বৃষ্টি ও যানজটে ভোগান্তি সদরঘাটে

দিনভর বৃষ্টি উপেক্ষা করেই রাজধানীর প্রধান নদীবন্দর সদরঘাটে ভিড় করেছেন দক্ষিণাঞ্চলগামী নৌযাত্রীরা। বৃষ্টি ও যানজটে বেশ ভোগান্তি হলেও নাড়ির টানে বাড়ি ফিরতে সদরঘাটে যাত্রী উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। বিগত কয়েক দিনের তুলনায় কম যাত্রী থাকলেও লঞ্চগুলো কানায় কানায় ভরেই গন্তব্যে ছেড়েছে।

বুধবার (২৮ জুন) সদরঘাট টার্মিনাল এলাকা ও পন্টুন ঘুরে দেখা যায়, অনেকটা কাকভেজা হয়েই টার্মিনালে আসছে যাত্রীরা। পন্টুনে যাত্রীর অপেক্ষায় আছে লঞ্চ, যাত্রীর জন্য হাকডাক করছেন লঞ্চ শ্রমিকরা। লঞ্চ ভরা মাত্রই ছেড়ে যাচ্ছে বিভিন্ন রুটে-গন্তব্যে।

যাত্রীরা জানান, গুলিস্তান থেকে সদরঘাট রুটে যানজটে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার পর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে থেকে পায়ে হেঁটেই ঘাটে আসতে হয়েছে তাদের। বৃষ্টির মধ্যে পরিবার ও ব্যাগ-ব্যাগেজ নিয়ে হাঁটা কষ্ট আরও বাড়িয়েছে তাদের৷ বিশেষ করে বয়োবৃদ্ধ ও শিশুদের ভোগান্তি ছিল সবচেয়ে বেশি। তবে ঘাটে পর্যাপ্ত লঞ্চ থাকায়, এসেই লঞ্চ পেয়েছেন ডেকের যাত্রীরা। কেবিনও ফাঁকা ছিল অধিকাংশ লঞ্চের, তাই যারা অগ্রিম কেবিন বুকিং করেননি, কেবিন পেয়ে খুশি তারাও।

বৃষ্টির মধ্যে লঞ্চঘাটে এসেছেন যাত্রীরা

ভান্ডারিয়াগামী যাত্রী রুবেল হোসেন বলেন, ‘জগন্নাথের সামনে থেকে হাজার হাজার মানুষ হেঁটে আসছে, এরমধ্যে বৃষ্টি। বাচ্চা, ব্যাগ নিয়ে হেঁটে আসা কী ভোগান্তির, এটা দায়িত্বশীলরা বোঝার চেষ্টা করেন না। প্রতিবছর ঈদের সময় একই সমস্যা। তারা চাইলেই জগন্নাথ থেকে সদরঘাট রাস্তাটা বন্ধ করতে পারেন।’

পটুয়াখালীগামী যাত্রী দিপু রায়হান বলেন, 'গুলিস্তান থেকে সদরঘাট আসতে ১ ঘন্টার বেশি লেগেছে। এরপর হেঁটে আসা। বাচ্চা-পরিবার নিয়ে বৃষ্টির মধ্যে আসতে অনেক ভোগান্তি হয়েছে। তবে ঘাটে এসে কেবিন পেয়েছি। তাই ভালো লাগছে। পরিবারের সঙ্গে ঈদ করবো, এই আনন্দের কাছে ভোগান্তি তুচ্ছ।'

বিগত কয়েকদিনের তুলনায় যাত্রী সংখ্যা ছিলো আজ কম। শেষ কর্মদিবস ও ঈদের ছুটির প্রথম দিনই দক্ষিণাঞ্চলের অধিকাংশ যাত্রী চলে গেছে বলে দাবি লঞ্চ সংশ্লিষ্টদের। তবে বৃষ্টি না হলে যাত্রী সংখ্যা বেশি হতো বলে জানান তারা।

কীর্তণখোলা লঞ্চের স্টাফ রাইসুল বলেন, ‘যাত্রী যা আসছে অনেক। এমনিতেই সাধারণ সময়ে যাত্রী হয় না। ঈদের সময়টায় শুধু আমাদের ব্যবসা। লঞ্চ তো ভরা মাত্রই ছেড়ে দিচ্ছে। মানুষ যা যাওয়ার সবাই গতকাল ও পরশু চলে গেছে। আজ বৃষ্টি না হলে আরও মানুষ হতো।'

লঞ্চ মালিক সমিতির মহাসচিব শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘বৃষ্টির কারণে গত দুই-তিনদিনের তুলনায় যাত্রী কম আজ। তবুও আমাদের পর্যাপ্ত লঞ্চ প্রস্তুত আছে। যত যাত্রীই আসুক আমরা লঞ্চ দিতে পারবো।’

অনেক ভোগান্তির পর লঞ্চে উঠে সস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন তারা

এদিকে সাগরে সৃষ্টি হওয়া সুস্পষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে দেশের চার সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত এবং নদীবন্দরে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। তবে বিআইডব্লিউটিএ সদরঘাট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে সংকেত না বাড়ানো হলে পর্যন্ত লঞ্চ চলবে। আর লঞ্চ মাস্টারদের সতর্ক করা হয়েছে। পাশাপাশি লঞ্চগুলোতে পর্যাপ্ত বয়া, জ্যাকেট ও অন্যান্য নিরাপত্তা সরঞ্জাম রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বিআইডব্লিওটিএ-র যুগ্ম পরিচালক কবির হোসেন বলেন, ‘সংকেত না বাড়ানো পর্যন্ত লঞ্চ ছাড়বে। এখন লঞ্চ বন্ধ করার মতো পরিবেশ নয়। আশা করছি ঈদের দিনও কোনও সমস্যা হবে না। যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মাস্টার, ও লঞ্চমালিক সমিতিকে অবহিত করা হয়েছে সতর্কতার বিষয়ে।আমাদের মনিটরিং টিম ঘাটে অবস্থান করছে, কোনও লঞ্চ যেন অতিরিক্ত যাত্রী না নেয় সেদিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বৃষ্টি হওয়ায় যাত্রী গত দুই দিনের তুলনায় কম আজ। মঙ্গলবার ১৩৩টি লঞ্চ বিভিন্ন রুটে ছেড়ে গেছে। ধারণা করছি আজ লঞ্চ সংখ্যা ১০০-১১০ হবে।’