বাংলা সাহিত্যের উন্নয়ন, অগ্রগতি ও লেখকদের কল্যাণে ১৫ দফা দাবিসহ জাতীয় সাহিত্য অধিদফতর প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছে জাতীয় সাহিত্য অধিদফতর বাস্তবায়ন পরিষদ।
শুক্রবার (১৪ জুলাই) প্রেসক্লাবের সামনে জাতীয় সাহিত্য অধিদফতর বাস্তবায়ন পরিষদ আয়োজিত এক উন্মুক্ত সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানান সংগঠনের নেতারা।
সংগঠনের প্রধান সমন্বয়ক কাজী ছাব্বির বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে একটি পূর্ণাঙ্গ সাহিত্য মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা সরকারের জন্য ব্যয়বহুল মনে হলেও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সাহিত্যকে যুক্ত করে ‘সাহিত্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়’ নামকরণের মাধ্যমে তা পরিচালনা করা সম্ভব। ইতোমধ্যে এই বিষয়ে রাষ্ট্রপ্রতি, প্রধানমন্ত্রী, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী এবং মন্ত্রিপরিষদ সচিব বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে।
জাতীয় সাহিত্য অধিদফতর বাস্তবায়ন পরিষদের ১৫ দফা দাবিগুলো হলো—সাহিত্যসেবায় সম্পৃক্তদের রাষ্ট্রীয়ভাবে পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করা; সাহিত্যসেবায় সম্পৃক্ত সৃজনশীল ব্যক্তিদের তালিকা প্রণয়নের মাধ্যমে সাহিত্যচর্চার লক্ষ্যে পরিবেশবান্ধব একটি সাহিত্যপল্লি প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া সৃজনশীল সাহিত্যসেবীদের সম্মানী প্রদান ও সাহিত্যকর্ম সংরক্ষণের পদক্ষেপ গ্রহণ করা; শুদ্ধ উচ্চারণ এবং বাংলা বানান ও বর্ণমালা সহজীকরণে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহসহ সব ভাষাবিজ্ঞানীর সুপারিশমালা বাস্তবায়ন করা এবং রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় আবৃত্তি প্রশিক্ষণ কর্মশালা ও সাহিত্য গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা এবং মানসিক পরিশুদ্ধির জন্য প্রতিটি সরকারি-বেসরকারি অফিসগুলো ছোট পরিসরে পাঠাগারের ব্যবস্থা করা; দেশের প্রতিটি শহরে বহুতল ভবন, মার্কেট নির্মাণের নকশা অনুমোদনকালে বাধ্যতামূলকভাবে গণপাঠাগার বা গণগ্রন্থাগারের জন্য নির্দিষ্টসংখ্যক ঘরের ব্যবস্থা করা; উদীয়মান লেখকদের সাহিত্যচর্চার সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে নিয়মিত ‘লিট্ল ম্যাগাজিন’ প্রকাশের জন্য আর্থিক অনুদান প্রদানের মাধ্যমে উৎসাহিত করা।
প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে সাহিত্যকর্মে ঢাকায় আসা লেখকদের জন্য সাশ্রয়ীব্যয়ে, নিরাপদ রাতযাপনে কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকায় একটি সাহিত্য ভবন নির্মাণ করা; দলীয় প্রভাবমুক্ত হয়ে কবিতা, ছড়া, গল্প, উপন্যাসসহ যাবতীয় বিষয় ভিত্তিক প্রকাশিত বইগুলো যাচাই-বাছাই করে লেখকদের সরকারিভাবে বার্ষিক এককালীন অনুদানসহ সনদ প্রদান করার পরিকল্পনা; তালিকাভুক্ত লেখকদের সরকারি-বেসরকারি সব হাসপাতালে বিনামূল্যে উন্নত চিকিৎসা পরিষেবা নিশ্চিত করা এবং তাদের সন্তানদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় অবৈতনিক শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ প্রদান করা; সৃজনশীল বই প্রকাশে লেখকদের সহজ কিস্তিতে সুদবিহীন ঋণ প্রদান এবং জীবনাবসানের পর তালিকাভুক্ত লেখকদের পরিবারকে এককালীন আর্থিক অনুদান প্রদানের ব্যবস্থা করা; সৃজনশীল প্রকাশনার পাশাপাশি নিজস্ব বই প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে লেখকদের নামে একুশে গ্রন্থমেলায় স্টল বরাদ্দসহ, প্রতিটি জেলা, বার্ষিক বই মেলার আয়োজন করা; সাহিত্যসেবামূলক কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়ার স্বার্থে সাহিত্যবিষয়ক সভা, সমাবেশ, সেমিনারে অংশগ্রহণে জেলা-উপজেলায় যাতায়াতে তালিকাভুক্ত লেখকদের জন্য সরকারিভাবে পরিবহনব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
সাহিত্য সংগঠনগুলোর রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করার পাশাপাশি সাহিত্য সংগঠনের বার্ষিক অনুষ্ঠানগুলোয় সরকারিভাবে অনুদান প্রদান করা; মাসিক কবিতা, ছড়া, গল্প, প্রবন্ধ ও উপন্যাস প্রতিযোগিতার মাধ্যমে শ্রেষ্ঠ লেখক কবি, গীতিকার, সাহিত্যিক, নাট্যকার, ছড়াকার, গল্পকার প্রাবন্ধিক নির্বাচন করে সনদ প্রদানসহ আর্থিক অনুদানে পুরস্কৃত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা; বাংলাদেশের বিভিন্ন ভাষাভাষীদের নিজস্ব ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি লালনে দেশের আঞ্চলিক সাহিত্য এবং সংস্কৃতি বিকাশের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করা এবং উল্লিখিত দাবিদাওয়া পূরণের লক্ষ্যে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের নামের সঙ্গে সাহিত্যকে সংযোজন করে সাহিত্য ও সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় হিসেবে নামকরণের মাধ্যমে, সাহিত্য ও সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে পৃথক জাতীয় সাহিত্য অধিদফতর প্রতিষ্ঠা করা।
সংগঠনের সিনিয়র সমন্বয়ক রওশন আরা রুশোর সভাপতিত্বে ও মুখপাত্র নীলা মল্লিকের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসাইন মাহমুদুল হাসান নিজামী, নাসিমা বানু করিম, ইভা আলমাস, অধ্যাপক ড. সন্দীপক মল্লিক, বীর মুক্তিযোদ্ধ শুক্কুর চৌধুরী, শেখ ইকবাল হাসান স্বপন, ক্রীড়াবিদ রেহেনা পারভীন প্রমুখ।