কোথায় কীভাবে ইফতার করছেন নিম্নআয়ের মানুষেরা

একদিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, অপরদিকে খরচ কমানোর চেষ্টা— পবিত্র রমজান মাসে এ নিয়ে বিপাকে আছেন নিম্নআয়ের মানুষেরা। ‘দিনান্তে পান্তা ফুরানো’ এসব মানুষ এবং তাদের পরিবারের ইফতারিতেও এর প্রভাব পড়েছে।

নিম্নআয়ের শ্রমজীবীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কখনও পরিবারের সঙ্গে, কখনও কর্মস্থলে, কোনও মসজিদে, কিংবা চলার পথে ইফতার করছেন তারা। তাদের মধ্যে একটি অংশের কাছে নগরীর মসজিদগুলোই ইফতারের প্রধান কেন্দ্র। রমজান মাসে রোজাদারদের জন্য প্রতি দিন ইফতারির আয়োজন করা হয় মসজিদগুলোতে, যাতে সবাই অংশ নিতে পারেন।

বাদল আলী, মেট্রোরেলের কাজ করা একজন শ্রমিক। তিনি জানান, গ্রামের বাড়ি তার কুষ্টিয়া, ঢাকায় একটি মেসে থাকেন। অন্য সময় রাত ৮টায় ছুটি হলেও রোজার মাসে ছুটি হয় বিকাল ৫টায়। ইফতারের সময় বাসায় চলে যান তিনি। তবে ইফতার বাসায় করেন না। বেশিরভাগ সময়ই ইফতার করেন এলাকার মসজিদে। একা থাকা এবং অর্থনৈতিক দিক বিবেচনা করেই এই সিদ্ধান্ত তার।

হাইকোর্ট মাজার সংলগ্ন মসজিদে রোজার মাসে প্রতি দিন আড়াই থেকে তিন হাজার মানুষের জন্য ইফতারের আয়োজন করা হয়

ভ্যানচালক মো. ওহিদুল্লাহ বায়তুল মোকাররম মার্কেটের মালামাল বহন করেন। তিনি বলেন, ‘ভ্যান চালাইয়া রোজা রাখা অনেক কষ্টের। তাও রাখি, রোজাতো আর মিস দেওয়া যাবে না। মার্কেটে বেচাকেনা কম, তাই মালামালও বেশি টানতে পারি না। সকাল থেকে ভ্যান নিয়ে বইসা আছি। এখনও কোনও কাজ পাই নাই। ইফতারের সময় হলে আমরা কয়েকজন মিলে ইফতারি বানায়ে খাই। মসজিদ থেকে সবসময় ইফতারি পাওয়া যায় না।  তাই সবাই মিলা এই জায়গায় টাকা উঠায়ে ইফতারি খাই। আর নাইলে বাসায় চলে যাই। পরিবারের সঙ্গে ইফতার করি, টাকাও বাইচা যায়।’

পল্টন এলাকার একটি প্রাইভেট ব্যাংকের এটিএম বুথের সিকিউরিটি গার্ড মো. আবু জাফর জাহিদ বলেন, ‘ইফতারের সময় বুথ বন্ধ করে বাসায় যাই। বাসায়ই সবার সঙ্গে ইফতার করি। আর না যেতে পারলে ছোলা-মুড়ি কিনে এনে বুথের ভেতরে খাই। বায়তুল মোকাররম, হাইকোর্ট মসজিদে ইফতারি দেয় জানি, কিন্তু যাই না।’

সর্বস্তরের মানুষের জন্য ইফতারের ব্যবস্থা করা হয় সুপ্রিম কোর্টের মাজার সংলগ্ন মসজিদে। সেখানে নিম্নআয়ের মানুষের উপস্থিতির আধিক্য থাকে বরাবরই। সুপ্রিম কোর্ট মাজার মসজিদ প্রশাসন কমিটির সদস্য বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান বলেন, ‘এই মসজিদে সর্বসাধারণের ইফতারের ব্যবস্থা করা হয়। আমরা প্রতি দিন আড়াই থেকে তিন হাজার মানুষকে ইফতার করিয়ে থাকি। আমাদের এই মসজিদে অনেকে  নাম প্রকাশ না করে অনেক অনুদান দেন। সেই অর্থ থেকেই আমরা এ ইফতারের আয়োজন করি।’

ইফতারে নিম্নআয়ের মানুষের অংশগ্রহণ

তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে ইফতারে থাকে— শরবত, ছোলা, মুড়ি, খেজুর, আলুর চপ, ডিম চপ, বেগুনি,  পেঁয়াজু, জিলাপি,  খিচুড়ি এবং মাঝে মাঝে বিরিয়ানি দেওয়া হয়।’ রোজা ছাড়াও সাধারণ মানুষের জন্য এখানে দুই বেলা খাবারের ব্যবস্থা করা হয় বলে জানান তিনি।

জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমেও পুরো রমজান মাসজুড়ে আয়োজন করা হয় ইফতারের। সর্ব সাধারণের জন্য উন্মুক্ত এ আয়োজন। এ ব্যাপারে জাতীয় মসজিদের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, কেউ যেনো ইফতার করা থেকে বাদ না পরেন, তাই আমাদের এই উদ্যোগ। এ বছর প্রতি দিন দুই হাজার করে এবং পুরো রোজার মাসে ৬০ হাজার মানুষকে ইফতার করানোর জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। তাদের দেওয়া ইফতারের মধ্যে থাকে— খেজুর, কলা, ছোলা, মুড়ি, বেগুনি, পেঁয়াজু, জিলাপি ও পানি।

ছবি: সাজ্জাদ হোসেন