জিজ্ঞেস করি—আমার কাছে তো সব স্বীকার করলেন, এখন বলছেন কিছু জানেন না?’ পরে বিচারকও তাকে জেরা করেন। তিনি জানান, ঘটনার সময় তিনি পুলিশের গাড়ির চালক ছিলেন। কিন্তু কোন কোন জায়গায় ড্রাইভ করেছেন, সে সম্পর্কেও কিছু বলতে পারেননি।”
পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে আদালত ও প্রসিকিউশন পক্ষের ধারণা, রতন ইচ্ছাকৃতভাবে সত্য গোপন করেছেন এবং হয়তো আসামিপক্ষের প্রভাবে সাক্ষ্য বদলেছেন। এ কারণে বিচারক তাকে ‘সেফ কাস্টডিতে’ পাঠানোর আদেশ দেন, যাতে তিনি পরবর্তী সাক্ষ্য প্রদানের আগে সত্য ঘটনা মনে করে আসতে পারেন।
এই মামলায় রতনের সাক্ষ্য গ্রহণের পরবর্তী তারিখ ধার্য করা হয়েছে আগামী মঙ্গলবার, ২৫ জুন।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, ২০১৪ সালের ২৮ জুন রাত ৯টা ৪০ মিনিটে মিরপুরের সনি সিনেমা হলের সামনে থেকে ইমরান হোসেনের দেহ তল্লাশি করে তার হাতে থাকা ব্যাগ থেকে ২৫ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করে পুলিশ।
ঘটনার সময় পুলিশ সদস্য রাজ কুমার বাদী হয়ে মামলা করেন। তদন্ত শেষে ওই বছরের ১৯ আগস্ট এসআই মুনিরুজ্জামান আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। পরে ১৫ সেপ্টেম্বর আদালত আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন।
মামলায় মোট ১০ জন সাক্ষীর মধ্যে এখন পর্যন্ত ৩ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। রতন চতুর্থ সাক্ষী হিসেবে হাজির হন এবং তিনি অভিযোগপত্রের ২ নম্বর সাক্ষী। রতনের বাড়ি বরগুনার তালতলী থানার ছোট ভাই জোড়া গ্রামে।
এদিকে আদালতের আদেশে রতনকে কারাগারে পাঠানো হচ্ছে শুনে আদালতে ছুটে আসেন তার ছেলে ও দুলাভাই। রতনের দুলাভাই হারুন বলেন, ‘একজন পুলিশ সদস্য রতনের মাকে ফোন দিয়ে বিষয়টি জানায়। পরে আমার শাশুড়ি আমাকে জানালে আমরা মিরপুর থেকে তড়িঘড়ি করে ছুটে আসি। তবে কী কারণে তাকে কারাগারে পাঠানো হলো, তা আমরা জানি না।’