প্রতিবন্ধী ব্যক্তির মাসিক ভাতা ৫ হাজার টাকা করার দাবি

২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির ভাতা মাসিক ন্যূনতম ৫ হাজার টাকা এবং এরসঙ্গে শিক্ষা উপবৃত্তি মাসিক ২ হাজার টাকা অন্তর্ভুক্ত করাসহ ১১ দফা দাবি জানিয়েছে ‘সংক্ষুব্ধ প্রতিবন্ধী নাগরিক সমাজ’।

বুধবার (৭ জুন) জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা মোহাম্মদ আকরাম খাঁ হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন থেকে এসব দাবি জানায় সংগঠনটি।

সংবাদ সম্মেলনে সংক্ষুব্ধ প্রতিবন্ধী নাগরিক সমাজের সভাপতি সাবরিনা সুলতানা বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে আমাদের দাবি-দাওয়া সরকারকে জানিয়ে আসছি, কিন্তু বরাবরের মতোই আমাদের দাবি-দাওয়ার কোনও প্রতিফলন ২০২৩-২৪ বাজেটেও ঘটেনি। এর আগে আমরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করি। এই কর্মসূচিতে সারা দেশের ক্ষুব্ধ প্রতিবন্ধী নাগরিকরা স্বতস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন এবং সমর্থন জানান।’

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন, আমাদের সমাবেশ শেষে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় অভিমুখী মিছিলে পুলিশ বাধা দেয় এবং প্রতিবন্ধী মানুষদের ওপর লাঠিচার্জ করে। পুলিশের নির্যাতনে আন্দোলনকারী তিন জন প্রতিবন্ধী মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হন, পুলিশ লাথি মেরে একাধিক হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী মানুষকে ফেলে দেন এবং একজনের হুইলচেয়ার ভেঙে দেন। আমাদের নায্য বিচারের এই আন্দোলনে পুলিশের নির্মম নির্যাতনের তীব্র নিন্দা ও নির্যাতনকারী পুলিশ সদস্যদের বিচার দাবি করছি।’

গণপরিবহন ব্যবহার সম্ভব না হওয়ায় গুরুতর মাত্রার প্রতিবন্ধী অনেককে কোথাও যাতায়াতেই বিপুল অর্থ খরচ করতে হয় উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘কেবল তাই নয়, গুরুতর, বহুমাত্রিক ও অটিস্টিক বুদ্ধি প্রতিবন্ধীসহ সকল ধরনের প্রতিবন্ধী মানুষ যাদের নিয়মিত ব্যয়বহুল স্বাস্থ্যসেবার দ্বারস্থ হতে হয়। তাদের অনেকেই স্বাস্থ্যভাতা এবং ব্যক্তিগত সহকারী ছাড়া চলতে পারেন না, তাদের ক্ষেত্রে চলতি বাজেট থেকেই কেয়ার গিভার ভাতা দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি আমরা।’

গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে শিশু ও নারী সংবেদনশীল বাজেট তৈরি হচ্ছে। অথচ, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিবান্ধব বাজেট তৈরির দাবি জানিয়ে আসছে। এভাবে বাজেট তৈরি না হওয়ায় প্রকৃত অর্থে প্রতিবন্ধী মানুষের কোনও উন্নতিই হচ্ছে না যোগ করেন সাবরিনা সুলতানা। তিনি বলেন, ‘তাই আমরা সম্ভব হলে এবার থেকেই মন্ত্রণালয়ভিত্তিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সংবেদনশীল বাজেটের জোর দাবি জানাচ্ছি।’

সংক্ষুব্ধ প্রতিবন্ধী নাগরিক সমাজের অন্যান্য দাবিগুলো হচ্ছে-

 প্রতিবন্ধী মানুষের সরকারি চাকরিতে নিয়োগে বিশেষ নীতিমালা (কোটা) প্রণয়ন করা; চলতি বাজেটেই বাংলাদেশ ব্যাংকে এক হাজার কোটি টাকার প্রতিবন্ধী ব্যক্তি উদ্যোক্তা তহবিল গঠন করা; অনতিবিলম্বে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি উন্নয়ন অধিদফতরকে কার্যকর করা; বাংলা ইশারা ভাষা ইন্সটিটিউট প্রণয়ন এবং দেশের ৬৪ জেলার সাধারণ বিদ্যালয়ে বাংলা ইশারা ভাষাযুক্ত সমন্বিত শিক্ষাকার্যক্রম চালু ও আদালতসহ সকল সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানে বিনামূলো বাংলা ইশারা ভাষার দোভাষী সেবা নিশ্চিত করা।

আগামী শুক্রবার বিকেল ৪ টায় শাহবাগে সংহতি সমাবেশ করার কথা জানানো হয় সংবাদ সম্মেলন থেকে। এসময় সেখানে সবাইকে উপস্থিত থাকার আহ্বান জানান সংগঠন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলেন, আমরা মানুষের মতো বাঁচতে চাই। আমাদের দাবি যদি আপনাদের যৌক্তিক না মনে হয় তাহলে আপনারা আসবেন না। 

এসময় সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বি-স্ক্যান এর সাধারণ সম্পাদক সালমা মাহবুব, প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর ইফতেখার মাহমুদ, উজ্জ্বলা বণিক প্রমুখ।