নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসে জড়িত মাউশি কর্মকর্তা ও দুই শিক্ষক

গত বছর মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদফতরে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক পদে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের ঘটনা ঘটে। প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় গত বছরের ১৪ মে ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষক আবদুল খালেক বাদী হয়ে লালবাগ থানায় মামলা দায়ের করেন। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় চার্জশিটে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদফতরের শিক্ষা কর্মকর্তা চন্দ্র শেখর হালদার ওরফে মিল্টন ও দুই শিক্ষকসহ চারজনকে আসামি করা হয়। চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি তদন্তকারী কর্মকর্তা তেজগাঁও জোনাল টিমের ডিবি উপপরিদর্শক সুকান্ত বিশ্বাস ২৬ জনকে সাক্ষী করে আদালতে চার্জশিট দেন।

চার্জশিটে বলা হয়, 'আসামিরা প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের সক্রিয় সদস্য। তারা পরস্পরের যোগসাজশে একে অপরের সহায়তায় দীর্ঘদিন যাবৎ বিভিন্নভাবে বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস করে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করে আসছে।'

এ মামলায় গ্রেফতার আসামি নওসাদুল ইসলাম ও আহসানুল হাবীব পলাশের বিরুদ্ধে ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়ে প্রত্যক্ষদর্শী কোনও সাক্ষ্য বা প্রমাণাদি না পাওয়ায় তাদের অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়। এছাড়া পলাতক ছয় ও অজ্ঞাতনামা ২/৩ জন আসামির বিরুদ্ধে ঘটনার জড়িত থাকার প্রমাণাদি পেলেও তাদের সঠিক পূর্ণাঙ্গ নাম-ঠিকানা না পাওয়ায় তাদের অব্যাহতি আবেদন করা হয়।

এ মামলার অভিযুক্ত আসামিরা হলেন—পটুয়াখালী সরকারি কলেজের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক আসামি রাশেদুল ইসলাম রাজু, অফিস সহকারী মো. সুমন জোমাদ্দার, পটুয়াখালী খেপুপাড়া বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক মো. সাইফুল ইসলাম, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদফতরের শিক্ষা কর্মকর্তা চন্দ্র শেখর হালদার ওরফে মিল্টন।

চার্জশিটে আরও বলা হয়, পলাতক আসামি টাঙ্গাইলের খোকনসহ অজ্ঞাতনামা ২/৩ জন আসামি চক্রের মূল পরিকল্পনাকারী। তারা বিভিন্ন উপায়ে বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার পূর্বে প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করে তা বিভিন্ন মাধ্যমে এই চক্রের অন্যান্য সদস্যদের কাছে প্রেরণ করে থাকে। চক্রের সকল সদস্যের কারণে দেশের মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীরা বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় মেধা তালিকায় স্থান পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। যার ফলে দেশের মেধাবী ছাত্রছাত্রীরা হতাশায় নিমজ্জিত হচ্ছে। আসামি সাইফুল ইসলামের সঙ্গে অপর আসামি রাশেদুল ইসলাম পূর্ব থেকেই পরিচয় ছিল। আসামি সাইফুল প্রশ্নপত্র ফাঁসচক্রের সঙ্গে জড়িত বিষয়টি সম্পর্কে আসামি রাশেদুল অবগত ছিল।

চার্জশিটে বলা হয়, পটুয়াখালী সরকারি কলেজের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক আসামি রাশেদুল ইসলাম রাজু কর্মরত থাকাকালীন ওই কলেজের অধ্যক্ষের অফিস সহকারী হিসেবে কর্মরত আসামি সুমন জোমাদ্দারের সঙ্গে পরিচয় হয়। পরিচয়ের সুবাদে সুমন জানতে পারেন যে, আসামি রাশেদুল ইসলাম রাজু টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের মাধ্যমে প্রশ্নপত্র বা উত্তরপত্র দিতে পারবে। পরবর্তীতে সুমন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদফতরে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক পদে নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য রাশেদুলের কাছে পরীক্ষায় আসা প্রশ্নের উত্তর পত্র চায়। এ বিষয়টি রাশেদুল ইসলাম প্রশ্নফাঁস চক্রের সদস্য সাইফুল ইসলামকে জানান এবং তার সঙ্গে আসামি সুমনের পরিচয় করে দেন। পরবর্তীতে সাইফুল ইসলাম আসামি চন্দ্র শেখরকে জানান। আসামি চন্দ্র শেখর, মামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যান্য পলাতক আসামি খোকনসহ অজ্ঞাত ২/৩ জনের মাধ্যমে টাকার বিনিময়ে নিয়োগ পরীক্ষার দিন আসামি সুমনকে প্রশ্নপত্র উত্তরসহ দিবে বলে জানান।

পরে ২০২২ সালের ১৩ মে দুপুর ৩-৪টা পর্যন্ত মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদফতরে ৫১৩টি 'অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক গ্রেড-১৬' শূন্য পদে নিয়োগের জন্য ঢাকার বিভিন্ন কেন্দ্রে এক লাখ ৮৩ হাজার পরীক্ষার্থী এমসিকিউ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। যার মধ্যে আসামি সুমন জোমাদ্দার পরীক্ষার্থী হিসেবে ইডেন মহিলা কলেজের কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশ নেন। পরীক্ষার পূর্বে আসামি চন্দ্র শেখর, পলাতক আসামি খোকনসহ অজ্ঞাত ২/৩ জনের মাধ্যমে নিয়োগ পরীক্ষার আসা প্রশ্নের উত্তর হোটসঅ্যাপে আসামি সুমনের ফোনে পাঠানো হয়।