পলিথিন থেকে তৈরি হচ্ছে জ্বালানি তেল, প্লাস্টিক দিয়ে টাইলস, পচনশীল বর্জ্য দিয়ে জৈব সার। ফেলে দেওয়া বর্জ্য পুনর্ব্যবহারের এরকম নানা উপায় ও উদ্ভাবন দেখার সুযোগ করে দিয়েছে একটি আয়োজন। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের পাশে পরিবেশবান্ধব নানা রকম উদ্ভাবনের প্রদর্শনী নিয়ে আয়োজিত হচ্ছে পরিবেশ মেলা-২০২৩।
মেলা ঘুরে দেখা যায়, ফেলে দেওয়া পুরনো প্লাস্টিক ও পলিথিন জাতীয় বর্জ্যকে বিশেষ যন্ত্রের মাধ্যমে গলিয়ে জ্বালানি তেল উৎপাদন করার পদ্ধতি দেখানো হচ্ছে। আবাসিক ভবন ও কলকারখানায় ব্যবহারের পর নষ্ট হওয়া পানিকে নানাভাবে প্রক্রিয়াজাতকরণের মধ্য দিয়ে তা পুনরায় ব্যবহারযোগ্য করে তোলার উপায় বর্ণনা করা হচ্ছে। বাসাবাড়ির পচনশীল বর্জ্যকে জৈব সারে রূপান্তরের প্রক্রিয়া দেখিয়ে দেওয়া হচ্ছে। পরিবেশের জন্য উপকারী এমন সব ধারণা ও উদ্ভাবন নিয়ে হাজির হয়েছেন উদ্যোক্তারা। তারা বলছেন, চাইলেই যেকোনও দূষণ থেকে পরিবেশকে রক্ষা করা সম্ভব। এর জন্য প্রয়োজন পরিবেশকে নিয়ে ভাবা।
৫ জুন থেকে শুরু হওয়া এই মেলা চলবে ১১ জুন পর্যন্ত। সকাল ৮টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত এই মেলা সবার জন্য উন্মুক্ত।
মেলায় পলিথিন থেকে জ্বালানি তেল উৎপাদন করতে পারা পলিথিন পাইরোলাইসিস মেশিন প্রদর্শন করেন আরএএন করপোরেশনের সিইও আখতারুজ্জামান ভূঁইয়া। বৃহস্পতিবার (৮ জুন) বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘প্লাস্টিক ও পলিথিন মাটিতে মেশে না। ফলে এসব বর্জ্য অক্ষত থেকে পরিবেশের ভীষণ ক্ষতি করে। তাই আমি ভেবেছি এই প্লাস্টিকের পরিমাণ কীভাবে কমানো যায়। সেই ধারণা থেকে প্লাস্টিক বা পলিথিন বর্জ্য থেকে তেল উৎপাদন নিয়ে কাজ শুরু করি। আমার এই যন্ত্র বিশ্বের অন্যান্য দেশের যন্ত্র থেকে উন্নত। কেননা, এর থেকে কোনও বিষাক্ত গ্যাস বের হয় না। বরং গ্যাসটাকে এই মেশিনের এনার্জি হিসেবে আবার কাজে লাগানো যায়।’
বিভিন্ন ভবন ও কলকারখানায় প্রতিদিনই টনের পর টন পানির ব্যবহার করা হচ্ছে। ব্যবহার শেষে বর্জ্য হিসেবে এই পানি মিশে যাচ্ছে নানা জলাশয়ে। এতে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। এছাড়া প্রতিদিন প্রচুর পানি উত্তোলনের ফলে ভূগর্ভের পানির স্তরও নিচে নেমে যাচ্ছে। এতে প্রাণ-প্রকৃতিতে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। তাই ব্যবহৃত পানি একটি বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পুনর্ব্যবহারের ধারণা নিয়ে মেলায় এসেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থী মোহাইমিনুল ইসলাম মিশকাত, তাজরিন নাহার ও রোমানা ইয়াসিন নুরী।
মিশকাত বলেন, চাইলেই কলকারখানার বিষাক্ত পানি জলাশয়ে ফেলে পরিবেশ দূষণ না করে তা আবারও ব্যবহার করা সম্ভব। এতে একবার উত্তোলন করা পানি একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে। এর ফলে ভূগর্ভের পানির ওপর চাপ কম পড়বে। আমরা যেহেতু পরিবেশ বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী তাই আমরা এমন কিছু করার চেষ্টা করেছি, যাতে মানুষ ও পরিবেশ উভয়েরই উপকারে আসে।
প্রথমবারের মতো ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক থেকে তৈরি করা পার্কিং টাইলস নিয়ে এসেছেন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা নাজির হোসেন। তিনি বলেন, প্লাস্টিক বর্জ্য ফেলে রাখলে এটি কেবল একটি স্তূপে পরিণত হবে। কেননা এর ক্ষয় নেই। এতে পরিবেশেরও ক্ষতি হচ্ছে। তাই এই বর্জ্য কমিয়ে আনতে আমি ভার্জিন প্লাস্টিকের বদলে পুরোনো প্লাস্টিক ব্যবহার করে টাইলস তৈরি করেছি, যাতে ময়লার স্তূপ তৈরি না করে এগুলো কাজে আসে।
প্রতি পিস টাইলসের মূল্য ৪০ টাকা জানিয়ে তিনি বলেন, এটি লাগাতে কোনও সিমেন্টের প্রয়োজন নেই। একটার সঙ্গে আরেকটি জোড়া লাগিয়েই ব্যবহার করা যায়। তবে স্থায়ীভাবে লাগাতে চাইলে সিমেন্টও ব্যবহার করা যাবে। এই টাইলসের স্থায়িত্ব ৩০ থেকে ৪০ বছর।
এছাড়াও গৃহস্থালি পচনশীল বর্জ্য থেকে তৈরি শতভাগ জৈব সার প্রদর্শনের জন্য মেলায় এসেছেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির প্রতিনিধি নাজমুল হোসাইন। ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডের তত্ত্বাবধানে এই জৈব সার উৎপাদন ও বাজারজাত করা হয়।
এ বিষয়ে নাজমুল বলেন, আমরা বাসাবাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করে পচনশীল বর্জ্যগুলো আলাদা করি। সে বর্জ্যগুলো প্রায় মাস দুই কয়েকটি ধাপে শুকিয়ে জৈব সারে রূপান্তর করা হয়।
বর্জ্য এখন ফেলনা নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, বর্তমানে ৩৩ জন কর্মী রয়েছে এই কাজের জন্য। এখন যেখানে সেখানে ময়লা না ফেলে সেগুলো কাজে লাগালে যেমন পরিবেশের উপকার হয়, তেমনি অনেকের আয়ের পথও তৈরি হয়।
নানা ধরনের উদ্ভাবন প্রদর্শনীর পাশাপাশি মেলায় রয়েছে বাগানপ্রেমীদের জন্য কিছু সেবামূলক প্রতিষ্ঠান, যারা একটি আদর্শ বাগান ও পরিচর্যার জন্য সব ধরনের সহযোগিতা করে থাকে।
ছবি: প্রতিবেদক।