রিয়াদের চোখে ভালোবাসার অশ্রু

মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ঝুঁকিপূর্ণ সিঙ্গেল নিয়েও হাসতে পারেন। প্রয়োজনের সময় উইকেট আগলে রেখেও হাসেন তিনি। এমনকি একটা বাজে বলে ছক্কা হজম করেও ম্লান হাসি উপহার দিতে পারেন। রিয়াদের সঙ্গে আর যাই হোক, কান্না ব্যাপারটা যায় না। অথচ তিনিই কিনা কান্নায় ভেঙে পড়লেন!

সারা দেশ অবাক হয়ে দেখলো রিয়াদ কাঁদছেন। কোনও ক্রিকেটীয় হতাশা নয়, ব্যক্তিগত কোনও চাওয়া-পাওয়া নয়। একজন মানুষের দুঃখে, একটি পরিবারের কষ্টে কাঁদলেন রিয়াদ।

পুরো ঘটনাটা ঘটলো মোবাইল আর্থিক সেবা নগদের একটি উপহার বিতরণ করতে গিয়ে।

নগদের গাড়ি জিতে রাইডার-চালক বোরহান আবেগে স্ত্রী-সন্তানকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলেননগদ সম্প্রতি শুরু করেছে সপ্তাহে সপ্তাহে গাড়ি জেতার একটি ক্যাম্পেইন। মোবাইল রিচার্জ করে সেই ক্যাম্পেইনে অংশ নিয়ে একটি গাড়ি জিতেছেন কেরানীগঞ্জের মো. বোরহানউদ্দিন। আর সেই গাড়ি বোরহান সাহেবের কাছে তুলে দিতে গিয়েছিলেন রিয়াদ। সেখানেই আবেগের দু’কূল ভেসে গেলো কান্নায়।

রবিবার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বোরহান যখন রাইড শেয়ার সার্ভিসে মোটরসাইকেল চালিয়ে একটু বিশ্রাম নিচ্ছিলেন, তখনই তাকে হতভম্ব করে দিয়ে বাসায় এলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, নগদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর এ মিশুকসহ আরও অনেকে।

বোরহান প্রথমে তার এই ভাগ্যকে বিশ্বাস করতে পারেননি। এরপর যখন বুঝলেন, আসলেই তিনি গাড়ি জিতেছেন, নিজেকে সামলাতে পারলেন না। ভেঙে পড়লেন কান্নায়। এই কান্নার পেছনে আছে বোরহানের প্রায় দেড় দশকের জীবন সংগ্রাম, নিয়তির কাছে বারবার হেরে যাওয়ার গল্প।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করেছেন মো. বোরহানউদ্দিন। ছোট্ট একটা চাকরি করতেন। ২০১৭ সালের দিকে একটি বহুতল ভবনের লিফট ছিঁড়ে মারাত্মক আহত হন বোরহান। এরপর দীর্ঘদিন চিকিৎসা নিলেও এখনও পুরোপুরি সুস্থ হননি। ২০২০ সালে করোনা মহামারির সময় সবেধন নীলমনি চাকরিটাও হারান। সেবছরই মারা যান বোরহানের বাবা। দাফনের টাকাও ছিল না তার কাছে।

নগদ থেকে পাওয়া উপহারের গাড়িতে স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে হাস্যোজ্জ্বল মো. বোরহানউদ্দিনআর্থিক কষ্টে অনাহারে দিন কাটাতে থাকেন বোরহান। সবশেষে কোনও উপায় না পেয়ে তার স্ত্রীর সোনার গয়না বিক্রি করে জোগাড় করেন পুরনো একটা মোটরসাইকেল। বনে যান পুরোদস্তুর রাইড শেয়ারিংয়ের চালক।

বর্তমানে দিনভর মোটরসাইকেল চালিয়ে যা আয় হয়, তা দিয়েই কোনোভাবে চলে বোরহানের সংসার। তিন সন্তানসহ পাঁচ জনের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে। এমনও দিন যায়, বাচ্চাদের বাসার বাইরেও বের হতে দেন না, ভয় যদি তার কাছে আইসক্রিম খেতে বায়না করে। বোরহানের কাছে যে সেই টাকাও থাকে না। পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে সন্তানদের একটা ভালো স্কুলেও দিতে পারেন না তিনি। 

বোরহান আর তার স্ত্রী একটু একটু করে এসব গল্প বলেন, আর কান্নায় ভিজে ওঠে রিয়াদের চোখ। চোখের পানি মোছেন তানভীর এ মিশুকও। কিন্তু দিনটা তো কান্নার নয়। তাই এই গল্পটা কান্নাতে শেষ হতে দেওয়া যাবে না।

বোরহান পেয়েছেন নগদের দেওয়া উপহারের এই গাড়িতানভীর এ মিশুক ভেজা চোখ সামলে কথা দেন, কেবল সেডান গাড়ি নয়, বোরহানের জন্য একটা চাকরিও জোগাড় করে দেবেন তিনি। আলো জ্বলে ওঠে যেন পরিবারটিতে। তারপরও দুশ্চিন্তা থেকে যায়। বোরহানের বাচ্চাদের একটা মানসম্পন্ন স্কুলে পড়ানোর স্বপ্ন পূরণ হবে না?

রিয়াদ এই সময়ে কী চুপ করে থাকতে পারেন? তিনি এগিয়ে এলেন। একটা সিঙ্গেল নিয়ে ম্যাচ জেতানোর মতো করে বললেন, তিনি বোরহানের সন্তানদের শিক্ষার দায়িত্ব নিচ্ছেন।

বোরহানের পরিবারে তখন উৎসবের আনন্দ। একটু আগেও পথ হারানো পরিবারটা এবার আলোর সন্ধান পেলো। আর রিয়াদ ও নগদ এভাবে একটি ম্যাচ জিতিয়ে এলো।