সমিতির ঋণের টাকা জোগাড় করতেই ২ জনকে হত্যা করে তারা

টাঙ্গাইলের সখিপুরে নৃশংসভাবে ব্যবসায়ী শাহজালালসহ জোড়া খুনের ঘটনায় মূল পরিকল্পনাকারী মোস্তফাসহ ২ জনকে রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও টাঙ্গাইলের সখিপুর এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।

বৃহস্পতিবার (৩ আগস্ট) রাতে র‌্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১৪ এর একটি আভিযানিক দল অভিযান পরিচালনা করে ব্যবসায়ী শাহজালাল ও মজনু মিয়া হত্যাকাণ্ডের মূলপরিকল্পনাকারী মো. মোস্তফা মিয়া (২০) ও তার সহযোগী আলামিনকে (২৭) গ্রেফতার করে। উদ্ধার করা হয় ভিকটিম শাহজালালের ব্যবহৃত ২টি মোবাইল ফোন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য দেয়।

শুক্রবার (৪ আগস্ট) রাজধানীর কাওরানবাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, গত ১৯ জুলাই রাতে টাঙ্গাইলের সখিপুরের জামালের চালা এলাকায় দুর্বৃত্তরা দেশীয় অস্ত্র দিয়ে ব্যবসায়ী শাহজালাল ও তার চাচা মজনু মিয়াকে নৃশংসহভাবে শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাথাড়ি আঘাত করে হত্যা করে। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহত শাহজালালের পিতা বাদী হয়ে টাঙ্গাইলের সখিপুর থানায় অজ্ঞতনামা আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। নিহত শাহজালাল টাঙ্গাইলের সখিপুরের হামিদপুর বাজারে দীর্ঘদিন ধরে মনিহারি ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ব্যবসা করে আসছিলেন।

গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, মোস্তফার পরিকল্পনা ও নেতৃত্বে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। মোস্তফা এবং আলামিন উভয়ে স্থানীয় একটি সমিতির সদস্য। গ্রেফতারকৃত মোস্তফা সমিতি থেকে উচ্চ সুদে বেশ কিছু টাকা ঋণ নেয়। ঋণের টাকা পরিশোধ ও পারিবারিক খরচ বহনের জন্য তার বেশ কিছু অর্থের প্রয়োজন ছিল বিধায় সে পেশার বাহিরে অন্যায়ভাবে অর্থ উপার্জনের পরিকল্পনা করে। শাহজালাল যে দিন বাড়িতে রাত্রিযাপন করতেন সেই দিন ব্যবসায়িক লেনদেনের টাকা ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের টাকা বাড়িতেই রাখতেন। এই বিষয়টি গ্রেফতারকৃত মোস্তফা ও আলামিন জানতো বলে জানা যায়।

মোস্তফা শাহজালালের বাড়ি ফেরার রাস্তায় নির্জন স্থানে তাকে আক্রমণ করে ব্যবসায়িক লেনদেনের টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য বেশ কিছু দিন ধরে ভেবে আসছিল। সে বিষয়টি কয়েক দিন আগে আলামিনকে জানায় এবং আলামিন তাতে সম্মতি দেয়।

র‌্যাব বলছে, পরিকল্পনা অনুযায়ী চলতি বছরের ১৯ জুলাই আনুমানিক রাত ১০টার দিকে মোস্তফা ও আলামিন টাঙ্গাইলের সখিপুরের বাঘের বাড়ি এলাকায় জামালের চালায় নির্জন জঙ্গলে ওৎ পেতে থাকে। শাহজালাল মোটরসাইকেলযোগে তার চাচা মজনু মিয়াকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছালে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী মোস্তফা শাহজালালের মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে। এ সময় মোস্তফা শাহজালালকে লোহার রড দিয়ে মাথায় আঘাত করে। শাহজালাল মাটিতে লুটিয়ে পড়লে মোস্তফা তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে উপর্যুপরি আঘাত করতে থাকে। মজনু মিয়া চিৎকার করে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে আলামিন লোহার রড দিয়ে তার মাথা ও শরীরে আঘাত করে। পরবর্তীতে মোস্তফা ও আলামিন মাটিতে লুটিয়ে থাকা শাহজালাল ও মজনু মিয়াকে লোহার রড দিয়ে পুনরায় এলোপাথাড়ি আঘাত করে তাদের মৃত্যু নিশ্চিত করে। গ্রেফতারকৃত আলামিন ভিকটিমদের সঙ্গে থাকা মোটরসাইকেলটি পাশের একটি জমিতে ফেলে দেয় এবং মোস্তফা শাহজালালের ২টি মোবাইল ফোন নিয়ে ১টি আলামিনকে দেয় এবং অপরটি স্থানীয় একটি ডোবায় ফেলে দেয়।

সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, পরবর্তীতে তারা টাঙ্গাইল, গাজীপুর এবং ঢাকায় আত্মগোপন করে। গ্রেফতারকৃত মোস্তফা পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি। গ্রেফতারকৃত আলামিন গত ৩ মাস আগে তার সঙ্গে রাজমিস্ত্রির কাজে যোগ দেয়। আলামিন মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে কাজের জন্য যায় এবং ২০২৩ সালের প্রথম দিকে দেশে ফেরত আসে।