‘পোলট্রি ফিড ও বাচ্চার দাম না কমালে ডিম-মুরগির দাম কমবে না’

পোলট্রি ফিড ও মুরগির বাচ্চার দাম কমানো না গেলে কখনোই ডিম ও মুরগির দাম কমবে না বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ)।

মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে বিপিএ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বক্তারা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বিপিএ’র সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, ‘বাংলাদেশ আজ ডিম ও মুরগি উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। আমাদের প্রতিদিন সব ধরনের ডিমের চাহিদা চার কোটি পিস। উৎপাদন আছে পাঁচ কোটি পিস। তাই ডিম আমদানি নয়, আমাদের ডিম ও মুরগি রফতানির সময় হয়েছে।’

পোলট্রি শিল্পে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ৫০-৬০ লাখ উদ্যোক্তার কর্মসংস্থান হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কর্মসংস্থান রক্ষার তাগিদে ডিম আমদানি বন্ধ করতে হবে। লসের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে প্রান্তিক খামারিদের। দেশের বাজারে ডিমের দাম বেশি কেন, তা তদারকি করে পোলট্রি ফিড ও মুরগির বাচ্চার দাম কমালে ডিম ও মুরগির উৎপাদন খরচ কমে যাবে। এতে ডিম ও মুরগির দাম কমানো সম্ভব হবে।’

সংবাদ সম্মেলনে ভারতের সঙ্গে উৎপাদন খরচ তুলনা করে তিনি বলেন, ‘ভারতে ৫০ কেজির এক বস্তা ব্রয়লার ফিডের মূল্য বাংলাদেশি টাকায় দুই হাজার ৭০০ টাকা। এক বস্তা লেয়ার ফিডের মূল্য এক হাজার ৮৭৫ টাকা। একটি ব্রয়লার মুরগির বাচ্চার মূল্য ২৮ টাকা। একটি লেয়ার বাচ্চার মূল্য ২৫-৩০ টাকা। একটি ডিমের উৎপাদন খরচ পাঁচ-ছয় টাকা। তাদের বাজারে একটি ডিম বিক্রয় হয় সাত টাকা থেকে সারে সাত টাকায়। এক কেজি ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ ১১০-১২০ টাকা। বিক্রি হয় ১৫০-১৬০ টাকায়। তাদের উৎপাদন খরচ কম, তাই তারা কম দামে বিক্রয় করেও লাভ করতে পারেন।’

দেশের বাজারে এক বস্তা ব্রয়লার ফিডের দাম তিন হাজার ৫০০ টাকা, ৫০ কেজি এক বস্তা লেয়ার ফিডের মূল্য দুই হাজার ৯০০ টাকা। একটি ব্রয়লার বাচ্চার মূল্য ৫০-৬০ টাকা, লেয়ার বাচ্চার মূল্য ৭০-৭৫ টাকা। বাংলাদেশে একটি ডিমের উৎপাদন খরচ সারে ১০ টাকা থেকে ১১ টাকা। এক কেজি ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ ১৬৭ টাকা। বাচ্চার দাম বেড়ে গেলে উৎপাদন খরচ আরও বেড়ে যায়। ভারতের তুলনায় বাংলাদেশের ডিম ও মুরগির উৎপাদন খরচ ডাবল।’

সুমন হাওলাদার বলেন, ‘পোলট্রি ফিড ও মুরগির বাচ্চার দাম কমানো না গেলে কখনোই ডিম-মুরগির দাম কমবে না। আমদানি করে ডিম মুরগির দাম কমাতে চাইলে দেশিও শিল্প ধ্বংস হবে। তাই আমদানি বন্ধ করে দেশিয় উৎপাদনকে কীভাবে ধরে রাখা যায় সেই চেষ্টা করুন।’

এ সময় করপোরেট কোম্পানিগুলো দিকে অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, ‘করপোরেট গ্রুপগুলো ২০১০ সাল থেকে মুরগির বাচ্চায় সিন্ডিকেট করে ১৫ টাকা পর্যন্ত দাম বাড়িয়েছিল। এরপর প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে একটি কমিটি করে দিয়ে মুরগির বাচ্চার দাম ৩২ টাকা দাম বেঁধে দেওয়া হয়। কিন্তু করপোরেট অ্যাসোসিয়েশন হাইকোর্টে রিট করে সেই কমিটি বন্ধ করে দেয়। পরে তাদের খেয়াল-খুশি মতো পোলট্রি ফিড ও মুরগির বাচ্চার দাম বাড়িয়ে প্রান্তিক খামারিদের উৎপাদন খরচ বাড়িয়ে দিচ্ছে। এর প্রভাব বাজারে এসে পড়ছে।’

সুমন হাওলাদারের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে আরও ছিলেন সহ-সভাপতি বাপ্পি কুমার দে, সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খন্দকার, জাতীয় যুব পুরস্কার প্রাপ্ত খামারি মো. জাকির হোসেন প্রমুখ।