সৌদি প্রবাসী আব্দুল মোমেন দুটি সোনার বার নিয়ে গত ৩১ মে সৌদি আরব থেকে ফ্লাইটে ওঠেন। দুবাইয়ে ট্রানজিট হয়ে ১ জুন রাতে দেশে আসেন। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামার পর কাস্টমস জোনে দুটি বারের শুল্ক দিতে গেলেন প্রবাসী আব্দুল মোমেন। কাস্টমস তার ১টি সোনার বার জব্দ করে, আরেকটির জন্য ৪০ হাজার টাকা শুল্ক রাখেন। এ ঘটনায় মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে আব্দুল মোমেনের। কাস্টমস থেকে তাকে বলা হয়, ১ জুন দুপুরে প্রস্তাবিত বাজেটে দুটি সোনার বার আনার নিয়ম বাতিল করা হয়েছে। এখন থেকে একজন যাত্রী ১১৭ গ্রামের বেশি সোনার বার আনতে পারবেন না।
সৌদি প্রবাসী আব্দুল মোমেন যখন ফ্লাইটে ওঠেন—সে সময়ও ব্যাগেজ রুলস অনুযায়ী, ৪০ হাজার টাকা শুল্ক দিয়ে ২৩৪ গ্রাম পর্যন্ত স্বর্ণের বার আনা যায়। পূর্ব ঘোষণা ছাড়া হুট করেই ব্যাগেজ রুলস বদলে যাওয়ায় আব্দুল মোমেনের মতো শত শত প্রবাসী আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
সৌদি প্রবাসী শেখ আয়াতের বোনের বিয়ে উপলক্ষে তিনি দুটি সোনার বার কিনেছেন। তারও ১টি সোনার বার জব্দ করেছে কাস্টমস। শেখ আয়াত ১ জুন সৌদি আরবের স্থানীয় সময় সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে ফ্লাইটে ওঠেন। কাস্টমস রুলস অনুযায়ী তখন পর্যন্ত দুটি সোনার বার আনার নিয়ম কার্যকর ছিল। শেখ আয়াত ঢাকায় আসেন ওইদিন বিকাল ৫টা ৫৫ মিনিটে। তিনি ফ্লাইটে থাকা অবস্থায় দেশে বদলে গেছে কাস্টমসের নিয়ম।
আগে থেকে ঘোষণা না দিয়ে এভাবে শেষ মুহূর্তে হঠাৎ করে কাস্টমসের নতুন নিয়ম কার্যকর করাকে অযৌক্তিক হিসেবে দেখছেন প্রবাসীরা। সৌদি প্রবাসী শেখ আয়াত বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমার বোনের বিয়ে জুলাই মাসে। স্বর্ণের বার থেকে গয়না বানাতে সময় লাগবে। এ জন্য আমি এক মাস আগে বার কিনে দেশে এসেছি। আমি যখন ফ্লাইটে উঠেছি, তখনও দুটি বার আনার নিয়ম ছিল। নিয়ম পরিবর্তনের ঘোষণা আগে থেকে দেওয়া হলে আমি তো দুটি বার আনতাম না। এভাবে ঘোষণা না দিয়ে জব্দ করায় আমি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। তিনি বলেন, ‘এত বড় সিদ্ধান্ত এভাবে হুট করে বদলে ফেলা কোনোভাবেই যৌক্তিক হতে পারে না। আমরা চাই সরকার আমাদের সোনার বারগুলো ফেরত দিয়ে দিক।’
প্রবাসীদের সোনার বার আনার সুযোগ কমানো হয়েছে এবারের বাজেটে। ১ জুন বিকাল ৩টায় জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল নতুন অর্থবছরের (২০২৩-২৪) জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেন।
বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী জানান, ‘যাত্রী (অপর্যটক) ব্যাগেজ (আমদানি) বিধিমালা ২০১৬’ অনুযায়ী একজন যাত্রী বিদেশ থেকে ২৩৪ গ্রাম ওজনের স্বর্ণবার ৪০ হাজার টাকা শুল্ক দিয়ে আনতে পারতেন। এ সুবিধা কমিয়ে ১১৭ গ্রাম ওজনের স্বর্ণবার আনার বিধান করা যায়। অতিরিক্ত যেকোনও পরিমাণ স্বর্ণবার বা রৌপ্যবার আনলে তা বাজেয়াপ্ত হবে। আর ১১৭ গ্রাম সোনার বারের জন্য শুল্ক করা হয়েছে ৪০ হাজার টাকা, যা আগে ছিলও ২০ হাজার টাকা।
কাস্টমস সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সাধারণত প্রস্তাবিত বাজেটের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত বাজেট পাস হওয়ার পর কার্যকর হয়। কিন্তু কাস্টমস ও ভ্যাট সংক্রান্ত বিষয়গুলো সংসদে বাজেট পেশ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কার্যকর হওয়ার রেওয়াজ দীর্ঘদিনের। ‘যাত্রী ব্যাগেজ রুলস’ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের অধীনে প্রণয়ন হওয়ায় বাজেট অধিবেশন থেকেই তা কার্যকর করা হয়েছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক সদস্য (কাস্টমস নীতি) মো. লুৎফর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেটে কাস্টমস এবং ভ্যাট সংক্রান্ত বিষয়গুলো অনতিবিলম্বে কার্যকর হবে। আর আয়কর সংক্রান্ত বিষয়গুলো কার্যকর হবে বাজেট পাসের পর। বাজেটেও এটি উল্লেখ থাকে—কোন কোন দফাগুলো অনতিবিলম্বে কার্যকর হবে। ১০০ বছর ধরে এভাবেই হয়ে আসছে।’
এদিকে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ সোনার বার জব্দ করায় দিশেহারা প্রবাসীরা। তারা প্রতিদিনই কাস্টমস হাউসে আসছেন। সোনার বার ফেরত পেতে যোগাযোগ করছেন ঢাকা কাস্টমস হাউসে। ১ থেকে ৩ জুন পর্যন্ত নতুন নিয়মে কতজন প্রবাসীর দুটি করে সোনার বারের একটি জব্দ করা হয়েছে, তার সঠিক পরিসংখ্যান জানায়নি ঢাকা কাস্টম হাউস। এ বিষয়ে জানতে ঢাকা কাস্টমস হাউসের উপকমিশনার (প্রিভেন্টিভ) সৈয়দ মুকাদ্দেস হোসাইনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তবে তিনি কাস্টমসের বিচার শাখায় যোগাযোগের পরামর্শ দেন।
এ বিষয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পূর্ব থেকে কোনও ঘোষণা না থাকায় আগের নিয়ম মেনে অনেক প্রবাসী দুটি করে সোনার বার সঙ্গে করে এনেছেন, যা জব্দ করেছে কাস্টমস। আগে থেকে কাস্টমস ঘোষণা দিলে প্রবাসীরা হয়তো দুটি সোনার বার আনতেন না। ১ থেকে ৩ জুন পর্যন্ত যাদের দুটি বারের ১টি জব্দ করা হয়েছে, তাদের বিষয়টি বিবেচনা করতে সংশ্লিষ্ট দফতরকে আমরা অনুরোধ জানিয়েছি।’