বাংলাদেশে প্রতিদিন মর্মান্তিকভাবে ৪০ শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। মৌসুমি বৃষ্টিতে এখন সারা দেশে পুকুর ও নদীগুলো ভরাট হয়ে উঠেছে। এ সময় শিশুদের সাঁতার শেখানোর জন্য মা-বাবাদের আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় ক্রিকেটার ও ইউনিসেফের জাতীয় শুভেচ্ছা দূত সাকিব আল হাসান।
মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) ইউনিসেফ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানায়।
সাকিব আল হাসান কীভাবে শিশুদের ডুবে যাওয়া থেকে নিরাপদ রাখা যায়, সে সম্পর্কে মা-বাবাদের পরামর্শ দিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, যা ২ কোটি ২০ লাখেরও বেশিবার দেখা হয়েছে।
ভিডিওতে সাকিব আল হাসান বলেন, জলাশয়ের কাছাকাছি গেলে শিশুরা যে ঝুঁকির সম্মুখীন হয়, সে সম্পর্কে মা-বাবা ও কমিউনিটির লোকজন যদি আরও সচেতন হয় এবং তাদের সাঁতার শেখায়, তাহলে প্রতিবছর অনেক অকালমৃত্যু এড়ানো যেতে পারে। এই বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে সবাইকে আমি আমার সঙ্গে যোগ দেওয়ার জন্য অনুরোধ করছি, যাতে আমরা বাংলাদেশের প্রতিটি শিশুর বেঁচে থাকার অধিকার নিশ্চিত করতে পারি।
বিজ্ঞপ্তিতে ইউনিসেফ জানায়, বাংলাদেশে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হলো পানিতে ডোবা। প্রতিবছর বাংলাদেশে ১৪ হাজার শিশুর মৃত্যু হয় পানিতে ডুবে। তাই ‘বিশ্ব পানিতে ডোবা প্রতিরোধ দিবস’ উপলক্ষে শিশুদের অকালমৃত্যু প্রতিরোধে সব মা-বাবা ও কমিউনিটিকে সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানান সাকিব আল হাসান।
ভিডিওতে সাকিব কিছু সহজ পদক্ষেপের কথা বলেছেন, যা মা-বাবারা তাদের সন্তানদের ডুবে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে পারেন। যেমন শিশুদের নজরে রাখা, বিশেষ করে যখন তারা পানির আশপাশে থাকে। উন্মুক্ত জলাশয়ের চারপাশে বেড়া দেওয়া এবং পানির যেকোনও বড় পাত্র ঢেকে রাখা। পাশাপাশি সন্তানের বয়স ছয় বছর হলেই তাকে সাঁতার শেখানোর জন্য মা-বাবাদের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট বলেন, এটি অত্যন্ত দুঃখজনক যে এত শিশু শুধু পানিতে ডুবে প্রাণ হারাচ্ছে, যা সহজেই প্রতিরোধ করা সম্ভব। বাবা-মা ও কমিউনিটির সদস্য হিসেবে আমাদের সবার দায়িত্ব এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার।
বাংলাদেশে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রতিনিধি ড. বারদান জাং রানা বলেন, এমন একটি বিশ্ব, যেখানে ডুবে যাওয়ার ঝুঁকি যে কাউকে গ্রাস করতে পারে, সেখানে আমাদের প্রত্যেকের জন্য পানি সংক্রান্ত দুর্ঘটনা থেকে সুরক্ষার দায়িত্ব নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আসুন আমরা হাত মেলাই, একে অপরকে ক্ষমতায়ন করি এবং এমন একটি বিশ্ব গড়ার চেষ্টা করি, যেখানে প্রতিটি জীবন এই প্রতিরোধযোগ্য দুর্ঘটনা থেকে সুরক্ষিত থাকবে।
ডব্লিউএইচওর ‘গ্লোবাল রিপোর্ট অন ড্রাউনিং: প্রিভেনটিং আ লিডিং কিলার’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, এই অঞ্চলে পানিতে ডুবে মৃত্যুর হার এখনও বৈশ্বিক গড়ের চেয়ে অনেক বেশি; পুরুষ ও নারী উভয় ক্ষেত্রে এবং বয়সভিত্তিক প্রতিটি গ্রুপের ক্ষেত্রেও। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলে পানিতে ডুবে যাওয়াকে ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুদের মৃত্যুর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কারণ, ৫ থেকে ৯ বছর বয়সী শিশুদের জন্য তৃতীয়, ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের জন্য ষষ্ঠ এবং পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য সপ্তম সর্বোচ্চ কারণ হিসেবে পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশে সচেতনতার অভাব ও দুর্বল সাঁতারের দক্ষতা শিশুদের পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়, বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় যেখানে খোলা জলাশয়ের সংখ্যা বেশি। পরিবার ও কমিউনিটিগুলোর জন্য সহজ নির্দেশিকা, শিশুরা কীভাবে নিজেদের সুরক্ষা করতে পারবে তা শেখানো, সাঁতার শেখানো এবং যেসব শিশুর এখনও স্কুলে যাওয়ার বয়স হয়নি তাদের জন্য শিশুযত্ন কেন্দ্রের সুবিধাগুলোর মতো স্বল্প খরচের সমাধান শিশুদের পানিতে ডুবে মৃত্যু রোধ করতে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।