ন্যূনতম মজুরি ২০ হাজার ঘোষণা, স্বার্থবিরোধী বিল প্রত্যাহারের দাবি

স্থায়ী মঞ্জুরি কমিশন গঠন করে অবিলম্বে ২০ হাজার টাকা জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র (টিইউসি)। এ ছাড়া শ্রমিক স্বার্থবিরোধী অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা বিল-২০২৩ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে তারা।

এ সময় শ্রমিক নেতারা জাতিসংঘের আইএলও কনভেনশন ৮৭ ও ৯৮ মোতাবেক অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার প্রদান, গণতান্ত্রিক শ্রম আইন প্রণয়ন, মুদ্রাস্ফীতি ও দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে সংগতি রেখে মহার্ঘ্য ভাতা প্রদান এবং রেশনের মাধ্যমে সর্বস্তরের শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে সস্তা ও ন্যায্যমূল্যে চাল, ডাল, তেল, চিনিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সরবরাহেরও দাবি জানান।

শুক্রবার (২১ জুলাই) বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র (টিইউসি) আয়োজিত শ্রমিক সমাবেশে এসব দাবি জানান তারা।

সমাবেশে সংগঠনের নেতারা বলেন, দেশের ৭ কোটি ৩৬ লাখ শ্রমজীবী মানুষই উৎপাদন ও অর্থনীতির মূল চলনশক্তি। কিন্তু এসব শ্রমজীবী মানুষ আজ এক চরম সংকটাপন্ন অবস্থায় দিনযাপন করছে। কারণ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর মূল্য আজ শ্রমজীবী মানুষের নাগালের বাহিরে চলে গেছে। অব্যাহতভাবে দ্রব্যমূল্য বেড়ে চললেও মজুরি বাড়ছে না শ্রমিকদের।

তারা বলেন, অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা বিলের মাধ্যমে সরকার শ্রমজীবী ও মেহনতি মানুষের ধর্মঘট অধিকার হরণ করার উদ্যোগ নিয়েছে। অথচ আমাদের দেশের সংবিধান, শ্রম আইন, আইএলও কনভেনশন এবং আন্তর্জাতিক বিধিবিধান সবখানেই শ্রমিকদের ধর্মঘটের অধিকারের স্বীকৃতি রয়েছে। মুক্তবাজার অর্থনীতি ও সরকারের ভ্রান্তনীতির কারণে বিরাষ্ট্রীয়করণের নামে পাটকলসহ আমাদের দেশের বড় বড় শিল্প-কারখানাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

নেতারা বলেন, দেশের অধিকাংশ শ্রমিকের চাকরির নিরাপত্তা ও নিশ্চয়তা নেই। সরকারি-বেসরকারি প্রায় সব ক্ষেত্রেই মজুরিবৈষম্য বিরাজমান। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে জাতীয় ন্যূনতম মজুরির বিধান চালু থাকলেও আমাদের দেশে নেই। অথচ বাজারদর, শ্রমিকের উৎপাদনশীলতা, শিল্পের সক্ষমতা ও মাথাপিছু আয় বিবেচনায় নিয়ে জাতীয় ভিত্তিক সব শ্রমিকের জন্য ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা জরুরি।

তারা আরও বলেন, শ্রম আইন অনুযায়ী প্রতি পাঁচ বছর পরপর সেক্টর ভিত্তিক শিল্পপ্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের মজুরি পুনর্নির্ধারণ এবং বৃদ্ধি করার কথা থাকলেও নিম্নতম মজুরি বোর্ডের আওতাধীন এমন অনেক প্রতিষ্ঠান আছে, যেগুলোর মজুরি গত ১৫ বছরেও পুনর্নির্ধারণ হয়নি বা বাড়েনি। বর্তমান সরকার মুখে নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি ও শ্রমিকবান্ধব সরকার বললেও সরকার শ্রমিকদের কথা বিবেচনা না করে মালিকদের স্বার্থকেই প্রাধান্য দিচ্ছে। দেশের বেশির ভাগ শ্রমজীবী মানুষ আজও শ্রম আইনের আওতার বাহিরে রয়ে গেছে।

সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে টিইউসির সভাপতি সহিদুল্লাহ চৌধুরী বলেন, শ্রমিকদের এই দাবিগুলো ফয়সালা করতে হাজায় হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন নেই। এটা নীতিগত পলিসির ব্যাপার। জাতীয় নূন্যতম মজুরি নির্ধারণ হলে সব শ্রমিকের অধিকার অর্জিত হয়। তাই আপনারা এটা করেন। আর নাইলে ভবিষ্যতে এর পরিণতি ভালো হবে না। আজকে হয়তো শক্তিশালী আন্দোলন হয়নি। তার মানে এই নয় যে শ্রমিকদের কখনও শক্তিশালী আন্দোলন বা বাধ্য করার মতো আন্দোলন হবে না, তা না। এমন আন্দোলন হবে যে তখন আপনারা ফয়সালা করার কূলকিনারা পাবেন না। তাই দ্রুত শ্রমিকদের যুক্তিযুক্ত দাবিগুলো ফয়সালা করে বাস্তবায়নের প্রধানমন্ত্রীর কাছে আহ্বান জানাই।

টিইউসির সভাপতি সহিদুল্লাহ চৌধুরীর সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন টিইউসির সাধারণ সম্পাদক ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খান, সহসভাপতি মাহবুব আলম, সহসভাপতি মো. আব্দুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল মালেক, দফতর সম্পাদক সাহিদা পারভীন শিখা প্রমুখ।