সিংড়ার ওসিকে প্রত্যাহার ও পুনর্বহাল নিয়ে পুলিশে তোলপাড়

নাটোরের সিংড়া থানার ওসি মিজানুর রহমানকে প্রত্যাহার ও পুনর্বহাল নিয়ে পুলিশে তোলপাড় শুরু হয়েছে। গত ১৩ আগস্ট জেলা পুলিশ সুপারের এক আদেশে ওসিকে প্রত্যাহার করে জেলা পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়। একদিন পরই আবার তাকে পুনর্বহাল করা হয়। এ নিয়ে পুলিশে চলছে নানা আলোচনা ও সমালোচনা। পুলিশ কর্মকর্তাদের কেউ কেউ বলছেন, প্রতিমন্ত্রীর গণশুনানিতে উপস্থিত হয়ে ওসি মিজানুর রহমান যথাযথভাবে আইন মেনে কাজ করার কথাই বলেছেন। উচ্চ আদালত ও পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের নির্দেশনায় জমিজমা বা অর্থ সংক্রান্ত দেওয়ানি ঘটনায় পুলিশকে আদালতের অনুমতি ছাড়া হস্তক্ষেপ করতে নিষেধ করা হয়েছে। তবে পুলিশের আরেক কর্মকর্তা জানান, প্রতিমন্ত্রীর গণশুননিতে ওসি মিজানুর রহমান যথাযথ ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। এজন্য সাধারণ মানুষের কাছে পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে।

রবিবার (১৩ আগস্ট) নিজের নির্বাচনি এলাকা সিংড়া উপজেলা পরিষদ চত্বরে স্থানীয় লোকজনের মুখোমুখি হয়ে গণশুনানির আয়োজন করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। ওই গণশুনানির একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। যেখানে প্রতিমন্ত্রী একজন অভিযোগকারীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ওসি মিজানুর রহমানকে ব্যাখ্যা দেওয়ার আহ্বান জানান। ওসি মিজানুর রহমানের ব্যাখ্যা দেওয়ার পর প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ‘আমি আইনজীবী, আইন প্রণেতা। আমাকে আপনি হাইকোর্ট দেখাচ্ছেন, আইনের বই দেখাচ্ছেন। তাহলে পুলিশের দরকার কী?’ গণশুনানিতে পুলিশ সংক্রান্ত প্রতিটি বিষয়ে পুলিশের পদক্ষেপ শুনে প্রতিমন্ত্রী উষ্মা প্রকাশ করেন। পুরো বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।

পুলিশ সূত্র জানায়, রবিবার সকালের ওই বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর নাটোরের পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম রাতেই ওসি মিজানুর রহমানকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করেন। তার প্রত্যাহারের বিষয়টি পুলিশের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে প্রকাশ্যে ও সাধারণ মানুষের সামনে অপদস্থ করা হয়েছে। এতে সমগ্র পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গেও কথা বলেন। পরে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে সোমবার আরেক আদেশে ওসি মিজানুর রহমানের প্রত্যাহারের আগের আদেশ বাতিল করে তাকে পুনর্বহাল করা হয়।

নাটোরের পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান, বিষয়টি পুলিশের প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত। এর বেশি আর কোনও মন্তব্য করতে চাননি তিনি।

পুলিশ সদর দফতরের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আইনের বাইরে গিয়ে কিছুই করার নেই কোনও পুলিশ কর্মকর্তারা। পুলিশের সব কর্মকাণ্ড আইন দ্বারা পরিচালিত হয়। এখানে আবেগের মূল্য কম। পুলিশকে সবসময় ন্যায়ের পক্ষে থাকতে হয়। কোনও গোষ্ঠী বা প্রভাবশালীর হয়ে কাজ করার সুযোগ নেই। নাটোরের সিংড়া থানার ওসি আইনের বাইরে না যাওয়ার বিষয়টি বলেছেন। কার, আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে কোনও কিছু করলে তাকে আদালতে বা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জবাবদিহি করতে হবে। তিনি যথাযথভাবেই ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তারপরও সবার সামনে একজন প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তাকে অপদস্থ করাটা সমীচীন হয়নি।

পুলিশ সদর দফতরের ওই কর্মকর্তা বলেন, উচ্চ আদালতে দায়ের করা একটি রিট পিটিশনের আদেশ (নং ৩৩৪৩/২০১০), পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের ২০১৩ সালের এক আদেশে অর্থ আদায়, জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ, প্লট, ফ্ল্যাট তথা সিভিল বা দেওয়ানি মামলার ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করা পুলিশের এখতিয়ার-বর্হিভূত। পুলিশ আদালতের আদেশের বাইরে এসব কিছুই করতে পারবে না।