সুলতানার সুরতহাল প্রতিবেদনে আঘাতের চিহ্ন নেই: অ্যাটর্নি জেনারেল

নওগাঁয় র‌্যাব হেফাজতে মারা যাওয়া সুলতানা জেসমিনের (৪৫) সুরতহাল প্রতিবেদনে আঘাতের কোনও চিহ্ন নেই বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) এ-সংক্রান্ত মামলার শুনানির পর নিজ কার্যালয়ে তিনি সাংবাদিকদের কাছে এসব মন্তব্য করেন।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ডেইলি স্টারের প্রতিবেদন যুক্ত করে এক আইনজীবী জনস্বার্থে মামলা ফাইল করেছেন। তার (রিটকারী আইনজীবী) বক্তব্য ছিল, র‌্যাব ২৪ ঘণ্টা তাকে (সুলতানা জেসমিন) হেফাজতে রেখে দিয়েছে। যেটা আইনবিরোধী এবং তাকে টর্চার করে মেরে ফেলা হয়েছে। আমি আদালতকে দেখালাম ২৪ ঘণ্টার অভিযোগ সম্পূর্ণভাবে অসত্য বক্তব্য। রেকর্ড অনুযায়ী গত ২২ মার্চ ১১টা ৪০ মিনিটে আটক করা হয় তাকে। পত্রিকার রিপোর্ট হয় ওই দিন রাত ১০টায়। আর রাত ১টা ১৫ মিনিটের দিকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। কারণ তাকে আটক করার পর মোবাইলের রেকর্ড অর্থাৎ আরেকজনের নামে আইডি ব্যবহার করে অনৈতিক কাজ করছিলেন। সেই মোবাইল ফোন উদ্ধার করে দোকানে নিয়ে তথ্য-উপাত্ত বের করা হয়। তখন এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি অসুস্থবোধ করেন। এরপর তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।

এ এম আমিন উদ্দিন আরও বলেন, তার (সুলতানা জেসমিন) সুরতহাল রিপোর্টের কোথাও কোনও আঘাতের চিহ্নের কথা নেই। আমি আদালতকে বলেছি, ময়নাতদন্ত রিপোর্টটা আসার পর দেখার জন্য। আদালত আগামী ৫ এপ্রিল (বুধবার) পরবর্তী শুনানির জন্য দিন রেখেছেন। ওই দিন বেলা ২টার সময় শুনবেন। এর মধ্যে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট এনে আমাকে উপস্থাপন করতে নির্দেশনা দিয়েছেন আদালত।

এক প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, র‌্যাব যে আটক করতে পারে, সেটা তো আইনে আছে। মূল কথা হচ্ছে, পোস্টমর্টেম রিপোর্ট স্বাভাবিক এলে এক প্রশ্ন, আর অস্বাভাবিক এলে আরেক প্রশ্ন আসবে।

তিনি বলেন, আমি আদালতে বলেছি, এ ধরনের মামলা (রিট) করে কোনও মানুষকে (আইনশৃঙ্খলা বাহিনী) যেন হয়রানি না করা হয়। যারা কাজ করে আমরা তাদের যদি হয়রানি করি, তারা কাজের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। আর কেউ যদি সত্যিকার অর্থে দোষী (আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা) হয়, তার বিরুদ্ধে সঠিক ব্যবস্থা নেবে। এ জন্য রাষ্ট্র কখনও পিছপা হবে না।

উল্লেখ্য, সুলতানা জেসমিন নওগাঁ সদর উপজেলার চণ্ডীপুর ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ে অফিস সহকারী পদে চাকরি করতেন। র‌্যাবের দাবি, প্রতারণার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গত ১৯ মার্চ তাকে আটক করা হয়। আটকের পর অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন তিনি।

নিহত সুলতানার স্বজনদের অভিযোগ, হেফাজতে নির্যাতনের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। তবে এ ঘটনায় এখনও কোনও মামলা করা হয়নি। তবে বিষয়টি নিয়ে বেশ কিছু গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে গত ২৭ মার্চ তা আদালতের নজরে আনা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় আজ  মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) হাইকোর্টে জনস্বার্থে রিট করা হয়।

ওই রিটের শুনানি নিয়ে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের মামলায় র‌্যাব কর্তৃক গ্রেফতারের এখতিয়ার আছে কি না, তা জানতে চেয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে নওগাঁয় র‌্যাবের হাতে আটকের পর থেকে সুলতানা জেসমিনকে সম্মানজনক জায়গায় (থানা অথবা কার্যালয়ে) নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল কি না এবং হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত সময়ে র‌্যাবের আচরণ আইনানুগ হয়েছে কি না, তাও জানতে চেয়েছেন আদালত। পাশাপাশি চূড়ান্ত ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর কারণ কী আসে, সেসব তথ্যও আদালতকে জানাতে বলা হয়েছে।

আগামী ৫ এপ্রিলের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষকে এসব বিষয়ের তথ্য এবং এ সংক্রান্ত আইন, নথি ও সুলতানা জেসমিনের ময়নাতদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে এবং সেদিন মামলার পরবর্তী শুনানির দিন নির্ধারণ করেছেন আদালত।

নওগাঁয় র‌্যাব হেফাজতে ওই নারীর মৃত্যুর ঘটনা তদন্তের নির্দেশনা চেয়ে করা রিটের শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এসব আদেশ দেন।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মনোজ কুমার ভৌমিক। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। তাকে সহযোগিতা করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আবুল কালাম খান দাউদ।