রাজধানীর ফার্মগেটের ইন্দিরা রোড-সংলগ্ন কুতুববাগ দরবার শরিফ। ১০ তলা এই ভবনটি ঢাকার খানকাহ হলেও মূল দরবার হচ্ছে নারায়ণগঞ্জের বন্দর এলাকায়। তবে কুতুববাগ দরবার শরিফের বর্তমান পীর মাওলানা সৈয়দ জাকির শাহ নকশবন্দি মোজাদ্দেদি কুতুববাগী বেশিরভাগ সময় থাকেন ঢাকার দরবারেই। ঈদুল ফিতরের দিন তিনি ফার্মগেটের খানকাতেই ঈদ উদযাপন করেন। সকাল ৯টায় খানকার মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করে তিনি একঘণ্টা আগত ভক্ত-অনুরাগীদের উদ্দেশে উপদেশ দেন। অনুসারীদের সঙ্গে সৌজন্য বিনিময় করেন। এবারও ঈদে তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না।
ফার্মগেটের কুতুববাগ দরবার শরিফের খাদেম মো. নয়ন। তিনি বলেন, ‘পীর বাবা (মাওলানা সৈয়দ জাকির শাহ নকশবন্দি মোজাদ্দেদি কুতুববাগী) দরবারেই ঈদ করেন সাধারণত। সকালে ফজরের ইবাদত-বন্দেগির পর তিনি সকাল ৯টায় জামাতে ঈদের নামাজ আদায় করবেন। এরপর সবার সঙ্গে সৌজন্য ও দোয়া বিনিময় করেন। আগত অনুসারী, ভক্তদের উদ্দেশে পীর বাবা নসিহত করেন।’
ঈদ উদযাপন নিয়ে একাধিকবার সরেজমিনে এবং ফোনে যোগাযোগ করা হলেও মাওলানা সৈয়দ জাকির শাহ নকশবন্দি মোজাদ্দেদি কুতুববাগীর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
সোমবার (১৭ এপ্রিল) ফার্মগেটের কুতুববাগ দরবার শরিফে গিয়ে দেখা যায়, ১০ তলা ভবনের একদম টপ ফ্লোরে পীর সৈয়দ জাকির শাহ’র দরবার কক্ষ। বেশ কয়েকজন সাক্ষাৎ-প্রার্থী অপেক্ষা করছেন তার জন্য। যদিও সেদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত কেউ-ই তার সাক্ষাৎ পাননি। তিনি ভেতরে ব্যস্ত ছিলেন শবে কদরের আয়োজন নিয়ে জরুরি এক বৈঠকে, জানান তার আরেক খাদেম (যিনি নিজের নাম বলতে অপারগ)।
পীর মাওলানা সৈয়দ জাকির শাহ নকশবন্দি মোজাদ্দেদি কুতুববাগীর খাদেম মো. নয়ন বলেন, ‘ঈদের নামাজের পর পীর বাবা এক ঘণ্টার মতো মসজিদে অবস্থান করেন। সেখানে তিনি ভক্ত, অনুসারীদের সঙ্গে কথা বলেন, তাদের নসিহত করেন। এরপর তিনি ওপরে দরবারের উঠে আসেন (১০ তলায়)। এরপর পরিবারের সঙ্গে সময় কাটান তিনি। ঈদের সারা দিন কুতুববাগ দরবার শরিফেই অবস্থান করেন পীর বাবা।’
কুতুববাগ দরবার শরিফের একাধিক ভক্তের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভক্ত-অনুসারীরা যখন দরবারে আসেন, পীরের জন্য হাদিয়া-তোহফা নিয়ে আসেন যথাসাধ্য। কেউ শখের সবজি, কেউ মাছ, কেউ মাংস, কেউ পাখি— যার যার সাধ্য মতো উপহার এনে দরবারে পৌঁছে দেন।
খাদেম নয়নের ভাষ্য— এটা তো যার-যার ইচ্ছা।
খানকা শরিফের খাদেমদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কুতুববাগ দরবার শরিফের যাত্রা শুরু ঢাকার ডেমরার মাতুলাইলের বাসিন্দা প্রয়াত মাওলানা শাহসূফী কুতুবুদ্দীন আহম্মদ খান মাতুয়াইলী নকশবন্দি’র নির্দেশনা অনুযায়ী। শাহসূফী কুতুবুদ্দীন আহম্মদ খান মাতুয়াইলীর তরিকার অনুসারী ‘খাজাবাবা কুতববাগী কেবলাজান’ এর হাত ধরে কুতুববাগ দরবার শরীফের যাত্রা শুরু হয়।
নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর থানার কলাগাছিয়া ইউনিয়নের শুভকরদী গ্রামে ‘খাজাবাবা কুতববাগী কেবলাজান’ এর জন্ম। প্রথমে শুভকরদী গ্রামে খানকা শরীফ প্রতিষ্ঠা করলেও পরবর্তী সময়ে নারায়ণগঞ্জের বন্দর নগরীতে নিজ মুর্শিদ শাহসূফী কুতুবুদ্দীন আহম্মদ খানের নামানুসারে স্থাপন করেন ‘কুতুববাগ দরবার শরীফ’। এই দরবার থেকেই ‘খাজাবাবা কুতুববাগী’ নিজের নামে তরিকা প্রচার শুরু করেন।
কুতুববাগ দরবার শরিফের যাত্রা শুরু বর্তমান পীর মাওলানা সৈয়দ জাকির শাহ লিখিত ‘মানব জীবনের অমূল্য সম্পদ: সত্যদর্শন’ শীর্ষক গ্রন্থে উল্লেখ করেন, কুতুববাগ দরবার শরীফের প্রতিষ্ঠাতা ‘খাজাবাবা কুতুববাগী’ র দুই সন্তান সৈয়দ খাজা গোলাম রাব্বানী ও সৈয়দ খাজা গোলাম রহমান শিশু বয়সেই মারা যান।