ছবিতে কাজী শাহেদ আহমেদের বর্ণাঢ্য জীবন

বাংলা সংবাদপত্রে মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা আন্দোলনের সংগ্রামী প্রতীক ‘জয়বাংলা’র প্রতিধ্বনি নিয়ে আসা এক অনিবার্য নাম দৈনিক আজকের কাগজ। নব্বই দশকের শুরুতে মুক্তিযুদ্ধকে সামনে রেখে আধুনিক সংবাদপত্র নির্মাণের এই গল্পগাঁথার পথপ্রদর্শক কাজী শাহেদ আহমেদ।

তৎকালীন প্রেসিডেন্ট শাহাবুদ্দিন আহমেদের সঙ্গে কাজী শাহেদ আহমেদ

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর যখন দেশ থেকে মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধা, বঙ্গবন্ধু–এই শব্দগুলো ম্রিয়মাণ, তখন তার হাত ধরেই আবার সংবাদমাধ্যমে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধচর্চা। 

নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত অমর্ত্য সেনের সঙ্গে

সোমবার (২৮ আগস্ট) দেশের অন্যতম এই মনীষী ইন্তেকাল করেছেন। তার মৃত্যুতে দেশ হারালো মুক্তচিন্তা, বুদ্ধি ও প্রগতিশীলতার অনন্য এক পরিব্রাজককে।

১৯৯৫ সালে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা ও অন্যান্য রাজনীতিক নেতাদের সঙ্গে

দৈনিক আজকের কাগজের আগে বিশ শতকের আশির দশকে ‘সাপ্তাহিক খবরের কাগজ’ ও মাসিক ‘আজকের সভ্যতা’ প্রকাশনা বের করে দেশের নিস্তরঙ্গ পত্রিকার জগতে ঝড় তুলেছিলেন তিনি। যার হাত ধরে বাংলাদেশের সংবাদপত্র প্রবেশ করে আধুনিক যুগে।

১৯৬৬ সালে কাজী শাহেদ আহমেদ যখন লেফটেন্যান্ট

এ প্রসঙ্গ নিজের রচিত ‘জীবনের শিলালিলিপি’ শীর্ষক গ্রন্থে কাজী শাহেদ আহমেদ উল্লেখ করেন, “আমার অনেক দিনের ইচ্ছা পত্রিকায় আবার ‘জাতির পিতা’, ‘বঙ্গবন্ধু’, আর ‘বাঙালি’-- এই শব্দগুলো নিয়মিত ছাপা হবে। নতুন প্রজন্ম জানবে, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে লেখা হবে। মানে ম্রিয়মাণ মুক্তিযোদ্ধাদের আবার জাগাতে হবে। বিপ্লব ঘটাতে হবে, ১৬ ডিসেম্বর আবার ফেরত আনতে হবে।”

ছোট দুই ভাইয়ের মাঝে

মুক্ত-বুদ্ধি ও প্রগতিশীলতা চর্চার পাশাপাশি কাজী শাহেদ আহমেদ নিজের ব্যবসায়িক চিন্তাধারায়ও ছিলেন নতুনত্বের পক্ষে। তার হাত ধরেই সমতলে শুরু হয় চা উৎপাদন। নিজেকে ছড়িয়ে দেন নানামাত্রিক ব্যবসায়। কেবল তাই নয়, ক্রীড়াঙ্গনকে চাঙ্গা করতেও কাজী শাহেদ আহমেদের অবদান সর্বজনবিদিত। আবাহনী ক্লাব পুনর্গঠনে তার ঐকান্তিক, আর্থিক সহযোগিতার কথা এখনও জ্বাজ্বল্যমান।

১৯৭৫ সালে কুমিল্লা সেনানিবাসে

১৯৪০ সালে যশোরে কাজী আনিসুর রহমানের ঘরে কাজী শাহেদ আহমেদের জন্ম। প্রকৌশল বিদ্যায় উচ্চ শিক্ষিত বিশিষ্ট এই নাগরিক কাজ করেছেন সেনাবাহিনীতেও।

১৯৭২ সালে মারির বাড়িয়া যুদ্ধবন্দি শিবিরে বন্ধুরাসহ

সাংবাদিকতা, ব্যবসা, ক্রীড়াঙ্গনে অবদান রাখার পাশাপাশি এড়িয়ে যায়নি শিক্ষাও। একজন অপরিসীম শিক্ষাব্রতী এই সাংবাদিক-প্রকাশকের হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ-ইউল্যাব নামে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষা কার্যক্রমে দেশে অন্যতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে ভূমিকা রাখছে ইউল্যাব।

তেতুলিয়ায় কাজী অ্যান্ড কাজী চা বাগানে স্ত্রী আমিনা আহমেদের সঙ্গে

সদ্য প্রয়াত কাজী শাহেদ আহমেদের বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। তিনি স্ত্রী ও তিন ছেলেসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তার স্ত্রী আমিনা আহমেদ বিশিষ্ট রবীন্দ্র সংগীতশিল্পী। বড় ছেলে কাজী নাবিল আহমেদ যশোর-৩ (সদর) আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সহ-সভাপতি। মেজো ছেলে কাজী আনিস আহমেদ অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউন ও ইংরেজি দৈনিক ঢাকা ট্রিবিউনের প্রকাশক। কাজী শাহেদ আহমেদের ছোট ছেলে ইনাম আহমেদ বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালক।