রাজধানীতে বসবাসকারী লাখ লাখ কর্মজীবী স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করতে গ্রামের বাড়ি ছুটে যান। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। গত কয়েকদিন ঢাকা ছেড়েছেন লাখো মানুষ। নানা কারণে ইচ্ছে সত্ত্বেও যারা ঢাকা ছাড়তে পারেননি, তারা ঈদের নামাজ শেষে রওনা হয়েছেন।
শনিবার (২২ এপ্রিল) প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদের অবশিষ্ট আনন্দ ভাগাভাগি করতে অনেককে রাজধানী ছাড়তে দেখা গেছে। সকাল থেকে সড়কগুলো ফাঁকা থাকলেও যেসব যানবাহন চলেছে, তাতে ঘরমুখো মানুষের সংখ্যাই ছিল বেশি। গাবতলি, মহাখালী ও সায়দাবাদ বাস টার্মিনালে বহু যাত্রী চোখে পড়ে। তারা বলছেন, ঈদের আগে বাড়িতে যাওয়ার ইচ্ছে থাকলেও বিভিন্ন কারণে যেতে পারেননি। ফলে বাধ্য হয়েই ঈদের দিন যাচ্ছেন তারা।
সায়দাবাদ বাস টার্মিনালে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন বরগুনার আলী আসিফ। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ঈদ ঢাকায় করার চিন্তা ছিল। কিন্তু মায়ের জন্য শেষ পর্যন্ত বাড়িতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ঈদের দুই দিন আগে যেতে চেয়েছিলাম। টিকিট না পাওয়ায় আজ (শনিবার) রওনা হলাম। পরিবারের কাছে ঈদের দিন থাকতে না পারলেও বাকি আনন্দটা ভাগ করা যাবে।
রাজশাহীর মিথুন মিয়া রাজধানীর একটি বেসরকারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। পেশাগত কারণে ঈদের আগে ছুটি পান না কোনোবারই। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। গাবতলী বাস টার্মিনালে বসে তিনি বলেন, আজ থেকে ছুটি পেয়েছি। চাঁদরাতে টিকিট না পেয়ে সকালে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়েছি। বাবা-মা, স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গে কিছুটা হলেও আনন্দ ভাগাভাগি করতে পারবো।
মহাকালী বাস টার্মিনালে সাপেক্ষমান রংপুরের প্রিয়া রহমান বলেন, প্রতিবার ঈদের সময় দীর্ঘ যানজট হয়। গতবছর এমন জ্যামে পড়ে শিক্ষা হয়েছে। তাই এবার ঈদের পর বাড়িতে যেতে চেয়েছিলাম। খবরে কোথাও যানজট নেই দেখে আজ যাচ্ছি বাড়িতে।
বাস কাউন্টারের লোকজন বলছেন, এ বছর ঈদে অন্যান্যবারের মতো একসঙ্গে যাত্রীদের চাপ দেখা যায়নি। আগাম টিকিটের জন্যও হুমড়ি খেয়ে পড়েনি যাত্রীরা। তবে ভিড় তো ছিলই, ঈদযাত্রা বলে কথা! আজ যাত্রীদের চাপ গত কয়েকদিনের মতো না থাকলেও কোনও গাড়িই ফাঁকা যাচ্ছে না।
সাকুরা পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার শহিদুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ঈদযাত্রার শেষ দিন হলো ঈদের দিন। প্রতি বছরই এদিন অনেকে বাড়িতে যান। তবে গত কয়েকদিন খুব চাপ থাকলেও আজ তেমনটা নেই। সারাদিন গাড়ি চলবে। কোনও গাড়িই খালি যায়নি, যাবেও না আশা করি।
বাসের পাশাপাশি মোটরসাইকেলে করেও সকাল থেকে অনেকে ঢাকা ছেড়েছেন। তবে গত কয়েকদিনের থেকে ঢাকা বাইকারদের সংখ্যাটা তুলনামূলক কম। কেফায়েত উল্লাহ নামে একজন বাইকার বলেন, নিজের মোটরসেইকেল থাকায় ঈদের দিন রওনা হয়েছি। এদিন সড়কে যানবাহনের চাপ কম থাকায় সহজে বাড়ি যেতে পারবো আশা করি।
প্রসঙ্গত, প্রতিবার ঈদের ছুটিতে লাখ লাখ মানুষ ঢাকা ছাড়তে গিয়ে পথে পথে ভোগান্তির শিকার হন। বিশেষ করে মহাসড়কগুলোতে দীর্ঘ যানজটে নাকাল হতে দেখা গেছে। এবার ঈদযাত্রায় তেমনটা দেখা যাচ্ছে না বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
তারা বলছেন, অন্যান্যবারের তুলনায় এ বছর ঈদযাত্রায় এখন পর্যন্ত বড় ধরনের কোনও ভোগান্তি লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। এ জন্য মহাসড়ক প্রশস্ত করা, সড়কের অবস্থা ভালো থাকা, ঈদের ছুটি বৃদ্ধি, গাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধি, স্কুল আগে ছুটি হওয়া এবং মোটরসাইকেলে বাড়ি ফেরার সুযোগ থাকায় সুফল মিলেছে।
শবে কদরের দিন সরকারি ছুটি থাকায় ঈদের ছুটি শুরু হয়েছে বুধবার (১৯ এপ্রিল) থেকে। সরকার নির্বাহী আদেশে বৃহস্পতিবার (২০ এপ্রিল) ছুটি ঘোষণা করে। সঙ্গে শুক্র, শনি ও রবিবার ঈদের ছুটি। মোট পাঁচ দিন ছুটির কারণে ঈদযাত্রা স্বস্তিকর হয়েছে।