দেশে রেকর্ড পরিমাণ খাদ্য মজুত আছে: পরিকল্পনামন্ত্রী

এই মুহূর্তে দেশে রেকর্ড পরিমাণ খাদ্য সঞ্চয় আছে। আশা করি কোনও ধরনের দুর্যোগ আমাদের কাবু করতে পারবে না। কিন্তু, যদি দীর্ঘকালীন কোনও সমস্যা হয়, বিশেষ করে রাজনৈতিক বা অভ্যন্তরীণ কোনও ধরনের সহিংসতা হলে খাদ্য ব্যবস্থা ভেঙে যেতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।

বুধবার (২৬ জুলাই) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে রাইট টু ফুড বাংলাদেশের উদ্যোগে আয়োজিত দুদিনব্যাপী ‘এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের খাদ্য অধিকার এবং কৃষি খাদ্য ব্যবস্থা সম্মেলন ২০২৩’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

মন্ত্রী বলেন, দেশের কোটি কোটি কৃষক, যারা অনেক পরিশ্রম করে চাল, ডাল, মাছ, মাংস, সবজি অর্থাৎ খাদ্য উৎপাদন করে। তাদের পরিশ্রম এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সুদূরপ্রসারী নীতিমালা প্রয়োগের ফলে আমরা আজ একটা অবস্থানে পৌঁছাতে পেরেছি।

সরকারের উদ্যোগের কারণে খাদ্যসহ সবকিছুর উৎপাদন বেড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এখন আমাদের নানা ধরনের উপকরণ বেড়েছে, সার বেড়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা চমৎকারভাবে আমাদের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের আওতায় গড়ে তুলেছি। আমরা আজ কীটনাশক সাবধানেই ব্যবহার করছি। কেমিক্যাল সারের পরিবর্তে জৈব সারের দিকে যাচ্ছি। সব কিছু মিলেই আমাদের খাদ্য ব্যবস্থাপনা ও সরবরাহে অনেক দূর এগিয়েছি। কয়েকশ’ বছরের মধ্যে খাদ্য ব্যবস্থাপনায় আজ আমরা ভালো অবস্থানে আছি। সরকার খাদ্য নিশ্চিতে কাজ করছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

এম এ মান্নান আরও বলেন, খাদ্য বণ্টনে ন্যায্যতা নিশ্চিতেও কাজ করছে সরকার। খাদ্য সংরক্ষণ ও বিতরণে আরও সাবধান হতে হবে। ভূমিহীন, বর্গাচাষি বা যারা শ্রম বিক্রি করে খাদ্যের জোগান দেয় তাদের হক বা ন্যায্য পাওয়ার কথা অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে। ভূমিহীন, গৃহহীন যারা আছেন তাদের ঘরবাড়ি দেওয়া হচ্ছে। সেই ঘরে বসেই তারা খাবারের সন্ধান করছে বা কাজে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। বর্তমান সরকার, আওয়ামী লীগ সরকার, জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার থাকাকালে আমাদের আত্মমর্যাদা ও পরিচয়কে অক্ষুণ্ণ রেখে সারা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছি।

অধিবেশনে খাদ্য অধিকার বাংলাদেশের সময়োচিত এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, স্বাধীনতার শুরু থেকেই কৃষিকে গুরুত্ব দিয়ে নানামুখী উদ্যোগের শুরু হয়েছিল। যার ধারা অব্যাহত থাকায় বাংলাদেশ আজ খাদ্য উৎপাদনের রোল মডেল। বাংলাদেশসহ এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোর খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে এ সম্মেলন পথ দেখাবে আশা করি।

জনসংখ্যা বৃদ্ধি, নগরায়ণ ও খাদ্যের স্বল্পতা সবার জন্য খাদ্য নিশ্চিতকরণে বড় চ্যালেঞ্জ মন্তব্য করে তিনি বলেন, এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত চলমান বৈশ্বিক সংকট। খাদ্য উৎপাদন বাড়লেও পুষ্টিকর খাদ্য নিশ্চিত করা এখন এ অঞ্চলের দেশগুলোর জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। এত কিছুর পরেও বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত খাদ্য উৎপাদনের দেশ হওয়ার লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে।

অধিবেশনের সভাপতি ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, খাদ্যের পর্যাপ্ততার পাশাপাশি সেই উৎপাদিত খাদ্যে সব মানুষের অভিগম্যতা খাদ্য নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। খাদ্য সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের কারণে মানুষের কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার বাংলাদেশসহ এ অঞ্চলের সমুদ্র পাড়ের প্রায় সব দেশ, যা খাদ্য অধিকার নিশ্চিতের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। এ সম্মেলন মতবিনিময়ের যে ক্ষেত্র তৈরি করেছে, তা কার্যকর হবে যদি সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রগুলোর খাদ্য সংক্রান্ত নীতিতে এখানকার সুপারিশগুলোর প্রতিফলন ঘটে।

রাইট টু ফুড বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান, নেপালের কৃষি ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব কুমার কর্ণ, কেয়ার বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর রমেশ সিংহ। এছাড়া, রাইট টু ফুড বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক ও ওয়েভ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মুহসীন আলী স্বাগত বক্তব্য রাখেন।