কবিতা-গানে ধানমন্ডির সাতমসজিদ সড়কে গাছ কাটার প্রতিবাদ

ধানমন্ডি সাতমসজিদ সড়কের সড়ক বিভাজন সম্প্রসারণের নামে কয়েকশত দেশীয় প্রজাতির গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। এতে এই গাছগুলোর ওপর বেঁচে থাকা পাখি, পতঙ্গ এবং বন্যপ্রাণীর আশ্রয় এবং খাদ্য উৎসেও সংকট তৈরি হচ্ছে। পাশাপাশি নগরবাসীর সবুজ বলয়ের অধিকার ছিন্ন হচ্ছে। এসব গাছ কেটে ফেলার প্রতিবাদে কবিতার গানের মাধ্যমে প্রতিবাদ জানিয়েছে সাতমসজিদ সড়ক গাছ রক্ষা আন্দোলন সংগঠন।

শুক্রবার ( ১২ মে) বিকাল সাড়ে ৫টায় রাজধানীর ধানমন্ডি আবাহনী মাঠের বিপরীতে সাতমসজিদ সড়কে গাছ-পাখি-মানুষের শহরের দাবিতে সবুজ-সংহতি ও সবুজ-প্রাচীরের আয়োজনে এ সংহতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বিকাল থেকে শুরু হয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত  সংহতি সমাবেশ চলমান রয়েছে।

এসময় ‘গাছ কাটা চলবে না’, ‘গাছ ও পাখির শহর চাই’, ‘গাছ লাগাই জীবন বাঁচাই’— এমন অর্ধশত স্লোগান প্লেকার্ড দেখা গেছে সমাবেশ অংশগ্রহকারী শিশু-কিশোর বিভিন্ন বয়সের লোকজনের হাতে।

সংহতি সমাবেশে মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, ‘আমরা একটি গণন্ত্রাতিক দেশে বাস করি। যারা দেশ পরিচালনা করছেন তারা গণন্ত্রাতিকভাবে দেশ পরিচালনা করছেন। অথচ গণন্ত্রাতিক প্রথম শর্তই তারা মানেন না। সেটা হলো; দেশবাসীর কাছ থেকে সম্মতি নিয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা, পরিকল্পনা করা এবং সেটা বাস্তবায়ন করা। তারা সেই কথাটা একেবারে ভুলে যান। উন্নয়ন মানে ধ্বংস করা না, উন্নয়ন মানে পিছিয়ে পড়া নয়। উন্নয়নের নামে গাছ কাটা হচ্ছে। উন্নয়ন বলতে তারা কী বোঝাতে চাচ্ছেন। গাছ কাটার বিরুদ্ধে আমরা এ জন্যই দাঁড়িয়েছি। কারণ গাছ আমাদের আশ্রয় দেয়, গাছ আমাদের ছায়া দেয়, গাছ আমাদের বেঁচে থাকার উপকরণ দেয়। গাছের নিজেরই বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে। প্রকৃতি থেকে দূরে সরে যাচ্ছি বলে আমরা কোভিডের মতো বড় বড় রোগে আক্রান্ত হচ্ছি।’

সমাবেশে অংশ নেন বিশিষ্ট জনরা

সংহতি সমাবেশে বক্তারা আশা প্রকাশ করে বলেন, সড়কের শেষ বৃক্ষগুলোকে বাঁচিয়ে সড়কবিভাজক সম্প্রসারণের কাজটি সম্পন্ন করতে সিটি করপোরেশনকে প্রস্তাব করতে হবে। তপ্তনগরে দেশীয় বৃক্ষবৈচিত্র্যর বিপুল সমারোহ ছাড়া, আমরা এ নগরকে সবার জন্য বাসযোগ্য করে গড়ে তোলা সম্ভব নয়।

তারা আরও বলেন, ঢাকার তাপ কমাতে সিটি করপোরেশন ২ লাখ বৃক্ষরোপণের ঘোষণা দিয়েছিল। এ ঘোষণার ফলে সাতমসজিদ সড়কে বৃক্ষহত্যা বন্ধ হওয়ার কথা, কিন্তু হয়নি। কেন গাছ কাটছে এবং এই গাছ কাটার কোনও লিখিত অনুমোদন এখন পর্যন্ত কেউ দেখাতে পারেননি।

সমাবেশ থেকে বেশ কয়েকটি দাবি জানানো হয়। সেগুলো হলো- সাতমসজিদ সড়কে গাছ কাটা বন্ধ করে কাটা গাছের স্থানে দেশি প্রজাতির গাছ লাগাতে হবে। ২. জনগণের করের টাকায় একবার গাছ লাগানো এবং আরেকবার গাছ কেটে আবার উন্নতমানের দ্রুতবর্ধনশীল গাছ লাগানোর নতুন প্রকল্প গ্রহণের নামে গাছ বাণিজ্য বন্ধ করতে হবে। ৩ বৃক্ষ ও নগরবাসীবান্ধব সুনির্দিষ্ট নীতিমালা গ্রহণের মাধ্যমে নগরের গাছ ও সবুজবলয় সুরক্ষা করতে হবে। এবং ৪. নগর উন্নয়নে প্রকৃতিভিত্তিক পরিকল্পনাকে গুরুত্ব দিতে হবে।

সংগঠনটি জানিয়েছে, ধানমন্ডি সাতমসজিদ সড়কে সড়ক-বিভাজক সম্প্রসারণের জন্য ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকেই গাছ কাটা শুরু হয়। এর পর থেকে ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে শুরু হয় সাতমসজিদ গাছ রক্ষা আন্দোলন।

সংহতি সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন, মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের  অধ্যাপক রুবায়েত ফেরদৌস। সংহতি জানিয়েছেন ড. বিধান চন্দ্র রায়, কাজী সুফিয়া আখতার, মিতালি হোসেন, সৌরভ মাহমুদ, মালেকা বেগম, শিফা হাফিজা, রাশেদা কে চৌধুরী, নাট্যকার মামুনুর রশীদ, সামিনা লুতফা নিত্রা প্রমুখ। এছাড়াও সংগঠন হিসেবে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ, আইন ও সালিশ কেন্দ্র, ছায়ানট, বেঙ্গল গ্যালারিসহ আরও অর্ধশতাধিক উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানও এতে সংহতি জানিয়েছে।