ঢাকা কলেজের সাংবাদিককে আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে

সংবাদ প্রকাশের জেরে ঢাকা কলেজ সাংবাদিক সমিতির দফতর সম্পাদক ও বাংলা ট্রিবিউনের ঢাকা কলেজ প্রতিনিধি ওবাইদুর সাঈদের ওপর অমানবিক নির্যাতন চালিয়েছে ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। আবাসিক হলে থাকা ওবাইদুরকে আটক করে রাতভর দফায় দফায় নির্যাতন চালানো হয়। খবর পেয়ে ১৮ ঘণ্টা পর পরিবারের সদস্যরা এসে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়।

নির্যাতনের শিকার ওবাইদুর সাঈদের রুমমেট প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, গত বৃহস্পতিবার রাত ১২টার পর ফরহাদ হোসেন হলের ছাত্রলীগ নেতা রাউফুর রহমান সোহেল তার অনুসারীদের নিয়ে এসেই ওবাইদুরের বুকে লাথি, এলোপাতাড়ি মুখে-কানে চড়-থাপ্পড় মারে। এরপর তার গলায় পারা দিয়ে তার ফোনের লক খুলতে বাধ্য করে ডিসিয়ান সংবাদকর্মী ও সাংবাদিক সমিতির গ্রুপের সব কথোপকথন স্ক্রিন ভিডিও করে নেয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভুক্তভোগী ওবাইদুরের এক বন্ধু ও রুমমেট বলেন, আমরা সবাই সোহেলের হাত থেকে ওবাইদুরকে বাঁচাতে চেষ্টা করেছি। কিন্তু সোহেলের হিংস্র আচরণের কাছে আমরা অসহায়। বাধা দিতে গেলে সে আমাদেরও মারতে আসে। পরদিন শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ওবায়দুর বারবার জুমার নামাজ পড়তে যেতে চেয়েছে, তবু তাকে নামাজ পড়তে দেওয়া হয়নি। রুমে তালা দিয়ে আটকে রাখা হয়। প্রায় ১৫ ঘণ্টার বেশি সময় নির্যাতনের পর তাকে এক কাপড়ে বের করে নেওয়া হয় অধ্যক্ষের রুমে।

তিনি আরও জানান, বৃহস্পতিবার রাতে ওবাইদুরের মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেন ছাত্রলীগ নেতা সোহেল। এ নিয়ে ঢাকা কলেজ প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

বিষয়টি জানতে ঢাকা কলেজের শহীদ ফরহাদ ছাত্রাবাসের হল সুপার নাসির উদ্দিন বলেন, পুরো ঘটনাটি প্রিন্সিপাল স্যার দেখছেন। আমি কিছু বলতে পারবো না।

ঢাকা কলেজের শিক্ষক সমিতির সম্পাদক কুদ্দুস শিকদার বলেন, ওবাইদুরের বিষয়টি শুনেছি। এ নিয়ে আমরা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা হবে। আর ওবায়েদের ফোন তদন্ত শেষে ফিরিয়ে দেওয়া হবে। 

ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ আবু ইউসুফ বলেন, আজ কলেজে ছাত্রলীগের বড় কর্মিসভা চলছে। আমি একটু ব্যস্ত আছি। এটা নিয়ে কমিটি গঠন হয়েছে। পরে কথা বলবো।

অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগ নেতা রাউফুর সোহেল বলেন, আমি কর্মিসভায় ব্যস্ত। এখন কথা বলতে পারবো না।

এ বিষয়ে ঢাকা কলেজ সাংবাদিক সমিতির ( ঢাকসাস) সাধারণ সম্পাদক আবদুল হাকিম বলেন, বর্তমানে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের কার্যক্রম বরাবরের মতোই প্রশ্নবিদ্ধ। ঢাকা কলেজে যে সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে তা এর ব্যতিক্রম নয়। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। ঢাকা কলেজ প্রশাসনে আমাদের আশ্বস্ত করেছে সাংবাদিক ওবাইদুর সাঈদ ও ফয়সাল আহমেদের ওপর যারা অমানবিক নির্যাতন করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। ইতোমধ্যে একটা তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী বুধবার এই তদন্ত প্রতিবেদনের ফলাফল জানানো হবে।

ঢাকা কলেজের এই দুই সাংবাদিককে মারধরের ঘটনায় থানায় কোনও অভিযোগ বা মামলা করা হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কলেজ প্রশাসনের অনুরোধ ও আশ্বাসে আমরা এটা করিনি। তবে কলেজ প্রশাসন যদি সেই আস্থা না রাখতে পারে, যদি দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে আমরা অবশ্যই পরবর্তী পদক্ষেপ নেবো। 

নির্যাতনের শিকার হওয়া দুই সাংবাদিকের বিষয়ে ঢাকসাসের সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, তাদের শারীরিক ও মানসিক ভাবে চরম নির্যাতন করা হয়েছে। ফয়সালকে ঢাকা মেডিক্যাল হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। ওবাইদুরকে মানসিকভাবে অনেক টর্চার করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ২৮ সেপ্টেম্বর রাউফুর সোহেলের অনুসারী আল আমিন, সজিব আহমেদ, সাগর ও ইকরাম ঢাকা কলেজের আরেক সাংবাদিককে (ফয়সাল আহমেদ) বেধড়ক মারধর করেন। এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশের জের ধরেই সোহেল ওবাইদুরের ওপর অমানবিক নির্যাতন চালিয়েছে।