বৃষ্টিতে বেহাল পশুর হাট, লোকসানের শঙ্কা ব্যবসায়ীদের

ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে এবার রাজধানীর দুই সিটিতে বসেছে ১৭টি অস্থায়ী পশুর হাট। এর বাইরে গাবতলী ও সারুলিয়ায় দুটি স্থায়ী হাটেও প্রচুর গরু নিয়ে এসেছেন ব্যবসায়ীরা। হাটগুলো জমে উঠলেও গত দুই দিনের বৃষ্টিতে এখন বেহাল অবস্থা। কর্দমাক্ত  হাটে ক্রেতা-বিক্রেতারাও পড়েছেন বিপাকে। বৃষ্টির কারণে অনেক গরু অসুস্থ হয়ে পড়েছে। শুধু তাই নয়, এ অবস্থায় পশুর দামও কমে গেছে। ফলে  লোকসানের আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।

মঙ্গলবার (২৭ জুন) রাজধানীর রহমতগঞ্জ, সারুলিয়া, আফতাবনগরসহ অন্যান্য হাট ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

পশুর হাটে কাদা ও পানিতে সয়লাব পশুর হাটগুলোতে দেখা যায়, সোমবার (২৬ জুন) থেকে থেমে থেমে বৃষ্টির হওয়ায় কোরবানির পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। একই সঙ্গে হাটে আসা ক্রেতারাও পড়েছেন ভোগান্তিতে। কোনও কোনও হাট বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে। হাঁটু পানিতে রাখা হয়েছে গরু। ক্রেতাদের হাটে ঘুরতে হচ্ছে কাদা পেরিয়ে। সব মিলে বৃষ্টিতে নাকাল গরুর হাট। বৃষ্টির পানি থেকে রক্ষা পেতে অনেক ব্যবসায়ী বালুর বস্তা বিছিয়ে তার ওপরে গরু রেখেছেন। অনেকে আবার ত্রিপল, ভারী পলিথিন দিয়ে গরু রক্ষা করার চেষ্টা করছেন।

ব্যবসায়ীরা জানান, আবহাওয়া খারাপের কারণে ক্রেতাসমাগম কম। যারা হাটে আসছেন, তারা দাম জানতে চেয়ে চলে যাচ্ছেন, কিনছেন না। ব্যবসায়ীরা মনে করেন, আবহাওয়া ভালো হলে ফের জমে উঠবে পশুর বেচাকেনা।

বৃষ্টির কারণে পশুর দাম কমে যাওয়ার শঙ্কায় ব্যবসায়ীরামঙ্গলবার দুপুরে সারুলিয়া হাটে গিয়ে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ট্রাকে করে গরু, ছাগল, মহিষ নিয়ে এসেছেন ব্যবসায়ীরা। আর  যারা পশু কিনতে হাটে এসেছেন, তারাও বৃষ্টি আর কর্দমাক্ত পরিবেশ দেখে না কিনেই ফিরে যাচ্ছেন। তবে এই হাটের বাইরের অংশে দুই-একটি গরু ও ছাগল বিক্রি হতে দেখা গেছে।

রহমতগঞ্জ ফ্রেন্ড সোসাইটির হাটেও একই অবস্থা দেখা গেছে। ক্রেতা-ব্যবসায়ীদের চেষ্টার পরেও বৃষ্টি থেকে কেউই রক্ষা পাননি। বিক্রেতা, ক্রেতা ও দর্শনার্থী সবাই ভিজেছেন। বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়ায় এরইমধ্যে অনেক গরু অসুস্থ হয়ে পড়েছে। হাটে বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীকে গরুর জ্বরের ওষুধও সংগ্রহ করতে দেখা গেছে।

কোথাও কোথাও হাঁটু পানির সঙ্গে পশুর মল-মূত্র মিশে যাওয়ায় হাটে থাকা কষ্টকর হয়ে পড়েছে ক্রেতা-বিক্রেতাদের। একই সঙ্গে গত দুই দিনে বেড়েছে মশার উপদ্রবও। একদিকে বৃষ্টির বাগড়া, তার ওপরে মশার উপদ্রবে হাটে বিরাজ করছে নাকাল অবস্থা।

কোরবানির পশুর হাট

সারুলিয়া হাটে মেহেরপুর থেকে আসা ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সোমবার ১২টি গরু নিয়ে হাটে এসেছি। প্রতিটি গরুর দাম গড়ে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা। আসার পর পরই দুটি গরু বিক্রি হলেও এরপর বৃষ্টির কারণে ক্রেতারা আর দাম-দরও করেননি।’

রহমতগঞ্জ হাটে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ার খামারি বদিউল আলম বলেন, ‘আমার নিজের ঘরে পালিত তিনটি গরু নিয়ে এসেছি। বৃষ্টির কারণে একটি গরুর ঠান্ডা লেগে গেছে। আবহাওয়া এমন খারাপ থাকলে কম দামেই বিক্রি করে দেওয়া লাগতে পারে।’

বৃষ্টিতে পশু নিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন ব্যবসায়ীরাআফতাবনগর হাটে দেখা গেছে, হাটের সীমানা ছাপিয়ে গরু চলে গেছে অনেক দূর। সেখানে হাঁটার রাস্তায়ও পানি জমে গেছে। বৃষ্টির মধ্যেই ভিজছে গরুগুলো। এ অবস্থায় আশপাশে দোকানপাট না থাকায় বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। গরু রেখে বেশিদূর যাওয়াও তাদের জন্য ঝুঁকি। মঙ্গলবার দুপুরে অঝোর বৃষ্টিতে অনেক ব্যবসায়ীকে ভিজতে দেখা গেছে। কবির হোসেন নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘আগের রাতে (সোমবার) গরুর সঙ্গে আমরাও বৃষ্টিতে ভিজেছি। এখন বৃষ্টিতে ভেজা মানেই জ্বর আসতে পারে, ঠান্ডা লাগতে পারে। সে কারণে চিন্তাই আছি।’

আরেক ব্যবসায়ী আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘বৃষ্টির কারণে ভোগান্তি অনেক বেড়েছে। আগামী কয়দিন কী হয় আল্লাহ জানেন। যেভাবে বৃষ্টি হচ্ছে, তাতে ওপরের শেড কিংবা ত্রিপল কোনও কাজে আসছে না। গরুও ভিজছে, মানুষও ভিজছে। এভাবে চলতে থাকলে গরুর দাম যে পড়ে যাবে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই।’

ছবি: নাসিরুল ইসলাম