ভাতা বিতরণে নতুন এমএফএসে আগ্রহ মন্ত্রণালয়ের, অধিদফতরের ‘না’

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ভাতা বিতরণে বিদ্যমান মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) সঙ্গে নতুন করে ‘উপায়’-কে যুক্ত করা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। একাধিকবার নতুন এমএফএস নিয়ে আগ্রহ দেখিয়েছেন মন্ত্রণালয়। যদিও অপর্যাপ্ত এজেন্ট পয়েন্ট ও সেবার মান নিয়ে আপত্তি করেছেন সমাজসেবা অধিদফতরের মহাপরিচালক। তার যুক্তি, উপায়-এর ক্যাশআউট চার্জ অন্যান্য এমএফএস সেবার চেয়ে কিছু কম হলেও এজেন্ট পয়েন্ট সংখ্যা অপর্যাপ্ত। ফলে সুনির্দিষ্ট এই কাজটি তাদের জন্য নয়।  

জানা গেছে, বেশকিছুদিন ধরে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ভাতা বিতরণে মোবাইল আর্থিক সেবা উপায়-কে যুক্ত করার আগ্রহ দেখান সমাজসেবা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ ও সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম। তাদের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন সমাজসেবা অধিদফতরের মহাপরিচালক আবু সালেহ মোস্তফা কামাল। গত ১৫ জুন সচিব ও মন্ত্রী বরাবর একটি চিঠি দিয়ে তিনি বলেন, সারা দেশে উপায়-এর এজেন্ট পয়েন্ট অপর্যাপ্ত। পাশাপাশি তাদের ক্যাশআউট চার্জ কম হলেও ভাতাভোগীদের জন্য তা প্রযোজ্য হবে না।

অধিদফতরের মহাপরিচালকের আপত্তির পরও বিষয়টিতে গুরুত্ব দিচ্ছে না সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয় এগোচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত সংস্থা হিসেবে সমাজসেবা অধিদফতরের মাধ্যমে সরকার প্রতি বছর সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা সামাজিক নিরাপত্তা ভাতা বিতরণ করে। ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে বিকাশ ও নগদের মাধ্যমে এই ভাতা বিতরণ করছে অধিদফতর। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এই দুটি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। মূলত বিস্তৃত এজেন্ট নেটওয়ার্কের কারণে এই দুটি প্রতিষ্ঠানকে ভাতা বিতরণের জন্য বাছাই করেছে বাংলাদেশ সরকার।

বিষয়টি নিয়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, উপায়ের এজেন্ট নেটওয়ার্ক সন্তোষজনক নয়। তাদের যে কয়টি জেলার দায়িত্ব দেওয়া হোক না কেন, ওই অঞ্চলের ভাতাভোগীদের ভোগান্তিতে পড়তে হবে। পাশাপাশি এর ফলে সরকারের বিপুল পরিমাণ রাজস্ব অব্যবহৃত থাকা বা ভাতাভোগীদের বিড়ম্বনায় পড়ার ঝুঁকি তৈরি হবে।  

জানা গেছে, বিকাশের সারা দেশের সাড়ে ৩ লাখের বেশি এজেন্ট আছে। নগদের এজেন্ট সংখ্যাও প্রায় ৩ লাখের কাছাকাছি। সেখানে উপায়-এর সারা দেশে এজেন্ট সংখ্যা কয়েক হাজার। ফলে তাদের পক্ষে এই দায়িত্ব পালন করা সম্ভব না বলে মনে করছেন সমাজসেবা অধিদফতরের কর্মকর্তারা। তাছাড়া ভাতার সঙ্গে ক্যাশআউট চার্জ সরকার ও মোবাইল এমএফএস প্রতিষ্ঠান মিলে ভর্তুকি হিসেবে দিয়ে থাকে। ফলে ভাতাভোগীকে কোনও অপারেটরের জন্যই ক্যাশআউট চার্জ খরচ করতে হয় না এবং এ বিষয়টিও এক্ষেত্রে বিবেচ্য নয়।

‘উপায়’ কে অন্তর্ভূক্তির বিষয়ে মহাপরিচালকের আপত্তির পরে এখন সেটা কোন অবস্থানে আছে জানতে চাইলে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, উপায় অন্তর্ভুক্তি বিষয়ে কোনও উদ্যোগ আপাতত নেওয়া হচ্ছে না। এটা কোনও আলোচনাতেই নেই।

ভাতা প্রদান কর্মসূচিতে যুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়া কতদূর এগোলো— প্রশ্নে উপায়-এর পক্ষে ডেপুটি ডাইরেক্টর (করপোরেট অ্যাফেয়ার্স) শামসুজ্জোহা জানান, এটা নিয়ে এখনও কোনও আপডেট নেই।

উল্লেখ্য, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় প্রতি বছর প্রায় ৮৯ লাখ মানুষ সরকারের কাছ থেকে বিভিন্ন হারে ভাতা পেয়ে থাকে। ২০২১ সাল থেকে বয়স্ক, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা, অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধী এবং প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা নগদ ও বিকাশের মাধ্যমে ভাতা পেয়ে আসছিল। পরে আরো সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বাকি দুটি খাতও এতে যুক্ত করা হয়।