রাজধানীতে বাড়ছে ‘আন্ডারওয়ার্ল্ডের দ্বন্দ্ব’?

গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাজধানী তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলে সন্ত্রাসীদের দুই গ্রুপের গোলাগুলির মাঝখানে পড়ে যান এক পথচারী। মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন তিনি। অবশেষে সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) মারা যান গুলিবিদ্ধ আইনজীবী ভুবন চন্দ্র শীল। পুলিশ বলছে, কথিত শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন ও তারিক সাঈদ ওরফে মামুনের দ্বন্দ্বের কারণে এই গোলাগুলি হয়। তবে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

আইনজীবী ভুবন শীলের স্ত্রী রত্না মজুমদার হতাশা ও ক্ষোভ জানিয়ে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, রাস্তা দিয়ে আসার সময় গোলাগুলির ঘটনায় আমার স্বামী গুলিবিদ্ধ হয়ে এক সপ্তাহ হাসপাতালে ছিল। কেউ তো কোনও সহায়তা কিংবা সহানুভূতি জানাতে আসেনি। এই ঘটনার বিচারের বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই। আমরা এর বিচার পাবো কিনা এটা নিয়ে সন্ধিহান। অনেক ঘটনারই তো বিচার হচ্ছে না। আমি তো ক্ষুদ্র একজন সাধারণ মানুষ। আমার আর কিছু বলার নেই।

অভিযোগ রয়েছে, এর আগে ’আন্ডারওয়ার্ল্ড’-এর সঙ্গে দ্বন্দ্ব এবং আভ্যন্তরীণ রাজনীতির দ্বন্দ্বে ২০২২ সালের ২৪ মার্চ নিহত হন মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপু। হত্যাকারীরা মালিবাগ রেলগেটে যখন তাকে উদ্দেশ করে গুলি চালাচ্ছিল ঠিক তখনই হত্যাকারীদের ছোড়া গুলি এসে রিকশাযাত্রী শিক্ষার্থী সামিয়া আফরান প্রীতির গায়ে লাগে। পরবর্তীতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তার মৃত্যু হয়।

প্রীতির বাবা জামাল উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, কয়েকদিন আগে কয়েকদিন আগে জানতে পেরেছি আমার মেয়ের হত্যাকাণ্ডের ঘটনার সঙ্গে জড়িত ৩৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। মেয়ে হারিয়ে তার স্মৃতি নিয়েই বাকিটা জীবন কাটাতে হবে। এই যন্ত্রণা কখনও বলে বোঝানো যাবে না কাউকে। এমন একটা দিন নেই যে ভুলে থাকতে পারি। আমার সন্তানের মতো এ ধরনের হত্যার শিকার যেন কেউ না হয় সেটাই আশা করি।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, মাস তিনেক আগে জামিনে বের হয় চিত্রনায়ক সোহেল হত্যা মামলার অন্যতম আসামি মামুন। জামিনে বের হয়ে সাক্ষী দিতে যাওয়ার সময় আদালত চত্বরে মামুনকে হুমকি দেয় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন। নিজেদের মধ্যকার আধিপত্য বিস্তার এবং বিভিন্ন বিষয়ের দ্বন্দ্বের জেরে ১৮ সেপ্টেম্বর রাতে গোলাগুলির ঘটনা ঘটিয়েছে তারা।

ধানমন্ডি তেজগাঁও এলাকায় আগে যেসব শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আনাগোনা ছিল তারা আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে উল্লেখ করে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা আরও বলেন, সম্প্রতি জামিনে বেশ কয়েকজন শীর্ষ সন্ত্রাসী বাইরে বের হয়েছে। তারা বাইরে বের হয়ে কোথায় কাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে এসব বিষয় নজরদারিতে রাখা হয়েছে। সামনে নির্বাচন। নির্বাচনকে ঘিরে এ ধরনের শীর্ষ সন্ত্রাসীদের কেউ যেন কোনও ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে কাজে লাগাতে না পারে সেসব বিষয়েও বিশেষ নজর রাখা হয়েছে। এছাড়া আন্ডারওয়ার্ল্ডের কর্মকাণ্ড সম্পর্কেও বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। আন্ডারওয়ার্ল্ডের সঙ্গে যাদের সম্পৃক্ততা রয়েছে তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশিদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সব বিষয়ে নজরে রেখে বিষয়গুলো তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। শীর্ষ সন্ত্রাসীদের এ ধরনের ঘটনার পেছনে কী বিষয় রয়েছে তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। গোলাগুলির সঙ্গে কারা সম্পৃক্ত ছিল তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে কাজ করছে কর্মকর্তারা।

আরও পড়ুন:

তেজগাঁওয়ে ‘গোলাগুলি’: পথচারীসহ আহত ৩