পর্যটনে নারীর অংশগ্রহণ জরুরি, সেমিনারে বক্তারা

অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতির জন্য সব ধরনের শিল্পে নারীর সমান অংশগ্রহণ অত্যাবশ্যক। জেন্ডার সমতা অর্জন ও নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী পর্যটন যে ভূমিকা রাখছে, বাংলাদেশেও তার ছোঁয়া লেগেছে। একে আরও প্রসারিত করাই এখন মূখ্য দায়িত্ব। ‘পর্যটন শিল্পে নারীর অংশগ্রহণ: সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ’ বিষয়ক এক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।

শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ‘পর্যটন দিবস’ উদযাপন উপলক্ষে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সন্তোষ কুমার দেব। তিনি বলেন, পর্যটনের অমিত সম্ভাবনা ও নারীর অংশগ্রহণ সারা বিশ্বে প্রায় ৩০০ মিলিয়ন মানুষ পর্যটন পেশার সঙ্গে সম্পৃক্ত; যার মধ্যে ইউরোপের পর্যটন খাতে ৫৮ শতাংশই নারী কর্মজীবী। অন্যদিকে, শতকরা ৬০ শতাংশ পর্যটন আবাসনে (হোটেল, মোটেল, গেস্ট হাউজ, রিসোর্ট ও ইত্যাদি) কাজ করছেন।

তিনি আরও জানান, ইতালিতে প্রতি তিন জন পর্যটন ব্যবসায়ীর মধ্যে একজন নারী। পানামা ও নিকারাগুয়ার ৭০ শতাংশ পর্যটন ব্যবসায়ী নারী। বুলগেরিয়ার পর্যটন খাতের ব্যবস্থাপক ও প্রশাসকদের ৭১ শতাংশই নারী যেটা তাদের অন্যান্য সেক্টরে মাত্র ২৯ শতাংশ। পরিসংখ্যান মতে, পর্যটন খাতে নারীর অংশগ্রহণে মধ্যপ্রাচ্য, তুরস্ক আর ভারতের আরও এগিয়ে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।

পর্যটন শিল্পে নারীর অংশগ্রহণে চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরেন অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশের সভাপতি আফসিয়া জান্নাত সালেহ। তিনি বলেন, সামাজিক ও পারিবারিকভাবে কম সাপোর্ট পায় নারীরা। নারীরা পর্যটন খাতে চাকরি করলেও উদ্যোক্তা হিসেবে খুবই কম। নারীদের উদ্যোক্তা হিসেবে এগিয়ে আসতে হবে। আমার প্রতিষ্ঠানে আমি নারীদের অগ্রধিকার দেই। অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোতেও নারীদের অগ্রধিকার দিতে হবে।

ডান ও ব্রেডস্ট্রিট এর সিইও জারা জাবিন মাহবুব বলেন, ‘আমরা আমাদের নিজের মার্কেটিং করি না, প্রচার করি না। আমরা পরিবার থেকে আতিথেয়তা শিখি। কিন্তু কর্মজীবনে গেলে আমরা সেটা ভুলে যাই।’

নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে শেয়ারট্রিপ-এর কো-ফাউন্ডার ও সিইও সাদিয়া হক বলেন, ‘একটি ওয়ান স্টপ সার্ভিস মানুষ চায়। আমি যখন নারী হিসেবে এই ট্রেডে আসলাম, তখন প্রথম চ্যালেঞ্জ হলো আমার একসেপ্টেন্স। নারী হিসেবে আমি কিছুই জানি না, এমনটা ভাবেন অনেকেই। নারীকে সম্মান করতে হবে, তার কাজের মূল্যায়ন করতে হবে। নারীদের বেতন, মাতৃত্বকালীন ছুটিসহ নানা বিষয়ে প্রতিবন্ধকতার মধ্যে পড়েন।’

এভিয়েশন অ্যান্ড ট্যুরিজম জার্নালিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশের সাবেক সভাপতি নাদিরা কিরণ বলেন, ‘এখন নারীদের জায়গা দেওয়ার মানসিকতা তৈরি হয়নি। নারীদের সম্পৃক্ততা বাড়লে পর্যটনের গতি বাড়বে, তাদের সুযোগ দিতে হবে। নারীদেরও চ্যালেঞ্জ নিতে হবে, নিজেকে এগিয়ে যেতে হবে।’

সেমিনারে অংশ নিয়ে অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশের (আটাব) মহাসচিব আব্দুস সালাম আরেফ বলেন, ‘নারীকে ভাবতে হবে— তিনি কোথায় যেতে চান। নারীকে নিজের লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে। কেউ সুযোগ করে দেবে— এই আশায় না থেকে, নিজের যোগ্যতার পরিচয় দিতে হবে।’

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে সাবেক সিনিয়র সচিব নাছিমা বেগম বলেন, ‘অধিকার দাও, অধিকার দাও’— বললে কেউ অধিকার দেবে না। অধিকার আদায় করে নিতে হবে। আমাদের পর্যটন শিল্পে নারীরা আসবে। আমাদের মানসিকতা বদলতা হবে।

ট্যুরিজম বোর্ডকে আরও শক্তিশালী করার পরামর্শ দেন নাছিমা বেগম।