নারীবিদ্বেষী সব ধরনের প্রচার-প্রচারণা বন্ধ করার লক্ষ্যে রাষ্ট্রকে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করাসহ সাত দফা দাবি জানিয়েছে ‘সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি’।
বৃহস্পতিবার (৮ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি আয়োজিত ‘নারীর সমতাবিরোধী, মর্যাদা হানিকর বক্তব্য ও আচরণের প্রতিবাদে’ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ও সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ফাওজিয়া মোসলেম বলেন, ‘গত ৩ মে নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন এবং তাদের প্রস্তাবনা বাতিলের দাবিতে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজু ভাস্কর্যের সামনে নারীর প্রতি চরম অসম্মানজনক, বর্বরোচিত ও ন্যাক্কারজনক আচরণ প্রদর্শন করা হয়েছে— যা সমগ্র নারী সমাজসহ দেশবাসীকে স্তম্ভিত ও ক্ষুব্ধ করেছে। এই ধরনের বর্বরোচিত আচরণ ও বক্তব্য কোনও সভ্য দেশ ও সমাজের পরিচয় বহন করে না। দেশব্যাপী ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার প্রেক্ষিতে দেরিতে হলেও হেফাজতে ইসলামের পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘নারী-পুরুষের সমতা বিরোধীগোষ্ঠী রাজনৈতিক সভা সমাবেশ ছাড়াও বিভিন্ন সভা সমাবেশে, গণপরিসরে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্রমাগত নারীবিদ্বেষী, অসম্মানজনক, অমর্যাদাকর প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি মনে করে, এ ধরনের বক্তব্য ও আচরণ রাষ্ট্র কর্তৃক গৃহীত নারী-পুরুষের সমতার নীতি এবং এদেশে বসবাসকারী সকল ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ, গোত্র, জাতিগত পরিচয় নির্বিশেষে সব নাগরিকের মধ্যে বৈষম্যহীনতার নীতির সঙ্গে স্পষ্টতই সাংঘর্ষিক।’
তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে প্রচলিত নারীবিদ্বেষ, নারীর প্রতি বিদ্বেষমূলক আচরণ ও ভাষা নারীর স্বাধীন চলাফেরাকে চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করাতে চাচ্ছে। যেখানে সেখানে নারীর পোশাক, সাজসজ্জা ও চলাফেরা নিয়ে জনসমক্ষে নারীকে অপমান করা হচ্ছে। গণপরিসরে নারীকে নানাভাবে শারীরিক ও মৌখিকভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্নভাবে নারীর প্রতি ঘৃণা ছড়ানো হচ্ছে, হুমকি দেওয়া হচ্ছে। উদ্বেগের বিষয় হলো— এসব অপকর্ম কোনও ধরনের বাধা ছাড়াই তারা ধারাবাহিকভাবে করে যাচ্ছে, যা তাদের আরও বেপরোয়া করে তুলছে। নারীর অগ্রযাত্রাকে বাধা দেওয়ার সুদূরপ্রসারী লক্ষ্যে ভীতিকর ও অনিরাপদ পরিবেশ তৈরির জন্য কখনও কখনও তারা মব সহিংসতারও আশ্রয় নিচ্ছে। এ বিদ্বেষ কেবল নারীর প্রতি বিদ্বেষ নয়, সমতার বিরুদ্ধে বিদ্বেষ, মানবাধিকারের প্রতি বিদ্বেষ। ফলে সমাজে ঘৃণা এবং হিংসার সংস্কৃতি বৃদ্ধি পাচ্ছে— যা সমাজের মধ্যে বিভক্তি তৈরি করছে। এটা সুস্থ দেশ ও সমাজ গঠনের জন্য প্রতিবন্ধকতা স্বরূপ।’ এ সময় সংগঠনের পক্ষ থেকে ৭ দফা দাবি তুলে ধরা হয়। দাবিগুলো হলো—
নারীবিদ্বেষী সব ধরনের প্রচার-প্রচারণা বন্ধ করার লক্ষ্যে রাষ্ট্রকে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে, মব সহিংসতার সঙ্গে জড়িতদের তাৎক্ষণিকভাবে চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে এবং মব সহিংসতার অবসান ঘটনোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, নারীর প্রতি সব ধরনের সহিংসতার দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে, গণমাধ্যমকে সঠিক তথ্য উপস্থাপনের লক্ষ্যে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে, সব ক্ষেত্রে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যকারীতা বৃদ্ধিসহ সারা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নে অতি সত্ত্বর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে হবে এবং বিজ্ঞানভিত্তিক, অসাম্প্রদায়িক, জেন্ডার সংবেদনশীল, অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারমুক্ত, মানবাধিকারের মূল্যবোধসম্পন্ন শিক্ষানীতি এবং তার আলোকে পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।