প্রবাসীদের ‘না জেনে আনা’ সোনার বার ফেরত দেবে কাস্টমস

গত ১ জুন জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনে যাত্রী ব্যাগেজ রুলসে পরিবর্তনের কথা জানান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। সেখানে বলা হয়—বিদেশ থেকে আসা যাত্রীরা আগের মতো দুটি সোনার বার আনতে পারবেন না। সর্বোচ্চ ১১৭ গ্রাম ওজনের সোনার বার আনা যাবে, যার জন্য শুল্ক দিতে হবে ৪০ হাজার টাকা। তবে কোনও পূর্ব ঘোষণা না দিয়ে নিয়ম পরিবর্তনে বিপাকে পড়েন ওই সময়ে বিদেশ থেকে আসা অনেক যাত্রী। সঙ্গে আনা দুটি সোনার বারের ১টি জব্দ করে কাস্টমস। কিছু দিন ধরে এ নিয়ে চলে ব্যাপক আলোচনা। এমন পরিস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ‘না জেনে আনা’ সোনার বার ফেরত দেওয়ার কথা জানিয়েছে কাস্টমস।

কাস্টমস সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রস্তাবিত বাজেটের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত বাজেট পাস হওয়ার পরই কার্যকর হয়। তবে কাস্টমস ও ভ্যাট সংক্রান্ত বিষয়গুলো বাজেট অধিবেশন থেকেই কার্যকর হওয়ার রেওয়াজ দীর্ঘদিনের। যাত্রী ব্যাগেজ রুলস জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের অধীনে প্রণয়ন হওয়ায় বাজেট অধিবেশন থেকেই কার্যকর হয়েছে।

ঢাকা কাস্টমস হাউজ জানিয়েছে, নতুন নিয়ম কার্যকর হওয়ার পর ১ থেকে ৪ জুন পর্যন্ত ৩০৫টি সোনার বার জব্দ করেছে কাস্টমস। প্রতিটি ১১৭ গ্রাম করে মোট ওজন ৩৫ কেজি। ১ জুন ১৪২ জনের ১৪২টি সোনার বার জব্দ করা হয়েছে। ২ জুন ১৪০ জনের ১৪৩টি সোনা বার জব্দ করা হয়েছে। ৩ জুন সেই সংখ্যা কমেছে, সেদিন ৯ জনের ১৬টি সোনার বার জব্দ করা হয়। ৪ জুন ২ জনের ৪টি সোনার বার জব্দ করা হয়েছে।

কাস্টমস কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রতি মাসে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ব্যবহার করে ৪ হাজার কেজি সোনার বার দেশে আসে। এসব সোনার বার কিনতে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হয়। সোনার বার না আনলে বৈদেশিক মুদ্রা আসতো, যা দেশের ডলার সংকট মোকাবিলায় কার্যকর ভূমিকা রাখতো। সোনার বার দেশে আনা কমাতেই পরিবর্তন করা হয়েছে ব্যাগেজ রুলস। গত ১ জুন বিকাল ৩টায় জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেন। সেখানে বলা হয়, যাত্রী (অপর্যটক) ব্যাগেজ (আমদানি) বিধিমালা, ২০১৬ অনুযায়ী একজন যাত্রী বিদেশ থেকে ২৩৪ গ্রাম ওজনের স্বর্ণবার ৪০ হাজার টাকা শুল্ক দিয়ে আনতে পারতেন। এ সুবিধা কমিয়ে ১১৭ গ্রাম ওজনের স্বর্ণবার আনার বিধান করা যায়। অতিরিক্ত যেকোনও পরিমাণ স্বর্ণবার বা রৌপ্যবার আনলে তা বাজেয়াপ্ত হবে। আর ১১৭ গ্রাম সোনার বারের জন্য শুল্ক করা হয়েছে ৪০ হাজার টাকা, যা আগে ছিল ২০ হাজার টাকা।

প্রবাসীরা বলছেন, ব্যাগেজ রুলসের পুরাতন নিয়ম মেনেই তারা দুটি সোনার বার নিয়ে ফ্লাইটে উঠেছেন। তারা ফ্লাইটে থাকা অবস্থায় প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যাগেজ রুলস বদলে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন। পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই এভাবে ব্যাগেজ রুলস পরিবর্তনের প্রথা বাতিলের দাবিও জানান প্রবাসীরা।

দিশেহারা প্রবাসীরা সোনার বার ফেরত পেতে প্রতিদিনই আসছেন কাস্টমস হাউজে। এমন পরিস্থিতিতে সমাধানের পথ খুঁজছে ঢাকা কাস্টম হাউজ।

ঢাকা কাস্টম হাউজের কমিশনার একেএম নুরুল হুদা আজাদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, যারা ১ জুনের পর সোনার বার এনেছেন, তাদের কাছে জানতে চাইবো কেন তারা আইন ভেঙে এনেছেন। যদি সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে সক্ষম হন, তারা ক্ষতিগ্রস্ত যেন না হন সে বিষয়টি কাস্টমস আইনের বিধান অনুযায়ী ছাড় দেওয়া হবে। যারা জেনেও সরকারের আইন ভঙ্গ করেছেন তাদের বিষয়ে আইনের কঠোর প্রয়োগ হবে। দুটি বিষয়ই সমন্বয় করার চেষ্টা থাকবে। প্রতিটি যাত্রীকে আলাদাভাবে বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কেউ যেন অহেতুক ভুক্তভোগী না হন, ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সে বিষয়টি আমরা বিবেচনা করবো।

আরও পড়ুন:

বাজেট পাসের আগেই নিয়ম বদল, শত শত প্রবাসীর স্বর্ণ জব্দ