এবার ঈদযাত্রায় অনলাইলে শতভাগ টিকিট বিক্রি করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ফলে বিনা টিকিটে ভ্রমণের আর সুযোগ নেই ট্রেন যাত্রীদের। তবু যদি কোনোভাবে যাওয়া যায় এই আশায় স্টেশনে ভিড় জমাচ্ছেন টিকিটবিহীন যাত্রীরা। ঈদযাত্রার তৃতীয় দিন এসে এই ভিড় অনেকগুণ বেড়েছে। আর তাদের বারবার বুঝিয়ে ফিরিয়ে দিতেই হিমশিম খাচ্ছেন রেলের নিরাপত্তাকর্মী ও টিকিট পরিদর্শকরা।
বৃহস্পতিবার (২০ এপ্রিল) বিকালে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে ঘুরে দেখা যায় এই চিত্র। অনলাইনে অগ্রিম টিকিট পাওয়া যাত্রীরা নির্বিঘ্নেই স্টেশনে প্রবেশ করছেন। তবে ফিরে যেতে হচ্ছিল বিনা টিকিটে ভ্রমণ করতে আসা যাত্রীদের। রেল থেকেও মাইকে করে বারবার বিনা টিকিটের যাত্রীদের ফিরে যেতে অনুরোধ করা হচ্ছিল।
রেলের কর্মীরা বলছেন, ১৭ এপ্রিল থেকে ঈদযাত্রা শুরু হয়। প্রথম তিন দিন টিকিটবিহীন যাত্রীদের চাপ না থাকলেও আজ সেই চাপ অনেক বেড়েছে। টিকিট ছাড়াই স্টেশনে আসা ব্যক্তিদের অধিকাংশই বেসরকারি চাকরিজীবী, পোশাক ও কারখানা শ্রমিক। অনলাইনে টিকিট কেনার প্রক্রিয়া সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা না থাকায় অগ্রিম টিকিট কাটতে পারেননি বলে জানান তারা।
রেলে করে জামালপুরে নিজ বাড়িতে ঈদ করতে স্টেশনে এসে দাঁড়িয়ে ছিলেন পোশাক শ্রমিক শফিক। তিনি বলেন, ‘অনলাইনে কীভাবে টিকিট কাটে আমি জানি না। আজকেই সকালে ছুটি পাইছি। ভাবছি ছাদে কইরা যদি যাওন যায়।’
আরেক যাত্রী আলিফ হোসেন পরিবার নিয়ে এসেছেন কোনোভাবে যদি ট্রেনে যাওয়া যায়। তিনি বলেন, ‘বাসে করে আমার মা-বোনেরা যেতে পারে না। সবসময় ট্রেনেই যাতায়াত করি। এইবার অনলাইনে চেষ্টা করেছি, কিন্তু টিকিট পাই নাই। তবু চেষ্টা করতে আসছি যদি যাওয়া যায়।’
এসময় এক টিকিট পরিদর্শক তাকে স্ট্যান্ডিং টিকিট কেনার জন্য পরামর্শ দেন।
টিকিটবিহীন যাত্রীদের চাপ অনেক বেড়েছে জানিয়ে বাদল নামে এক টিকিট পরিদর্শক বলেন, ‘আজ যারা আসছে তারা অধিকাংশই এভাবেই ঈদে যাতায়াত করে। ওই চিন্তা থাকেই এখন এসে ভিড় করছে। কিন্তু এবার সেই সুযোগ নাই। তাদের বুঝিয়ে ফিরিয়ে দিতে দিতেই অন্য কাজ করার আর সুযোগ পাচ্ছি না।’
স্ট্যান্ডিং টিকিটের জন্য দীর্ঘ লাইন
এদিকে যাদের টিকিট নেই তারাও সহজে ফিরে যেত চাইছেন না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে আছেন স্ট্যাডিং টিকিট পাওয়ার আশায়। টিকিট মিলবে কিনা সেই নিশ্চয়তাও নেই। কারণ রেল থেকে কেবল ২৫ শতাংশ স্ট্যান্ডিং টিকিট বিক্রি হচ্ছে যাত্রা দিনে।
পিয়ার আলি মুন্সি নারায়ণগঞ্জের মদপুর থেকে এসে টিকিটের জন্য দাঁড়িয়েছেন ঘণ্টাখানেক হলো। টিকিট পাওয়ার নিশ্চয়তা নেই তবু কিছু একটা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কিছু তো একটা হবে। এতগুলা মানুষকে কি ফিরায়া দিতে পারবে? রেলের তো একটা বিবেচনা আছে। একটা না একটা ব্যবস্থা করে যাইতে তো হবেই।’
অনেকেই পাচ্ছেন এই ভরসায় দীর্ঘ সময় ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন গাউসিয়া থেকে আসা আবদুল রাজ্জাক, যাবেন সিরাজগঞ্জ। তিনি বলেন, 'অনেকেই তো দেখলাম টিকিট পাইলো। দেখা যাক আল্লাহ ভরসা।'
ঘণ্টাখানেক দাঁড়িয়ে থেকেও পার্বতীপুরের টিকিট মিলেনি ফরহাদ হোসেনের। তিনি বলেন, ‘পৌনে এক ঘণ্টা লাইনে দাঁড়াইলাম, আর তারা কাউন্টার খুলে কয়েকটা টিকিট দিয়ে আবার বন্ধ করে দিছে। বলে আর টিকিট নাই। পরে রেলের লোকজন এসে লাইন ভেঙে দিছে। এখন দেখি কী করা যায়।’
টিকিট পাওয়ার অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও বৃহস্পতিবার (২০ এপ্রিল) বিকালের দিকে স্ট্যান্ডিং টিকিটের জন্য লাইন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘ হতে থাকে। এতে পুরো স্টেশন টিকিটবিহীন লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। চাপ সামাল দিতে রেল পুলিশসহ আনসার সদস্যরা৷ বাড়তি লাইনের লোকদের সরিয়ে দেন। স্টেশন থেকে মাইক থেকে বারবার অনুরোধ কর হচ্ছিলো টিকিটবিহীন মানুষদের স্টেশন ছেড়ে চলে যেতে।
এবিষয়ে ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনের ব্যবস্থাপক মাসুদ সারওয়ার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বিকালের পর থেকেই মানুষ ভিড় বেড়েছে। তাদের অধিকাংশই বিনা টিকিটের যাত্রী। যারা অনলাইনে টিকিট কাটতে পারে নাই তাদের জন্য আমরা একটি ট্রেনের ২৫ শতাংশ স্ট্যান্ডিং টিকিটের ব্যবস্থা রেখেছি। এতে ১৫০ জনের মতো দাঁড়িয়ে যেতে পারবে। কিন্তু টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়াচ্ছে ৫০০ থেকে হাজার লোক। এটা তো একটা বড় চাপ। আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আছে। তারা বিষয়টি ম্যানেজ করছে।
ছবি: প্রতিবেদক।