মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ঝুঁকিপূর্ণ সিঙ্গেল নিয়েও হাসতে পারেন। প্রয়োজনের সময় উইকেট আগলে রেখেও হাসেন তিনি। এমনকি একটা বাজে বলে ছক্কা হজম করেও ম্লান হাসি উপহার দিতে পারেন। রিয়াদের সঙ্গে আর যাই হোক, কান্না ব্যাপারটা যায় না। অথচ তিনিই কিনা কান্নায় ভেঙে পড়লেন!
সারা দেশ অবাক হয়ে দেখলো রিয়াদ কাঁদছেন। কোনও ক্রিকেটীয় হতাশা নয়, ব্যক্তিগত কোনও চাওয়া-পাওয়া নয়। একজন মানুষের দুঃখে, একটি পরিবারের কষ্টে কাঁদলেন রিয়াদ।
পুরো ঘটনাটা ঘটলো মোবাইল আর্থিক সেবা নগদের একটি উপহার বিতরণ করতে গিয়ে।
রবিবার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বোরহান যখন রাইড শেয়ার সার্ভিসে মোটরসাইকেল চালিয়ে একটু বিশ্রাম নিচ্ছিলেন, তখনই তাকে হতভম্ব করে দিয়ে বাসায় এলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, নগদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর এ মিশুকসহ আরও অনেকে।
বোরহান প্রথমে তার এই ভাগ্যকে বিশ্বাস করতে পারেননি। এরপর যখন বুঝলেন, আসলেই তিনি গাড়ি জিতেছেন, নিজেকে সামলাতে পারলেন না। ভেঙে পড়লেন কান্নায়। এই কান্নার পেছনে আছে বোরহানের প্রায় দেড় দশকের জীবন সংগ্রাম, নিয়তির কাছে বারবার হেরে যাওয়ার গল্প।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করেছেন মো. বোরহানউদ্দিন। ছোট্ট একটা চাকরি করতেন। ২০১৭ সালের দিকে একটি বহুতল ভবনের লিফট ছিঁড়ে মারাত্মক আহত হন বোরহান। এরপর দীর্ঘদিন চিকিৎসা নিলেও এখনও পুরোপুরি সুস্থ হননি। ২০২০ সালে করোনা মহামারির সময় সবেধন নীলমনি চাকরিটাও হারান। সেবছরই মারা যান বোরহানের বাবা। দাফনের টাকাও ছিল না তার কাছে।
বর্তমানে দিনভর মোটরসাইকেল চালিয়ে যা আয় হয়, তা দিয়েই কোনোভাবে চলে বোরহানের সংসার। তিন সন্তানসহ পাঁচ জনের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে। এমনও দিন যায়, বাচ্চাদের বাসার বাইরেও বের হতে দেন না, ভয় যদি তার কাছে আইসক্রিম খেতে বায়না করে। বোরহানের কাছে যে সেই টাকাও থাকে না। পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে সন্তানদের একটা ভালো স্কুলেও দিতে পারেন না তিনি।
বোরহান আর তার স্ত্রী একটু একটু করে এসব গল্প বলেন, আর কান্নায় ভিজে ওঠে রিয়াদের চোখ। চোখের পানি মোছেন তানভীর এ মিশুকও। কিন্তু দিনটা তো কান্নার নয়। তাই এই গল্পটা কান্নাতে শেষ হতে দেওয়া যাবে না।
রিয়াদ এই সময়ে কী চুপ করে থাকতে পারেন? তিনি এগিয়ে এলেন। একটা সিঙ্গেল নিয়ে ম্যাচ জেতানোর মতো করে বললেন, তিনি বোরহানের সন্তানদের শিক্ষার দায়িত্ব নিচ্ছেন।
বোরহানের পরিবারে তখন উৎসবের আনন্দ। একটু আগেও পথ হারানো পরিবারটা এবার আলোর সন্ধান পেলো। আর রিয়াদ ও নগদ এভাবে একটি ম্যাচ জিতিয়ে এলো।