প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামানের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা

স্বাধীনতা দিবসে মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য দিয়ে সংবাদ প্রকাশের অভিযোগ এনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে রাজধানীর তেজগাঁও থানায় মামলা হয়েছে প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামানের বিরুদ্ধে। অজ্ঞাত আরও অনেকের কথা বলা হলেও একমাত্র তার নামই উল্লেখ করা হয়েছে মামলার এজাহারে। মামলার বাদী হয়েছেন রাজধানীর কল্যাণপুরের বাসিন্দা সৈয়দ মো. গোলাম কিবরিয়া।

এজাহারে বলা হয়, দৈনিক প্রথম আলো অনলাইন পত্রিকায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসে মিথ্যা এবং বানোয়াট তথ্য ও ছবিযুক্ত সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে মানহানিকর তথ্য প্রচার ও প্রকাশ করে দেশের স্বাভাবিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর সম্ভাবনা সৃষ্টি ও সহায়তা করে অপরাধ করা হয়েছে। এই অভিযোগে ২০১৮ সালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫(২), ২৬(২), ২৯(১), ৩১(২) ও ৩৫(২) ধারায় এ মামলা দায়ের করা হয়।

২৫ নম্বর ধারার ১ নম্বর উপধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনও ব্যক্তি ওয়েবসাইট বা অন্য কোনও ডিজিটাল মাধ্যমে– (ক) ইচ্ছাকৃতভাবে বা জ্ঞাতসারে, এমন কোনও তথ্য-উপাত্ত পাঠান, যা আক্রমণাত্মক বা ভীতি প্রদর্শক অথবা মিথ্যা বলে মনে হওয়ার পরও কোনও ব্যক্তিকে বিরক্ত, অপমান, অপদস্থ বা হেয় প্রতিপন্ন করিবার উদ্দেশ্যে প্রকাশ বা প্রচার করেন, বা (খ) রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি বা সুনাম ক্ষুণ্ণ করা বা বিভ্রান্তি ছড়ানো বা এই উদ্দেশ্যে অপপ্রচার বা মিথ্যা হিসেবে জানার পরও কোনও তথ্য সম্পূর্ণ বা আংশিক বিকৃত আকারে প্রকাশ, বা প্রচার করেন বা করতে সহায়তা করেন, তাহলে এই কাজ ওই ব্যক্তির একটি অপরাধ।

২ নম্বর উপধারায় বলা হয়েছে, কেউ উপধারা (১)-এর অধীন কোনও অপরাধ সংঘটিত করলে তিনি অনধিক তিন বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক তিন লাখ টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

২৬ নম্বর ধারার ঙ নম্বর উপধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনও ব্যক্তি আইনগত কর্তৃত্ব ছাড়াই অপর কোনও ব্যক্তির পরিচিতি তথ্য সংগ্রহ, বিক্রি, দখল, সরবরাহ বা ব্যবহার করেন, তাহলে ওই ব্যক্তির অনুরূপ কাজ হবে একটি অপরাধ। ২ নম্বর উপধারায় বলা হয়েছে- যদি কোনও ব্যক্তি উপধারা (১)-এর অধীন কোনও অপরাধ করেন, তাহলে তিনি অনধিক পাঁচ বছর কারাদণ্ডে, বা অনধিক পাঁচ লাখ লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

২৯ নম্বর ধারায় ১ নম্বর উপধারায় বল হয়েছে, যদি কোনও ব্যক্তি ওয়েবসাইট বা অন্য কোনও ইলেকট্রনিক বিন্যাসে Penal Code (Act XLV of 1860)-এর section 499 এ বর্ণিত মানহানিকর তথ্য প্রকাশ বা প্রচার করেন, সেজন্য তিনি অনধিক তিন বছরের কারাদণ্ডে বা অনধিক পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

৩১ নম্বর ধারার ১ নম্বর উপধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনও ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইট বা ডিজিটাল বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন বা করান, যা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন শ্রেণি বা সম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা, ঘৃণা বা বিদ্বেষ সৃষ্টি করে বা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে বা অস্থিরতা বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে অথবা আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটায় বা ঘটার উপক্রম হয়, তাহলে ওই ব্যক্তির এরকম কাজ অপরাধ বলে গণ্য হবে।

২ নম্বর উপধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনও ব্যক্তি উপধারা (১)-এর অধীন কোনও অপরাধ সংঘটন করেন, তাহলে তিনি অনধিক সাত বছরের কারাদণ্ডে বা অনধিক পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

৩৫ নম্বর ধারার ১ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনও ব্যক্তি এই আইনের অধীন কোনও অপরাধ সংঘটনে সহায়তা করেন, তাহলে ওই ব্যক্তির এরকম কাজ হবে একটি অপরাধ। ২ নম্বর উপধারায় বলা হয়েছে, অপরাধ সংঘটনে সহায়তা করার ক্ষেত্রে মূল অপরাধটির জন্য যে দণ্ড নির্ধারিত রয়েছে, কোনও ব্যক্তি সেই দণ্ডেই দণ্ডিত হবেন।

তেজগাঁও থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) শাহ আলম মামলা নথিভুক্ত করার বিষয়টি নিশ্চিত করলেও এ বিষয়ে কোনও বক্তব্য দিতে রাজি হননি।

আরও পড়ুন- 

এই পত্রিকাটি আমাদের নেত্রী ও উন্নয়নের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে: নানক

প্রথম আলোর সাংবাদিককে সিআইডি পরিচয়ে বাসা থেকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ

মামলার পর প্রথম আলোর সাংবাদিক গ্রেফতার: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

হলুদ সাংবাদিকতা পরিহার করতে হবে, বললেন কাদের