আগাম জামিন পেলেন প্রথম আলোর সম্পাদক

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে রাজধানীর রমনা থানায় দায়ের করা মামলায় প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানকে ছয় সপ্তাহের আগাম জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। রবিবার (২ এপ্রিল) দুপুরে বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

শুনানিতে ছিলেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট ফিদা এম. কামাল, অ্যাডভোকেট সৈয়দ রেজওয়ানা হাসান ও প্রশান্ত কুমার কর্মকার।

এর আগে সকালে স্বাধীনতা দিবসে ‘মিথ্যা ও বানোয়াট’ তথ্য দিয়ে সংবাদ প্রকাশের অভিযোগে রমনা থানায় দায়ের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় আগাম জামিন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন জানান দৈনিক প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান।

ছয় সপ্তাহের আগাম জামিন পেয়েছেন প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান (ছবি: নাসিরুল ইসলাম)

এদিন দুপুর ৩টা ১৪ মিনিটে জামিন শুনানি শুরু হয়। শুনানিকালে মতিউর রহমানের আইনজীবী ফিদা এম কামাল আদালতকে বলেন, প্রথম আলো প্রসঙ্গে একাত্তর টেলিভিশন যে প্রতিবেদন করেছে তা কারও দ্বারা প্রভাবিত হয়ে।

একপর্যায়ে আদালত বলেন, সে সময় বাসন্তীর জন্য কেউ কিন্তু এগিয়ে আসেনি। মামলার বাদী কীভাবে একাত্তর সালের কথা তুলে ধরলো? প্রথম আলো বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশ করে। আপনারা যদি এমন ধরনের ভুল করেন, তাহলে চলবে কীভাবে?

তখন মতিউর রহমানের আইনজীবী বলেন, এটি প্রথম আলো ভুল করেনি। প্রভাবিত হয়ে এরকম রিপোর্ট করেছেন একাত্তর টিভির ফারজানা রুপা। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটির অপব্যবহার হচ্ছে। পত্রিকায় আসা বক্তব্যটা জাকির হোসেনের নয়, সবুজের।

জবাবে আদালত বলেন, আমরা সত্যের পক্ষে বিচার করবো।

এসময় আদালতকে মতিউর রহমানের আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেন, আমরা যার পক্ষে আদালতে শুনানি করছি তিনি বাংলাদেশের একজন সিনিয়র সম্পাদক। তিনি একটি পত্রিকার সম্পাদনা করেছেন। 

জামিন নিতে হাইকোর্টে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান (ছবি: নাসিরুল ইসলাম)

তখন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুজিত চ্যাটার্জি বাপ্পি আদালতকে বলেন, পত্রিকা আমরাও পড়েছি। আমি প্রথম আলোর পাঠক। কিন্তু উনি মতিউর রহমান কী নিউজ করেছেন? ৭ বছরের সবুজকে ব্যবহার করে তারা নিউজ করেছে। এটি মিথ্যা না? তারা নিজেরাই নিউজটি প্রত্যাহার করেছে। দেশের ক্ষতি করে তারা নিউজটা প্রত্যাহার করেছেন। দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য শামসুজ্জামান নিউজটি করেছে কারও দ্বারা প্রভাবিত হয়ে।

এরপর অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মেহেদী হাসান চৌধুরী আদালতকে বলেন, প্রথম আলো কি সত্যের পক্ষে? এ তো দেখি মিথ্যার পক্ষে। প্রথম আলোর কাছে আমরা কি এই আশা করি?

আদালত বলেন, সংবাদটা যদি প্রত্যাহার করে থাকে তাহলে প্রেস কাউন্সিলে যেতে পারে।

পরে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলাটিতে দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকার সম্পাদক মতিউর রহমানকে ছয় সপ্তাহের আগাম জামিন দেন হাইকোর্ট। 

গত ২৯ মার্চ দিবাগত রাতে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে রমনা থানায় মামলাটি দায়ের করা হয়। মামলায় প্রথম আলোর সম্পাদক ছাড়াও সিআইডি পুলিশের হাতে আটক হওয়া প্রথম আলোর সাভারের নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামস, সহযোগী একজন ক্যামেরাম্যান এবং অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করা হয়।

সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী আব্দুল মালেক মশিউর (৬১) বাদী হয়ে এই মামলা করেন। পরিদর্শক (নিরস্ত্র) আবু আনসারকে এ মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫-এর (২), ৩১, ৩৫ ধারায় আনা অভিযোগে বলা হয়েছে, আসামিরা প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়া ব্যবহার করে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি বা সুনাম ক্ষুণ্ণ করে এবং বিভ্রান্তি ছড়াতে মিথ্যা তথ্য প্রচার করেছে।

 

আগাম জামিন নিতে হাইকোর্টে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান (ছবি: নাসিরুল ইসলাম)

মামলায় বলা হয়েছে, বাদীর লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে এ মামলা করা হয়েছে। মামলার বাদী ‘বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের’ প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আইনজীবী আব্দুল মালেক মশিউর জানান, স্বাধীনতা নিয়ে জনমনে ‘অস্থিতিশীল ও বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতি’ তৈরি করার কারণে তিনি মামলাটি দায়ের করেছেন।

এই মামলায় প্রথম আলোর প্রতিবেদককে আদালতে হাজির করা হলে তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত।

এর আগে গত ২৯ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে ‘মিথ্যা ও বানোয়াট’ তথ্য দিয়ে সংবাদ প্রকাশের অভিযোগ এনে রাজধানীর তেজগাঁও থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামানের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা দায়ের করা হয়।

তেজগাঁও থানা পুলিশ জানিয়েছে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় শামসুজ্জামানকে গ্রেফতার দেখিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। মামলাটির তদন্তও সিআইডি করছে।